ভুয়া এনওসি

Slider জাতীয়

19239_f4

 

 

 

 

 

তিন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের নামে দেয়া নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি) নিয়ে অধিদপ্তর, ইমিগ্রেশন ও পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চে চলছে তোলপাড়। এরই মধ্যে এ ধরনের কত এনওসি ইস্যু করা হয়েছে তার
তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, কার মাধ্যমে, কোন প্রক্রিয়ায় এবং কী কী কৌশল অবলম্বন করে এনওসি দেয়া হয়েছে তা তদন্তে গঠন করা হয়েছে কমিটি। গত ১৪ই জুন নৌপরিবহন অধিদপ্তর থেকে এ তদন্ত কমিটি করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে প্রকৌশল ও জাহাজ জরিপকারক কার্যালয় সদরঘাটের প্রকৌশলী ও জাহাজ জরিপকারক মীর্জা সাইফুর রহমানকে। দুই সদস্যের এ তদন্ত কমিটির সদস্য করা হয়েছে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও স্পেশাল অফিসার মেরিন সেইফটি বদরুল হাসান লিটনকে। নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর এম জাকিউর রহমান ভূঁইয়া, ওএসপি, বিএসপি, পিএসপি, বিএন স্বাক্ষরিত এক পত্রে তদন্ত কমিটি গঠন ও এর কার্যবিবরণী উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে। কমিটিকে ২০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত করে মহাপরিচালক বরাবর সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এছাড়া এ ধরনের এনওসি যাদের অনুকূলে ইস্যু করা হয়েছে তাদের কমপক্ষে ৫ জনের লিখিত বক্তব্য ও সাক্ষাৎকার গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।
বিষয়টি ধরা পড়ে গত ৬ই এপ্রিল নৌপরিবহন অধিদপ্তর থেকে ইস্যু করা একটি এনওসি থেকে। খুলনার সোনাডাঙ্গার বয়রা ইসলামী কলেজ রোডের মো. মোজাহিদুল ইসলামের নামে এনওসিটি ইস্যু করা হয়। তার পিতার নাম আলতাফ হোসেন খান। পাসপোর্ট নং-এএফ-১৯৮৩৫৪৩। এনওসি নং-৪০১.০০৬.১৯১.০০.০০.২০১৩(পার্ট-১) ৭৫৬২(৫)। এনওসিতে স্বাক্ষর করেন ইঞ্জিনিয়ার অ্যান্ড শিপ সার্ভেয়ার অ্যান্ড এক্সামিনার ড. এসএম নাজমুল হক। ওই পত্রে তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন নম্বর ০১৯৮৮-৭৭৭৭৮৮ উল্লেখ রয়েছে। এর কপি দেয়া হয় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন অফিসার, চট্টগ্রাম শাহ আমানত শাহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন অফিসার, ডিএমপি স্পেশাল ব্রাঞ্চের এমএম ইমিগ্রেশন এবং ডেপুটি পুলিশ কমিশনার, স্পেশাল ব্রাঞ্চ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ বরাবর। নৌপরিবহন অধিদপ্তরের ইস্যু করা এই এনওসি নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে ইমিগ্রেশন উইংয়ের স্পেশাল ব্রাঞ্চ। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন জিডি নং-৯০০-এর বরাতে গত ২রা জুন স্পেশাল ব্রাঞ্চের বিশেষ পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর একটি চিঠি দেন। এনওসি যাচাই প্রসঙ্গে দেয়া ওই চিঠিতে বলা হয়, পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের ইমিগ্রেশন শাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুসন্ধানের স্বার্থে মো. মোজাহিদুল ইসলামের নামে ইস্যু করা এনওসির সঠিকতা যাচাই করা আবশ্যক। এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক আপনার লিখিত মতামতসহ একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জরুরিভিত্তিতে অত্র অফিসে পাঠানোর অনুরোধ করা হলো। এ চিঠি পাওয়ার পরই নড়েচড়ে বসে নৌপরিবহন অধিদপ্তর। ১৪ই জুন বিষয়টি তদন্তের জন্য দুই সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটিকে মো. মোজাহিদুল ইসলামের অনুকূলে ইস্যুকৃত এনওসির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত ও প্রমাণ সংগ্রহেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে এক্সামিনার হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত এসএম নাজমুল হক নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ার অ্যান্ড শিপ সার্ভেয়ারের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। এনওসিতে উল্লেখিত ফোন নম্বরটিও তারই। এ ব্যাপারে এসএম নাজমুল হক বলেন, তিনি কোনো ছাড়পত্র প্রদান করেননি। কোনো দুষ্টচক্র তার স্বাক্ষর জালিয়াতি করেছে। সঠিক তদন্ত হলে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হবো।
সূত্রমতে, সমুদ্রগামী জাহাজে নাবিকদের চাকরির পূর্বশর্ত ধারাবাহিক অব্যাহতিপত্র (কন্টিনিউয়াস ডিসচার্জ সার্টিফিকেট বা সিডিসি); যা সমুদ্রপথের ভিসা নামে পরিচিত। উপযুক্ত নাবিকদের এই সিডিসি দেয়ার এখতিয়ার শুধুমাত্র নৌপরিবহন অধিদপ্তরের অঙ্গ সংস্থা সরকারি শিপিং অফিসের। তবে চাকরির স্বার্থে দ্রুত কর্মস্থলে পৌঁছানোর জন্য সিডিসিধারী নাবিকরা অধিদপ্তর থেকে এনওসি নিয়ে আকাশপথে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ পান। এই সুযোগের অপব্যবহার করে অনেক বাংলাদেশি বিভিন্ন সময়ে বিদেশে গিয়ে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ায় তা লন্ডনস্থ আন্তর্জাতিক নৌ-সংস্থার (আইএমও) সদর দপ্তরের নজরে আসে। এরপর সেখান থেকে বিষয়টি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়।
আইএমও’র অভিযোগের পর পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক যৌথ বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৭-৮ মাস ধরে এ ধরনের এনওসি প্রদান সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয় নৌপরিবহন অধিদপ্তর। তিনটি মন্ত্রণালয়ের যৌথ বৈঠকের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে এবং নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অনুমতি ছাড়া এক কর্মকর্তার এভাবে ছাড়পত্র দেয়ার বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় হতবাক সবাই।
এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটির সদস্য বদরুল হাসান লিটন বলেন, চিঠি পেয়েছি। এখনও তদন্ত শুরু হয়নি। শিগগির আমরা কাজ শুরু করবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *