স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, গাজীপুর থেকে ফিরে: শিল্প রাজধানী খ্যাত গাজীপুর। সারা জেলায় দুই হাজারেরও বেশী শিল্পপ্রতিষ্ঠান থাকলেও গাজীপুর সিটিকরপোরেশনের অধীন রয়েছে দেড় হাজারের মত শিল্প প্রতিষ্ঠান। এই সকল প্রতিষ্ঠানের টেক্স ভ্যাট, বিদ্যুৎ, গ্যাস সহ নানা ধরণের রাষ্ট্রীয় সুবিধার নিয়ন্ত্রক জিসিসি। তবে সিটিকরপোরেশন তাদের ট্যাক্স ও ভ্যাট আদায় করে ওই সকল শিল্প প্রতিষ্ঠান।
গাজীপুর মহানগরের মধ্যে কোন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান করতে হলে মেয়রের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়। জায়গা জমি ও নানা ধরণের সুবিধার নিশ্চয়তা পেলেই শিল্পপতিরা গাজীপুরে শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মান করেন। আর এই ভাবেই চলছে গাজীপুর মহানগরে শিল্পায়ন।
গাজীপুর মহানগরের শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে ট্যাক্স ভ্যাট আদায়ের ক্ষেত্রে একটি বড় ধরণের কৌশল অবলম্বন করা হয়। কোন প্রতিষ্ঠানের ট্যাক্স ও ভ্যাটের বকেয়া বাবদ ৫ লাখ টাকার নোটিশ হলে কিছু টাকার বিনিময়ে ওই দায় থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। মেয়র সাহেব নিজস্ব ক্ষমতা বলে কর মওকুফ করতে পারেন। ফলে শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে আদায় হওয়া সরকারী টাকার একটি ছোট অংশই জিসিসিতে জমা হয়।
একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশে অনিচ্ছু সূত্র জানায়, নোটিশে উল্লেখ থাকা টাকার যে অংশ দেয়া হয় তার সামান্য অংশই সরকারী ঘরে জমা হয়। নোটিশের ঝামেলা থেকে রেহাই পেতে মাসিক করে নেয়াই ভাল। সূত্র বলছে, ছোট বড় মিলিয়ে দেড় হাজার শিল্প প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে গড়ে একটি অর্থ বছরে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা করে দিলেই পরে আর সামান্য ট্যাক্স ভ্যাট দিতে হয়। এতে বিড়ম্বনাও কমে যায়।
গাজীপুর সিটিকরপোরেশনের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সকল শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে সমান হারে টাকা পাওয়া যায় না। অনেক ভিআইপিদের শিল্প প্রতিষ্ঠান থাকায় টাকার নোটিশ পর্যন্তও দেয়া যায় না। ভিআইপি, সিআইপি ও দলীয় সিনিয়র নেতা এবং আমলাদের শিল্প বাদ দিয়ে প্রায় এক হাজার থেকে ১হাজার ২’শ শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ১ থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত প্রতি অর্থ বছরে গোপনে দিতে পারে। এই টাকা গুলো সরকারী কোষাঘারে জমা দেয়া টাকার অতিরিক্ত। ফলে বছরে সরকারী টাকা ছাড়া প্রায় দশ থেকে পনের কোটি টাকার মত আহরণ হয়। এই টাকা কে বা কারা পায় তা স্পষ্ট না হলেও যাদের হাতে ট্যাক্স ও ভ্যাট আদায়ের ক্ষমতা থাকে, তারা বা তাদের এজেন্টরাই পায়। ফলে গাজীপুর সিটিকরপোরেশনে শিল্পখাত একটি লাভজনক খ্যাত হিসেবে পরিচিত।
এদিকে বাসা বাড়ি থেকে আদায় করা ট্যাক্স নিয়ে নাটক হয় অন্য ধরণের। মাইকিং করে জনগনকে নগর ভবনে আনা হয়। এরই মাঝে দেয়া হয় অসংলগ্ন নোটিশও। আর সব ধরণের যোগাযোগ করা হলে সামান্য ট্যাক্স দিয়েই সরকারী টাকা পরিশোধ করা হয়।