সাম্প্রতিক সময়ে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে ‘বন্দুকযুদ্ধ’। গত ১২ দিনে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন ১৬ জন। এর মধ্যে ৬ জন জঙ্গি সদস্য বলে দাবি করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বাকিরা ডাকাত সদস্য ও বিভিন্ন হত্যা এবং অস্ত্র মামলার আসামি। সর্বশেষ মাদারীপুরে কলেজ শিক্ষক হত্যাচেষ্টার সময় হাতেনাতে গ্রেপ্তার ফাইজুল্লাহ ওরফে ফাহিম নিহত হয়েছে পুলিশের কথিত এই বন্দুকযুদ্ধে। পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবি, ফাহিমের সহযোগীদের ধরতে তাকে নিয়ে অভিযান চালানো হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ফাহিমের সহযোগী জঙ্গি সদস্যরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়লে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোঁড়ে। এ সময় ফাহিম পালাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। যদিও ফাহিমের লাশ হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল হাতকড়া পরানো অবস্থায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে হঠাৎ বেড়ে যাওয়া কথিত বন্দুকযুদ্ধের শুরু চলতি মাসের ৭ তারিখ। এদিন পৃথক ঘটনায় ৪ জন নিহত হয় বন্দুকযুদ্ধে।
এদের মধ্যে তিনজন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনের সদস্য বলে দাবি করেছে পুলিশ। অপর একজন ডাকাত সদস্য বলে জানিয়েছে পুলিশ। রাজধানীর পল্লবীতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় তারেক হোসেন মিলু ওরফে ইলিয়াস ওরফে ওসমান (৩৫) ও সুলতান মাহমুদ ওরফে রানা ওরফে কামাল (৪২) নামে দুই ব্যক্তি। এছাড়া রাজশাহীতে জামাল উদ্দিন নামে একজন কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। আর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিহতের নাম রুবেল মিয়া (২৮)। পুলিশ জানিয়েছে, পল্লবীতে নিহত দু’জন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অধ্যাপক রেজাউল করিম হত্যা, দিনাজপুরের ইস্কন মন্দিরে হামলা এবং বগুড়া শিয়া মসজিদে হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল। তারা দুজনই নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ- জেএমবির মধ্যম সারির নেতা ছিল। আর রাজশাহীতে নিহত জামাল বাগমারায় সৈয়দপুর গ্রামে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনায় জড়িত বলে দাবি করেছে পুলিশ।
সে জেএমবি’র আত্মঘাতী দলের সদস্য ছিল। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে বন্দুকযুদ্ধে নিহত রুবেল মিয়া আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সর্দার বলে পুলিশ জানিয়েছে। তার বিরুদ্ধে নাসিরনগর ও বিজয়নগর থানায় ১২টি মামলা ছিল। গত ৮ই জুন বগুড়া ও যশোরে পৃথক দুই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় দুজন নিহত হন। বগুড়ায় নিহত ব্যক্তির নাম কাউছার আলী (২৫)। পুলিশের দাবি, কাউছার জেএমবির সক্রিয় সদস্য ছিল। সে বগুড়ার আলোচিত শিয়া মসজিদে হামলার সঙ্গে জড়িত। অপরদিকে যশোরে নিহত ব্যক্তি ডাকাত দলের সদস্য বলে জানিয়েছে পুলিশ। ডাকাতির প্রস্তুতির সময় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে সে নিহত হয়।
গত ৯ই জুন রাজধানী ঢাকা ও গাইবান্ধায় পৃথক বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় তিনজন। এদের একজন জেএমবি সদস্য বলে দাবি করেছে পুলিশ। বাকি দু’জন ছিনতাইকারী। এদিন রাজধানীর রামপুরায় র্যারেব সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় জামাল পারভেজ (৪২) নামে এক ব্যক্তি। প্রায় একই সময়ে টঙ্গি এলাকায় নজরুল ইসলাম নামে অপর এক ব্যক্তি র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যান। র্যাবের দাবি, নিহত উভয় ব্যক্তিই ‘ছিনতাইকারী’। এদিন পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে গাইবান্ধায় এক ব্যক্তি নিহত হন। পুলিশের দাবি, নিহত ব্যক্তি জেএমবি সদস্য। তবে তাৎক্ষণিকভাবে সে সময় তার নাম-পরিচয় জানাতে পারেনি তারা। ১১ই জুন নড়াইলের লোহাগড়ায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে রাকিব শেখ নামে এক ডাকাত সর্দার নিহত হয়। পুলিশের দাবি, ডাকাতির প্রস্তুতিকালে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত রাকিব।
সে উপজেলার জয়পুর ইউপির চাঁচই গ্রামের মকলেস শেখের ছেলে। সে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সর্দার। তার নামে লোহাগড়া, নড়াইল, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি থানায় ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধে অন্তত ১২টি মামলা রয়েছে।
১৪ই জুন জয়পুরহাটে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় সোহেল ও মনিরুজ্জামান মনির নামে দুই যুবক। এদের মধ্যে সোহেল স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান একে আজাদ হত্যা মামলার আসামি। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ১টি বিদেশি পিস্তল, ২ রাউন্ড গুলি, ২টি হাঁসুয়া উদ্ধার করে। পুলিশ জানায়, নিহত সোহেলের বিরুদ্ধে সদর থানায় ৩টি সন্ত্রাসী মামলা রয়েছে।
১৫ই জুন যশোর, পাবনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পৃথক বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন তিনজন। এর মধ্যে যশোরের মণিরামপুরে পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ অজ্ঞাত এক যুবক নিহত হয়। পুলিশের দাবি, একদল ডাকাত ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছে- এমন খবরে তারা যশোর-মণিরামপুর সড়কের সতীঘাটা বাজারের কাছে যান। এ সময় ডাকাত দলের সদস্যরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়লে পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এতে অজ্ঞাত ওই যুবক নিহত হয়। একই দিন পাবনার পদ্মারচরে রুবেল হোসেন নামে এক যুবক কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়।
নিহত রুবেল পুলিশ সদস্য সুজাউল ইসলাম হত্যায় জড়িত অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিল। রুবেলকে নিয়ে তার সহযোগীদের ধরতে অভিযান চালাতে গিয়ে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে বলে দাবি করেছে পুলিশ। একই দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে জীবন মিয়া নামে এক ব্যক্তি পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। পুলিশের দাবি, নিহত জীবন আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য।