এ বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সাংসদ আমানুর ও তাঁর তিন ভাইসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। ৬ এপ্রিল আদালত মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করে পলাতক আমানুরসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। ১৭ মে এই ১০ জনের বিরুদ্ধে হুলিয়া ও মালামাল জব্দ করার নির্দেশ দেন আদালত। ২০ মে পুলিশ সাংসদ ও তাঁর তিন ভাইয়ের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মালামাল জব্দ করে, তবে সেখানে উল্লেখযোগ্য কিছু ছিল না। সর্বশেষ ১৬ জুন আদালত আসামিদের হাজির হওয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন। সাংসদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়টি চিঠি দিয়ে জাতীয় সংসদের স্পিকারকে জানানো হয়।
সাংসদ আমানুর রহমান সর্বশেষ গত বছরের ৫ জুলাই সংসদের অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন। টানা ৭৩ কার্যদিবস অনুপস্থিত থাকার পর গতকাল তিনি সংসদে হাজিরা দেন।
প্রসঙ্গত, সংবিধান অনুযায়ী, কোনো সাংসদ টানা ৯০ কার্যদিবস সংসদে অনুপস্থিত থাকলে তাঁর সদস্যপদ বাতিল হয়ে যাবে। সংসদের কার্যপ্রণালিবিধি অনুযায়ী, সংসদ এলাকায় কোনো সাংসদকে গ্রেপ্তার করতে হলে স্পিকারের অনুমতি নিতে হবে।
সংসদের প্রধান ফটকে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য ও সংসদ সদস্য লবির গার্ডদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আমানুর রহমান গতকাল বেলা ১১টার পর নিজস্ব গাড়িতে চেপে সংসদে আসেন। এরপর তিনি অধিবেশন কক্ষের ৪ নম্বর লবিতে রাখা হাজিরা বইয়ে সই করেন। সই শেষে কয়েক মিনিট অপেক্ষা করে তিনি লবি ছেড়ে চলে যান।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘সংসদে তো প্রতিদিন শত শত মানুষ আসা-যাওয়া করে। সম্ভবত পুলিশ আমানুর রহমানকে চিনতে পারেনি। চিনতে পারলে তারা নিশ্চয় বিষয়টি স্পিকারকে জানাত।’
পলাতক থেকেও এই সাংসদ গত এপ্রিলে নিজস্ব প্যাডে মামলাটি পুনঃ তদন্তের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র জমা দেন। গতকাল সংসদ সচিবালয়ের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, মামলা পুনঃ তদন্তের বিষয়ে সরকারের শীর্ষ কোনো কর্মকর্তার কাছে তদবির করার জন্য আমানুর রহমান সংসদে এসেছেন। তবে তার আগে তিনি যে গ্রেপ্তার হবেন না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন।
দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আমানুর রহমান সংসদে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে তারা বিষয়টি সংসদের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত শীর্ষ কর্মকর্তাদের জানান। কিন্তু কর্মকর্তারা গ্রেপ্তারের ব্যাপারে কোনো নির্দেশ দেননি।
তবে সংসদের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা (সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস) কমোডর সৈয়দ আরিফুল ইসলাম ও ডেপুটি সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস (অপারেশন) সেলিম খান এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন।
সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেন, ‘আমানুর রহমান সংসদে এসে হাজিরা দেওয়ার বিষয়টি আজই (মঙ্গলবার) শুনলাম। তবে সংসদে এলেও তিনি অধিবেশনে যোগ দেননি। দিলে আমার চোখে পড়ত।’