সংসদ ভবন থেকে: ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানিতে সরকারের প্রতিনিধি থাকায় সংসদে কঠোর সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ সমালোচনা করেন।
প্রস্তাবিত বাজেটে তামাকে স্তর ভিত্তিক কর প্রস্তাব করার সমালোচনা করে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, গত বছর তামাকের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করে ২০৭ জন সংসদ সদস্য অর্থমন্ত্রীকে পিটিশন দিয়েছিলেন। অর্থমন্ত্রী এনবিআর’র একটি সম্মেলনে বলেছিলেন তামাকে স্তর ভিত্তিক কর তুলে দেওয়া হবে। কিন্তু দেখা গেল সেটা না করে তিনি (অর্থমন্ত্রী) স্তর ভিত্তিক কর প্রস্তাব করলেন। এতে কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ রয়ে যায়।
তিনি বলেন, তামাকজনিত কারণে প্রতিবছর ১ লাখ লোক মারা যাচ্ছে। আমাদের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতে হলে অবশ্যই বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে।
অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করে সাবের হোসেন বলেন, তামাকে দুই ধরনের ট্রিটমেন্ট দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় ম্যানুফ্যাকচারদের ক্ষেত্রে অধিক হারে কর আর বিদেশি কোম্পানির ক্ষেত্রে ন্যূনতম কর। এই বিভাজন কোন?
তিনি বলেন, যেখানে মানুষের আয় শতকরা ১২ শতাংশ বাড়ছে। মূল্যস্ফীতি প্রায় ৭ শতাংশ সেখানে যদি এক শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি করি তাহলে তামাকের দাম কিন্তু বাড়ালাম না, তামাকের দাম আরও কমিয়ে দিলাম।
তিনি বলেন, এই স্তরের সুযোগ নিয়ে কিছু কিছু কোম্পানি রাজস্ব ফাঁকি দেয়। এর আগে এনবিআর ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানিকে ডিমান্ড নোট দিয়েছিল, তারা ৭০০ কোট টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। পরে সেই কোম্পানি কোর্টে গিয়েছিল। কোর্ট তাদের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ায় কথা উল্লেখ করে ওই ৭০০ কোটি টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলেছিল। পরে তারা উচু স্তর থেকে নিচু স্তরে চলে আসে।
সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, কিভাবে এসব বড় বড় কোম্পানিকে ধরবেন? ব্রিটিশ-অ্যামেরিকান টোব্যাকোতে বাংলাদেশ সরকারের ১৩ শতাংশ শেয়ার আছে। যেখানে বোর্ড অব ডিরেক্টরে ৫ জন সচিব পর্যায়ের পরিচালক আছেন। তারা আবার অডিট করেন, নিরীক্ষা করেন, তাহলে কি দাঁড়ালো একটি কোম্পানি যেখানে সরকারি পর্যায়ের শেয়ার আছে, সচিব পর্যায়ের প্রতিনিধিরা আছেন তারা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। এটা লজ্জাজনক। সরকারের মালিকানা টোব্যাকো কোম্পানিতে থাক উচিত নয়। আমাদের যেসব পরিচালক আছেন তাদের সেখান থেকে সরে যাওয়া উচিত। অন্যথায় এই কর ফাঁকির সাথে আমাদের জড়িয়ে ফেলা হবে।
বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় আইপিইউ এবং সিপিএ সম্মেলন প্রসঙ্গে ইন্টারপার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী সংসদকে জানান, এ বছরে বাংলাদেশে দু‘টি বড় সম্মেলন হতে যাচ্ছে- আইপিইউ এবং সিপিএ সম্মেলন। এর মধ্যে দিয়ে আমরা সারা বিশ্বকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। এতে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ সম্মানিত হবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে আইপিইউ সদস্য সংখ্যা ১৭০টি জাতীয় সংসদ। সেখানে রয়েছে ৪৫ হাজার এমপি। সেই ৪৫ হাজার এমপি সারা বিশ্বব্যাপী ৬৫০ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন। এরা থাকবেন। এটা আমাদের জন্য বেশি সম্মানের।