নিরাপত্তা ‘নিশ্ছিদ্র’ করার তাগিদ নিয়ে আগামী ২৪শে জুন ওয়াশিংটনে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র পঞ্চম পার্টনারশিপ ডায়ালগ। ওই ডায়ালগে নেতৃত্ব দিতে ২১শে জুন দেশটি সফরে যাচ্ছেন পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল। সংলাপে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন দেশটির স্টেট ডিপার্টমেন্টের রাজনীতিবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি থমাস এ শ্যানন। দু’দিনের ওই অংশীদারিত্ব সংলাপে ৩ ধাপে আলোচনা হবে। ২০১২ সাল থেকে নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এবং উন্নয়ন সহযোগিতা- ওই ৩ ধাপে আলোচনা হয়ে আসছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না জানিয়ে সংলাপ প্রস্তুতির সঙ্গে যুক্ত ঢাকার কর্মকর্তারা মানবজমিনকে বলেন, সংলাপের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করতে গতকাল দ্বিতীয় দফায় আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়েছে পররাষ্ট্র দপ্তরে। পররাষ্ট্র সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করার বিষয়ে ওয়াশিংটনের তাগিদের বিষয়টি নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রপন্থার ঝুঁকি সত্ত্বেও বাংলাদেশ এটি কঠোর হস্তে মোকাবিলা করে চলেছে। এখানে চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডগুলো ঠেকানো বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতার যেসব প্রস্তাব করেছে তা বাস্তবায়নের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। সংলাপের এজেন্ডা এখনও চূড়ান্ত হয়নি দাবি করে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা গতকাল মানবজমিনকে বলেন, পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল সংলাপ শুরুর দু’দিন আগে ওয়াশিংটন পৌঁছাবে। সেখানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতসহ গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা ও প্রতিনিধি দলের সদস্যদের মধ্যকার আলোচনায় এজেন্ডাসহ অন্যান্য প্রস্তুতি চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ‘নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা’ বিশেষ করে ঢাকায় মার্কিন মিশন, কূটনীতিক, কর্মকর্তা ও স্টাফদের নিরাপত্তা নির্বিঘ্ন করার বিষয়েও ওয়াশিংটনের তরফে যে তাগিদ পুনর্ব্যক্ত করা হবে সে বিষয়ে প্রায় নিশ্চিত ঢাকার কর্মকর্তারা। এজেন্ডার মুখ্য আলোচ্য হিসেবে এটি থাকছে এমনটি ধরেই ঢাকার কর্মকর্তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ায় উগ্রপন্থিদের সম্ভাব্য উত্থানে আশঙ্কায় বরাবরই বিচলিত যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দুনিয়া। এ নিয়ে বহুদিন ধরে সতর্ক বার্তা দিয়ে আসছেন তারা। গত এপ্রিলে মার্কিন সাহায্য সংস্থার কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান নিজের বাসায় নির্মমভাবে খুন হওয়ার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে নিজেদের কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা জোরদারের জন্য সমপ্রতি নিজেদের নিরাপত্তারক্ষীদের অস্ত্র বহনসহ নিজস্ব নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলার অনুমতি চেয়েছে ওয়াশিংটন। জুলহাজ হত্যার বিষয়টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্যক্তিগতভাবে নিয়েছে বলে জানান দেশটির রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাট। এ ঘটনার স্বচ্ছ তদন্ত ও প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। আর এ নিয়ে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। তার জরুরি বার্তা নিয়ে আলোচনার জন্য ঢাকায় আসেন মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল। তার সফরের সময় আলোচনায় দুই দেশের মধ্যে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, তা বাস্তবায়নে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনার জন্য ঢাকা সফর করেন মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক মুখ্য উপ-সহকারী মন্ত্রী উইলিয়াম ই টড। এরপর ঢাকায় আসেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কূটনৈতিক নিরাপত্তাবিষয়ক সহকারী মন্ত্রী গ্রেগরি স্টার। সরকারি একাধিক সূত্র জানায়, গ্রেগরি স্টারের সফরের সময় বাংলাদেশে মার্কিন কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করতে নিজস্ব নিরাপত্তাবলয়ের কথা বলা হয়। ওই সময় বাংলাদেশকে দেয়া এক প্রস্তাবে মার্কিন কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত একটি বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যদের (বাংলাদেশি নাগরিক) জন্য প্রকাশ্যে আধুনিক অস্ত্র বহনের অনুমতি চাওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ওই অনুরোধ বাংলাদেশের পক্ষে যে রাখা সম্ভব নয়, সেটি তাৎক্ষণিকভাবে বলা হয়নি। তখন বলা হয়- কোনো দেশকে এখন পর্যন্ত এ ধরনের সুবিধা দেয়ার বিধান নেই। বিষয়টি উচ্চপর্যায়ে আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্রকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে। সরকারের দায়িত্বশীল একচি সূত্র বলেন, কূটনৈতিক সম্পর্কবিষয়ক ভিয়েনা সনদে কোন দেশের কূটনৈতিক মিশনের কর্মকর্তাদের সামগ্রিক নিরাপত্তার দায়িত্ব স্বাগতিক দেশের। কাজেই যে দেশে কূটনীতিকেরা কাজ করবেন, সে দেশই তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে। আসন্ন ওয়াশিংটন সংলাপে এ বিষয়ে বাংলাদেশ তার অবস্থান তুলে ধরতে পারে বলে জানা গেছে। সংলাপে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে। সেখানে শ্রম অধিকার ও কর্মপরিবেশের বিষয়েও কথা হতে পারে। এ নিয়ে বাংলাদেশের সামপ্রতিক অগ্রগতির বিষয়টি সেখানে তুলে ধরা হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তুতি: এদিকে আসন্ন পার্টনারশিপ ডায়ালগ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তুতির বিষয়ে গতকাল আমেরিকান সেন্টারে স্বল্পসংখ্যক সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন দেশটির রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাট। সেখানে তিনি জানান, সংলাপে নিরাপত্তার বিষয়টি টপ এজেন্ডায় থাকছে। সংলাপে বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ ও সন্ত্রাসের অর্থায়ন বন্ধ এবং সমাজে শান্তি নিশ্চিত করতে ঢাকা-ওয়াশিংটন সহযোগিতা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হবে বলে জানান তিনি।