চট্টগ্রাম : আলোচিত পুলিশ কর্মকতা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকাণ্ডে দায়েরকৃত মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে সমালোচনার মুখে পরিবর্তন করা হয়েছে। ‘শিবির কর্মী’ আবু নছরকে ৩০ লাখ টাকা নিয়ে ফাঁসানোর ‘অভিযোগ উঠেছে’ বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক কাজী রাকিব উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে।
রোববার (১২ জুন) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিএমপির মুখপাত্র এডিসি আনোয়ার হোসাইন।
মামলায় নতুন করে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের সহকারী কমিশনার (পশ্চিম) কামরুজ্জামানকে। রাকিব উদ্দিন আহমেদের দায়িত্ব নেয়ার চারদিনের মাথায় তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হল।
এর আগে গত ৯ জুন আটক নছরকে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মোহাম্মদ আব্দুল কাদেরের আদালতে তুলে রিমান্ডে চান কাজি রাকিব।
আদালতে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বাবুল আক্তারের স্ত্রী হত্যার বিচার দাবি করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে রিমান্ড বাতিলের আবেদন জানান। পাশাপাশি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে গ্রেপ্তার আবু নছরের নূন্যতম সম্পৃক্তা নেই বলে দাবি করেন। শুধু হাটহাজারীর মূসাবিয়া দরবার শরীফের কর্তৃত্ব নিয়ে দুই বোনের দ্বন্দ্বের জেরে নছরকে ফাঁসানো হয়েছে বলে তারা আদালতকে জানান।
এরপর আদালত মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জানতে চান, কোন তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আসামি আবু নছরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে? এসময় তদন্ত কর্মকর্তা কাজী রাকিব উদ্দিন উপরোক্ত তার কথাগুলো আদালতের সামনে পুনরায় তুলে ধরলে আদালত কোন দালিলিক প্রমাণ আছে কি না সেটি জানতে চান।
জবাবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক কাজী রাকিব উদ্দিন আহমেদ তার ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনের যুক্তিকতা তুলে ধরে আদালতকে জানান, আসামি আবু নছর গুন্নু হত্যাকাণ্ডের দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তার অতীত অপরাধ কর্মকাণ্ড ও শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণ এবং বেশ কিছু গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার সময়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিতের বিষয়টি আমরা মোবাইল ট্র্যাকিং করেও নিশ্চিত হয়েছি। এছাড়া আসামি নিজেও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সেটি স্বীকার করেছেন।
এসময় তদন্ত কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেন, ‘বাবুল আক্তার বাংলাদেশের একজন সৎ ও সাহসী অফিসার। তাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তার স্ত্রীর হত্যাকাণ্ডের এই মামলাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। মামলায় এমন কাউকে গ্রেপ্তার করবেন না, যাতে করে মামলার গ্রহণযোগ্যতা ও মোটিভটি নষ্ট হয়ে যায়। সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আসামি গ্রেপ্তার করে মামলাটি সর্তকতার সঙ্গে তদন্ত করবেন।’
একই সঙ্গে আবু নছরকে কোন তথ্য প্রমাণের ওপর ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদি সেটি মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের ভিত্তিতে হয়, সেটি যেন আগামী রোববার আদালতে উপস্থাপন করা হয় সেই নির্দেশনা দেয়া হয়। ওই দিনই ডিবির করা রিমান্ডের শুনানি হবে বলে জানান আদালত।
এরপরই মূলত এনিয়ে ‘বিতর্ক’ ওঠে। গতকাল (১১ জুন) এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনও করে নছরের পরিবার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হল।
এর আগে গত ৭ জুন রাতে হাটহাজারী উপজেলার পশ্চিম ফরহাদাবাদ থেকে এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সাবেক শিবির নেতা আবু নছর গুন্নুকে (৪০) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এছাড়াও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটর সাইকেল ও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে সন্দেহভাজন কালো রঙের মাইক্রোবাস উদ্ধার করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে মাইক্রোবাসের চালককেও।
গত ৫ জুন সকাল ৭টার দিকে নগরীর জিইসি মোড়ে প্রকাশ্যে গুলি করে পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ছেলেকে নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট স্কুলে যাওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে। অতি সম্প্রতি বাবুল আক্তারের পদোন্নতির পর ঢাকায় অবস্থান করলেও তার স্ত্রী ছেলে-মেয়েকে নিয়ে নগরীর জিইসি এলাকার একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন।