কুমিল্লা সেনানিবাসে সিআইডি’র তদন্ত দল

Slider নারী ও শিশু

 

 

19856_b1

 

 

 

 

 

 

কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যা মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি’র তদন্ত দল গতকাল বুধবার বিকালে তনুর লাশ উদ্ধারস্থল পরিদর্শন করে এবং তনুর বাবা-মা’র সঙ্গে কথা বলে। এর আগে সকালের দিকে সিআইডি কার্যালয়ে গায়ক সারওয়ার, বাপ্পী ও মিউজিশিয়ান খোকনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এসময় সিআইডি’র পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করিম খান বলেন, তনুর বাবা কারো দ্বারা থ্রেটের সম্মুখীন হলে তিনি থানায় জিডি করলে তা আমরা অবশ্যই দেখবো। এছাড়া, তার নিরাপত্তার দায়িত্ব পুলিশের।
গত ২০শে মার্চ রাতে তনুর মরদেহ কুমিল্লা সেনানিবাসের একটি জঙ্গল থেকে উদ্ধার করার পরদিন তার বাবা ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন এবং একইদিন কুমেক হাসপাতালে লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। মামলাটি প্রথমে থানা পুলিশ, পরে ডিবি পুলিশ ও এরপর ৩০শে মার্চ থেকে সিআইডি তদন্তের দায়িত্ব পায়। মামলার ছায়া তদন্ত করে পিবিআই ও র‌্যাব এবং এ মামলার সার্বিক তদারকি করে আসছে সিআইডি’র উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত সহায়ক দল। সিআইডি’র তদন্তকালে দফায় দফায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন, তনুর বাবা-মা, ভাই, স্বজন, সামরিক-বেসামরিক ব্যক্তি ও চিকিৎসকসহ গতকাল বুধবার পর্যন্ত কমপক্ষে ৭০ জন ব্যক্তিকে বিভিন্ন সময়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ঘটনার ৩ মাস অতিক্রান্ত হলেও এ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে তনুর হত্যাকারীদের শনাক্ত কিংবা গ্রেপ্তার করতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা। তনুর হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারসহ বিচার দাবিতে এতোদিন প্রতিবাদী ছাত্র-জনতাসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক দলের আন্দোলন চললেও সন্তান হত্যার বিচার দাবিতে মাঠে নামেনি তনুর বাবা-মা। সর্বশেষ গত সোমবার হত্যাকাণ্ডের ৩ মাস পূর্তি উপলক্ষে গণজাগরণ মঞ্চ-কুমিল্লার উদ্যোগে নগরীর কান্দিরপাড়ে বিক্ষোভ সমাবেশে প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করেন তনুর মা আনোয়ারা বেগম। এ সমাবেশে তার দেয়া বক্তব্যে দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়। এর দু’দিন পর বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ৮ম দফায় সিআইডি-কুমিল্লা অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করিম খানের নেতৃত্বে কুমিল্লা সেনানিবাসে যায় সিআইডি’র তদন্ত দল। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন সিআইডি’র অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার প্রণব কুমার রায়, সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন, সহকারী পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক, পরিদর্শক শাহনেয়াজ, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডি’র পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহিম। সূত্র জানায়, এসময় তদন্তকারী দল ২০শে মার্চ রাতে তনুর লাশ সেনানিবাসের যে স্থান থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল সে স্থানটি পুনরায় পরিদর্শনসহ ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড বয়েজ স্কুলের এক শিক্ষক ও তনুর বাবা-মা’র সঙ্গে কথা বলেন। এর আগে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সিআইডি কার্যালয়ে গায়ক সারওয়ার, বাপ্পী ও মিউজিশিয়ান খোকনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এদিকে গত সোমবার (২০শে জুন) তনু হত্যাকাণ্ডের ৩ মাস পূর্তি ও হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারসহ বিচার দাবিতে নগরীর কান্দিরপাড়ে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তনুর বাবাকে গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা, অনুষ্ঠানে গান না গাওয়ার কারণে তনুকে হত্যা করা, বাসার ডিশলাইন বিচ্ছিন্ন করাসহ নানাভাবে হুমকির অভিযোগ তুলে ধরে দেয়া বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিআইডি-কুমিল্লার বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করিম খান বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, তনুর বাবা কারো দ্বারা থ্রেটের সম্মুখীন হলে তিনি থানায় জিডি করলে তা আমরা অবশ্যই দেখবো। এছাড়া, তার নিরাপত্তার দায়িত্ব পুলিশের। তিনি আরো বলেন, ডিএনএ পরীক্ষায় প্রাপ্ত ৩ ব্যক্তির শুক্রাণু নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের মাঝে ইতিমধ্যে অন্তর্দহন শুরু হয়ে গেছে। ৪০ বছর পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে, দেশ স্বাধীনের ৪২ বছরে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার হচ্ছে। ডিএনএ’র মাধ্যমে সঠিক বিষয়টি আমরা ওপেন করে দিয়েছি। ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। তনুর হত্যাকারীরা যতই দাম্ভিকতা করুক না কেন বা যতই ক্ষমতাবান হোক না কেন একদিন তাদের শাস্তি পেতেই হবে। তবে লোক দেখানো দু-একটা গ্রেপ্তার করা হলে তা অন্যায় হবে। শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে গ্রেপ্তার করা ঠিক হবে না। আমরা শতভাগ নিশ্চিত হয়েই সামনের দিকে এগুবো। তনুর পরিবার সম্পর্কে তিনি বলেন, তাদের কাছে এ বিষয়ে অনেক তথ্য আছে। আমরা তাও জানার চেষ্টা করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *