পশ্চিমা বিশ্বসহ প্রভাবশালী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিশেষ করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে যেসব দেশের সঙ্গে নানা কারণে সম্পর্ক শীতল হয়েছিল, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তেই নতুন করে তৎপরতা শুরু করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কূটনৈতিক সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিভিন্ন প্রভাবশালী রাষ্ট্র ওই নির্বাচন সম্পর্কে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং অবস্থানের কথা জানায়। তাদের সমালোচনা সরকারকে কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে এবং সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল ব্যক্তি পশ্চিমা দেশগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানান। এ নিয়ে একাধিক দেশের সঙ্গে সম্পর্ক শীতল হয়। এর পাশাপাশি ধারাবাহিকভাবেমুক্তমনা ব্লগার, লেখক, প্রকাশক, বিদেশি নাগরিক, ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতাদের হত্যা নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে। যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা মিশনের কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান খুন হওয়ার পর এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে।
দেশটির সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল ঢাকা সফরে এসে ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ডের তদন্তের ঘটনার অগ্রগতি নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের অসন্তুষ্টির কথা জানিয়ে যান। সম্প্রতি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের অধিবেশনে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনায় একাধিক ইউরোপীয় দেশের বক্তব্যে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা উঠে আসে। বাংলাদেশ বিপজ্জনক পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং সার্বিকভাবে মানবাধিকার পরিস্থিতি ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলেও মত দেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা। সূত্র জানায়, এসব সমালোচনা ও অসন্তুষ্টির বিষয় পর্যালোচনা করেই সরকারের উচ্চ পর্যায় পশ্চিমা বিশ্বসহ প্রভাবশালী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করতে নির্দেশ দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে।
সূত্র জানায়, আগামী ২৩ জুন ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারিত্ব বৈঠকের পর দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক অনেক বেশি উষ্ণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ বৈঠকে সন্ত্রাসবাদ দমন বিষয়ে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র যৌথ সহায়তার ক্ষেত্র ও পথরেখা সুনির্দিষ্ট করা হবে। সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশের পদক্ষেপের বিষয়ে বিস্তারিত একটি প্রতিবেদনও দেওয়া হবে। এরই মধ্যে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এ প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে বলেও সূত্র জানায়।
সূত্র আরও জানায়, আগামী মাসে মঙ্গোলিয়ার রাজধানী উলন বাটরে অনুষ্ঠিতব্য এশীয়-ইউরোপীয় দেশের জোট আসেম সম্মেলন চলাকালে প্রধামমন্ত্রী শেখ হাসিনা জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেলসহ একাধিক ইউরোপীয় দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বলেও আশা করা হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে ওই সব দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন ঘটবে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি সম্পর্কেও সরাসরি অবহিত করা হবে।
অপর একটি সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি নীরবে কূটনৈতিক তৎপরতা চালায়, যার মাধ্যমে জঙ্গিবাদ দমন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার প্রসঙ্গসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের কার্যক্রম ও অবস্থান সম্পর্কে ভুল তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করে। এ বিষয়েও সরকার অবগত রয়েছে। এর মোকাবেলায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে একাধিক কূটনৈতিক ব্রিফিং করেছে। আগামীতেও কূটনৈতিক ব্রিফিং হবে। এ ছাড়া পশ্চিমা দেশগুলোতে বাংলাদেশি মিশনগুলোকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে সঠিক তথ্য তুলে ধরতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পশ্চিমা দেশগুলোর পাশাপাশি এশিয়ার প্রভাবশালী দেশ জাপান ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতেও কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হচ্ছে। চলতি বছরের মধ্যে চীন সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কোনো নেতার সফরের সম্ভাবনা রয়েছে বলেও সূত্র জানায়।