স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, গাজীপুর অফিস; নামী দামী স্কুলে পড়াশুনোর ইচ্ছে স্পর্শ করতে পারেনি। স্কুলের পোষাক, টিফিন ও সাধারণ শিশুদের একটু সমৃদ্ধ খাবার নয় দু’মোঠো ভাতেরই অভাব। খাতা পত্রর বই চেয়ার টেবিল কিছুই জোটেনি। বাবা মা দিতে পারেন নি একটু পড়ার জায়গাও। ফ্লোরে বসে পড়লে বাবুদের যাতায়াতে দৃষ্টিকুটু দেখা যায়। তাই আবাসিক বাসার নিরাপত্তকর্মী বাবার ডিউটি টেবিলে বহুতল ভবনের সিঁড়ির পাশে বসেই চলছে পড়াশুনা। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ দেয়া বাবাই ছেলেকে পড়াচ্ছেন। পাশের একটি স্কুলে শুধু ভর্তি দিয়ে রাখা। কারণ স্কুলের খরচ চালানো এই পরিবারের পক্ষে সম্ভব নয়।
বড় ভবনের সিকিউরিটি বাল্বের আবছা আবছা আলোয় মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করা এই শিশু একদিন বড় হবে। পরিবার সমাজ ও দেশকে অনেক কিছু দিবে, এমনকি দেশকে স্বাধীন পর্যন্ত করতে পারে এমন ইচ্ছে থাকা তার স্বাভাবিক। কিন্তু বড় হয়ে যখন সে জানবে দেশকে স্বাধীন করতে হবে না, দেশ স্বাধীনই ছিল, এখনো আছে, তখন আর তাকে হয়ত দেশ স্বাধীনের কাজটি করতে হবে না। তবে একটি কাজ সে করতেই পারে। তা হল স্বাধীন দেশে একজন শিশু লেখাপড়া করার সাধ্যমত সূযোগ পাওয়ার স্বাধীনতা আদায়ের সংগ্রাম। কিন্তু আমাদের দেশ স্বাধীন থাকায় এই শিশুর সংগ্রাম হয়ে যাবে স্বাধীনতাকে স্বাধীন করার সংগ্রাম।
সংগ্রামী এই শিশুটির নামও স্বাধীন। বয়স ৭/৮ বছর। পিতা শাহ আলম। স্থায়ী বাড়ি জামালপুর। বর্তমানে স্ত্রী পুত্র নিয়ে গাজীপুর শহরের রওশন সড়ক এলাকায় জনৈক মোঃ মনিরউজ্জামান সরকারের বাসায় নিরাপত্তা কর্মীর চাকুরী করেন পিতা শাহ আলম। মা স্থানীয় পোষাক কারখানার শ্রমিক। শাহ আলম বলেন, তিনিও পোষাক কারখানায় চাকুরী করতেন। কিন্তু বাবা মা দুই জনই চাকুরী করতে বাইরে থাকায় ছেলে পড়াশুনা করে না। তাই ছেলেকে লেখা পড়া করিয়ে মানুষের মত মানুষ করার জন্য তিনি(বাবা শাহ আলম) চাকুরী ছেড়ে দিয়ে আবাসিক বাসার নিরাপত্তা কর্মীর চাকুরী নিয়েছেন।
শাহ আলম জানালেন, তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন। পরে টাকার জন্য লেখা পড়া করতে পারেননি। তাই তিনি নিজের অপূরণীয় ইচ্ছে পূরণ করতে ছেলেকে লেখা পড়া শিখাচ্ছেন। শাহ আলমের আশা, তার ছেলে একদিন উচ্চ শিক্ষিত হবে। ভাল চাকুরী করবে। বাবার স্বপ্ন পূরণ করবে। নিজের পরিবার সমাজ ও দেশের জন্যও অনেক কিছু করবে। বাবাদের অপূরণীয় স্বপ্ন যেন না থাকে আর এই স্বপ্নগুলো যেন সন্তানদের দিয়ে পূরণ করাতে না হয় এই আশা শাহ আলমের।
স্বাধীন জানায়, সে বড় হয়ে মা বাবাকে কাজ করতে দিবে না। স্বাধীন চাকুরী করবে আর তার মা বাবা বসে বসে খাবেন। নিজের পরিবারকে বিত্তশালী করার অধম্য ইচ্ছাই স্বাধীনের আপতত জীবনের লক্ষ্য।
তবে বাবা শাহ আলমের আশা, ছেলে বড় হয়ে নিজের পরিবার সমাজ ও দেশের জন্য কাজ করবে। একটি স্বাধীন দেশে একজন শিশু যেন দারিদ্রতার থাবায় ঝরে না পড়ে এই কাজটুকুও তাকে করতে হবে।
আমাদের মন্ত্রী এমপিরা যদি নিজের বাসার নীচে নিজের সন্তানকে এমন পরিবেশে লেখা পড়া শিখার দৃশ্যটা দেখতেন তবে হয়ত একটু হলেও পরিবর্তন আসতে পারতো। কিন্তু আমরা দেখছি, সব সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এতিম শিশুদের বঙ্গভবন, গণভবন, সুগন্ধা, সুধাসদন ও প্রেসিডেন্ট বাড়িতে ডেকে নিয়ে ইফতার করেন। আর মিডিয়ায় ফলাও ভাবে তা প্রচার হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না।
পরিশেষে বলা যায়, আমাদের সরকারগুলো পথ শিশুদের জন্য সব করছে বলে চিৎকার চেঁচামেচি করতে করতে দেশ বিদেশে মানুষের কানে তুলো দেয়ার অবস্থা করছে। সরকারের শিশুদের উন্নয়ন নিয়ে ফিরিস্তি শুনলে মনে হয় দেশের সকল শিশুই ইন্টারন্যাশনাল চাইল্ড হুমে থাকে। কিন্তু বাস্তব হল ছোট শিশু স্বাধীনদের অধিকার আদায়ে স্বাধীনতাকে স্বাধীন করার সংগ্রাম চলছে আর চলেবই–