বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগে রেকর্ড

Slider অর্থ ও বাণিজ্য

 

 

untitled-5_220384

 

 

 

 

 

দক্ষিণ এশিয়ায় ২০১৫ সালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রত্যক্ষ বা সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে বাংলাদেশে। ভারতের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ছিল তৃতীয় অবস্থানে। পাকিস্তানের এফডিআই ছিল বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। গত বছর পাকিস্তানকে টপকে গেছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ দেশেরই এফডিআই কমে যাওয়ার মধ্যেই বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৪ শতাংশেরও বেশি। গত বছর বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ২২৩ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটিই এক বছরে সর্বোচ্চ এফডিআই।
জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ন্যাশনাল কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আঙ্কটাড) বিশ্ব বিনিয়োগ প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। আঙ্কটাডের পক্ষে ‘বিশ্ব বিনিয়োগ প্রতিবেদন-২০১৫’ শিরোনামের এ প্রতিবেদন গতকাল বুধবার

আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে বাংলাদেশের বিনিয়োগ বোর্ড। রাজধানীতে বিনিয়োগ বোর্ডের নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম ইসমাইল হোসেন।

প্রতিবেদনের ওপর আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, রেকর্ড হারে এ প্রবৃদ্ধি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, নেতৃত্ব ও সহায়ক বিনিয়োগ পরিবেশের সুফল। তিনি বলেন, বিদেশি ঋণ, অনুদানও কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিনিয়োগ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ হিসাবে প্রকৃত বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ আরও অনেক বেশি। সে হিসাবে প্রকৃত বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ নির্ণয় করতে বিনিয়োগ বোর্ডকে পরামর্শ দেন তিনি। তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক সংকট বড় সমস্যা নয়। আমরা স্বর্ণ যুগে আছি সে কথা বলছি না। তবে ভালো আছি।’ তিনি বলেন, এফডিআইর মধ্যে অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বেশি হয়েছে। এর ফলে অন্যান্য বিনিয়োগও সহজ হবে। দেশের অর্থনীতি বড় হচ্ছে, স্বাভাবিক কারণেই আগামীতে এফডিআই বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।

বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. এস এ সামাদ বলেন, এ দেশে বিনিয়োগে মুনাফা বেশি। ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ মুনাফা করা সম্ভব। বড় ধরনের কোন ঝুঁকি নেই। এ কারণে এফডিআই বেড়েছে। এ ছাড়া অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠেছে অনেক দেশ। ফলে বিনিয়োগ বাড়ছে। তিনি বলেন, ৩১ দেশের সঙ্গে বিনিয়োগ-সংক্রান্ত চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। ফলে আগামীতে এফডিআই আরও বাড়বে বলে আশা করেন তিনি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালে খাতওয়ারী সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ এসেছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৫৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এসেছে পোশাক ও বস্ত্র খাতে ৪৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এ ছাড়া ব্যাংকিং খাতে তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩১ কোটি ডলার এফডিআই এসেছে।

দক্ষিণ এশিয়ার এফডিআই প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার ৮ দেশের মধ্যে ভারতে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ চার হাজার ৪২০ কোটি ডলার এফডিআই এসেছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২২৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার এসেছে বাংলাদেশে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এ দুই দেশ ছাড়া আফগানিস্তানে এফডিআই বেড়েছে সামান্য পরিমাণে। এ অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য দেশের মধ্যে শ্রীলংকার এফডিআই ৮৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার থেকে কমে হয়েছে ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। পাকিস্তানের কমেছে ১০০ কোটি ডলার। ১৮৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার থেকে কমে মাত্র ৮৬ কোটি ৫০ ডলার এসেছে।

বিশ্ব বিনিয়োগ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালে সারা বিশ্বে এফডিআই বেড়েছে ৩৮ শতাংশ। ২০০৮ সালে বিশ্বমন্দা শুরুর পর এটিই সর্বোচ্চ হার। উন্নত দেশের এফডিআই প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে আলোচ্য বছরে। সারা বিশ্বের এফডিআইর ৫৫ শতাংশই গেছে এসব দেশে। উন্নয়নশীল দেশে এ হার ৯ শতাংশ। বিদেশি বিনিয়োগে আকর্ষণে শীর্ষস্থান পুনরুদ্ধার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আগের প্রতিবেদনে শীর্ষে ছিল চীন। এবার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে হংকং। শীর্ষ স্থান থেকে চীন হয়েছে তৃতীয়।

আঙ্কটাডের পূর্বাভাসে বলা হয়, বিশ্ব অর্থনীতির ভঙ্গুরতা, চাহিদা কমে আসা ও মন্থর প্রবৃদ্ধিসহ নানা কারণে ২০১৬ সালে এফডিআই ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে ২০১৭-১৮ সালে আবার বাড়তে পারে।

প্রতিবেদনে এবারের প্রতিপাদ্য, ‘বিনিয়োগকারীর জাতীয়তা :নীতি সংকট’। এ প্রসঙ্গে বলা হয়, কৌশলগত কারণ, রাজনৈতিক বিবেচনা ও জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে অনেক দেশ এফডিআইর ক্ষেত্রে আগের তুলনায় অনেক বেশি যাচাই-বাছাই করে থাকে। এ কারণে বিভিন্ন দেশের নেওয়া ১৫ শতাংশ নীতি এফডিআইর ক্ষেত্রে প্রতিকূলতা তৈরি করে। তবে বাকি ৮৫ শতাংশ নীতি বিনিয়োগ অনুকূল। এতে বলা হয়, সারা বিশ্বে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে কাজ করছে আঙ্কটাড। এফডিআই বাড়াতে বিভিন্ন দেশ আঙ্কটাডের নীতি-কাঠামো সহায়তা নিয়ে থাকে।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরূপাক্ষ পাল, অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *