রাতুল মন্ডল, শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি: মেয়াদ থাকার কারণে শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়ন পরিষদে সরকারী ভাবে এখনো পুরাতন চেয়ারম্যান ক্ষমতায় আছেন। তবে নতুন চেয়ারম্যান শপথ গ্রহন করেই পরিষদে প্রবেশ করে সব কিছু নিজের দখলে নিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু সরকারী কাগজপত্রে পুরাতন চেয়ারম্যানের দস্তখত প্রয়োজন হওয়ায় ভোগান্তি দেখা দিয়েছে। নতুন চেয়ারম্যানের ভয়ে পুরাতন চেয়ারম্যান পরিষদে আসতে না পেরে নিজ বাসায় বসেই চেয়ারম্যানী করছেন। ফলে একটি ইউনিয়নে দুই জন চেয়ারম্যান কাজ করছেন। এই অবস্থায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলছেন, তিনি আইনানুগ ব্যবস্থা নিবেন।
জানা গেছে, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ইউপি পরিষদ দখল করে নেয় নব নির্বাচিত আওয়ামীলীগের মনোনিত চেয়ারম্যান মো.বাদল সরকার। বর্তমান চেয়ারম্যানকে হটিয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়ন পরিষদ দখলে নেন। মেয়াদ শেষ হতে তখনো মাস তিনেক বাকি। দখলে নিয়েই পরিষদের চারটি ব্যাংক হিসাব থেকে কয়েক লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে পরিষদের দাপ্তরিক সকল কাগজপত্র পরির্বতন করেন তিনি। পরিষদ কার্যালয় দখল করে চেয়ারম্যানের নিজ কক্ষের নেমপ্ল্যাট পরিবর্তন করে নিজের নাম লিখে ঝুলিয়ে দেন তিনি। এদিকে বর্তমান চেয়ারম্যানের মাস তিনেক সময় বাকি থাকায় স্থানীয় সরকার আইনে পরিষদের সকল দাপ্তরিক কাজের স্বাক্ষর করার কথা আব্দুর রাজ্জাক বেপারীর। তাকে জোর করে হটিয়ে দেওয়ায় এই কাজ গুলো তিনি নিজবাসায় বসে করছেন। এতে করে সাধারণ জনগণ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
ইউনিয়ন পরিষদে আসা এক ভোক্তভূগি অভিযোগ করে বলেন, তিনি জন্ম নিবন্ধন করতে এসেছেন। বর্তমান চেয়ারম্যান অফিসে না থাকায় এখন তথ্য অফিস আমাকে চেয়ারম্যানের বাসা থেকে স্বাক্ষর আনতে বলে। আমি র্দীঘ পথ পারি দিয়ে ইউপি পরিষদে আসছি এখন প্রায় ১কি.মি. পথ পারি দিয়ে চেয়ারম্যানের বাসায় যেতে হবে।
ভোক্তভূগি অভিযোগের বিষয়ে ৬নং বরমী ইউপির সচিব এনামুল হক মোল্লাহ্ বলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বেপারী পরিষদে না থাকায় জনগণ সহ আমাদের দাপ্তরিক কাজের স্বাক্ষর ওনার নিজ বাসা থেকে আনতে হয়। এখানে আমার করার কিছু নাই।
এ বিষয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বেপারী জানান, আমাকে জীবন নাশের হুকমি দিয়ে আমার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পরিষদ দখল করেন বাদল সরাকার।পরিষদ দখলের বিষয়ে গত ৩০ জুন স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ করি। তিনি আরো বলেন, নতুন চেয়ারম্যান শামসুল হক বাদল সরকার বেআইনিভাবে ইউনিয়ন পরিষদের দখল নিয়েছেন এবং দায়িত্ব পালন করছেন। আমি দাপ্তরিক দায়িত্ব পালন করছি নিজ বাসায়। অথচ পরিষদের নেমপ্ল্যাট পরিবর্তন করেছে বাদল সরকার। এখন পর্যন্ত স্থানীয় প্রশাসন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করে নি।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বনানী বিশ্বাস বলেন, বর্তমান চেয়ারম্যানদের মেয়াদ শেষ হলে তাঁরা দায়িত্ব পাবেন। বরমী ইউনিয়নের নতুন চেয়ারম্যানের জোর করে পরিষদ দখলের অভিযোগ করেন বতর্মান চেয়ারম্যান। বর্তমান চেয়ারম্যানের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নতুন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার আইনি সুযোগ নেই। তাই আমরা নতুন চেয়ারম্যানকে বারবার লিখিত এবং মোঠোফোনে এই ধরণের বেআইনি কাজ না করতে বলা হয়েছে। কিন্তু তাতেও যদি না মানে আমরা কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। যাতে সাধারণ জনগণ কোন ধরণের ভোগান্তিতে না পরে।
উল্লেখ্য, নবম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে শ্রীপুরের আটটি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ করা হয় গত ২৩ এপ্রিল। গত ১৯ মে, বরমী, গাজীপুর, গোসিংগা, কাওরাইদ, মাওনা, প্রহলাদপুর, রাজাবাড়ী, তেলিহাটি ইউনিয়নের নতুন চেয়ারম্যানরা শপথ নেন। অন্য সব চেয়ারম্যান বর্তমান চেয়ারম্যানদের মেয়াদ শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আছেন। ব্যতিক্রম বরমী ইউনিয়নের নতুন চেয়ারম্যান। তিনি শপথ নিয়েই ইউপি দখল করে নেন।