এবিটির দুর্ধর্ষ ৩০ জঙ্গির খোঁজে গোয়েন্দারা

Slider জাতীয়

 

 

untitled-6_220383

 

 

 

 

 

নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দুর্ধর্ষ ৩০ জঙ্গিকে খুঁজছে গোয়েন্দারা। তারা এবিটির একাধিক স্লিপার সেলের সদস্য হিসেবে বিভিন্ন অপারেশনে অংশ নিয়েছে। গোয়েন্দারা ওই ৩০ জঙ্গির বিষয়ে তথ্য পেলেও এখন পর্যন্ত তাদের আইনের আওতায় নেওয়া যায়নি। তবে বেশ কয়েকবার তাদের কয়েক সদস্য ডিবি পুলিশের হাতে পাকড়াও হয়েছিল বলে একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
দায়িত্বশীল একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, গত বছরের ৩০ মার্চ রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যার সময় হাতেনাতে স্লিপার সেলের দু’জন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এর এক বছর পর গত ১৫ জুন

প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল হত্যাচেষ্টা মামলায় সুমন পাটোয়ারী ওরফে শিহাবকে গ্রেফতার করা হয়। এর বাইরে গত এক বছরে সরাসরি অপারেশনে অংশ নেওয়া এবিটির কোনো জঙ্গিকে গ্রেফতার করা যায়নি। তবে তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে গত শনিবার সংগঠনের সামরিক শাখার নেতা ও স্লিপার সেলের প্রশিক্ষক মুকুল রানা ওরফে শরিফুল নামে একজন পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। গোয়েন্দারা বলছেন, এসব স্লিপার সেল তৈরির ‘মাস্টারমাইন্ড’ সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াউল হক।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপকমিশনার মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, বিভিন্ন হত্যা মিশনে সরাসরি অংশ নিয়েছে এবিটিতে এমন জঙ্গির সংখ্যা ৩০-৩৫ জন। তাদের মধ্যে সম্প্রতি সিহাবকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। বন্দুকযুদ্ধে নিহত শরিফুলও অপারেশনাল ইউনিটের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন। শিহাবের জবানবন্দিতে উঠে আসা সামরিক শাখার নেতা ইশতিয়াকের পরেই শরিফুলের অবস্থান ছিল।

ডিবি জানায়, এবিটির ৭-৮টি স্লিপার সেল রয়েছে। প্রতিটি স্লিপার সেলে সদস্য সংখ্যা ৪-৫ জন। অনেক সদস্য একাধিক স্লিপার সেলের সদস্য হিসেবে একাধিক অপারেশনেও অংশ নিয়েছেন। এবিটির কার্যক্রম ঢাকা ও চট্টগ্রামেই বেশি। এক মাস আগে এবিটির স্লিপার সেলের প্রশিক্ষকসহ ছয় জঙ্গিকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে মুকুল রানা ওরফে শরিফুল বন্দুকযুদ্ধে মারা যান। তিনি সংগঠনে সাকিব ওরফে শরিফ ওরফে সালেহ ওরফে আরিফ নামে পরিচিত ছিলেন। এই মুকুল রানা অপারেশনে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি স্লিপার সেলের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিতেন। অপর চারজনের মধ্যে সেলিম ওরফে ইকবাল ওরফে মামুন এবিটির শীর্ষ সংগঠক ও প্রশিক্ষক। সংগঠনে মুকুল ওরফে শরিফুলের পরেই তার অবস্থান। অপারেশনাল ইউনিটের অপর সদস্য সিফাত ওরফে সামির ওরফে ইমরান, আবদুস সামাদ ওরফে সুজন ওরফে রাজু ওরফে সালমান ওরফে সাদ ও সাজ্জাদ ওরফে সজীব ওরফে সিয়াম ওরফে শামসের বিষয়েও অনেক তথ্য পাওয়া গেছে।

ডিবির একজন কর্মকর্তা জানান, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বাড্ডার সাতারকুলে একটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে শাহীন ওরফে জামাল ওরফে কামাল ও শাহ আলম ওরফে সালাউদ্দিন নামে এবিটির দুই জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়। তারা ঢাকায় ব্লগার-প্রকাশক হত্যার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়। তাদের কাছ থেকে সামরিক শাখা ও স্লিপার সেলের বিষয়ে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। সর্বশেষ শিহাবের স্বীকারোক্তিতে বেশ কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে। তাছাড়া গত ১৪ জুন এবিটির দাওয়াতি শাখার দুই নেতা মোহাম্মদ মোজাহিদুল ইসলাম ও আরিফুল ইসলাম সোলায়মানকে গ্রেফতারের পর স্লিপার সেলের সদস্যদের বিষয়ে জানা গেছে। তাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

গতকাল বুধবার ডিবির যুগ্ম-কমিশনার আবদুল বাতেন ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, শিহাব যে জবানবন্দি দিয়েছেন তাতে আহমেদুর রশীদ টুটুল হত্যাচেষ্টার পুরো প্রক্রিয়ায় আটজনের নাম উঠে এসেছে। তাদের মধ্যে শরিফ ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যাওয়ায় অপর সাতজনকে ধরতে বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে ডিবি।

ফাহিমের সহযোগীরা এখনও অধরা :মাদারীপুরে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত সন্দেহভাজন জঙ্গি গোলাম ফাইজুল্লাহ ফাহিমের সহযোগীদের গ্রেফতারে পুলিশের চলমান অভিযানে দৃশ্যমান কোনো সাফল্য নেই। গত পাঁচদিনে কাউকে গ্রেফতার বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য উদ্ধারের কথা জানা যায়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার সারওয়ার হোসেন সমকালকে বলেন, অভিযান চলছে। তবে সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না।

পুলিশের অপর একটি সূত্র জানায়, উগ্রপন্থিদের অর্থায়নসহ নানাভাবে সহযোগিতার অভিযোগে জামায়াতঘনিষ্ঠ এক আইনজীবীকে রাজশাহী থেকে আটক করা হয়েছে। তিনি ছাড়াও আরও অন্তত চারজনকে বিভিন্ন স্থান থেকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট। তবে এখনও এ ব্যাপারে পুলিশের দায়িত্বশীল কেউ মুখ খোলেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *