একই দিনে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন চার জন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাষ্যমতে, এদের ৩ জন জঙ্গি। একজনকে বলা হয়েছে ডাকাত। রাজধানীর পল্লবীতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহতরা হলো- তারেক হোসেন মিলু ওরফে ইলিয়াস ওরফে ওসমান (৩৫) ও সুলতান মাহমুদ ওরফে রানা ওরফে কামাল (৪২)। রাজশাহীতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতের নাম জামাল উদ্দিন। আর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিহতের নাম রুবেল মিয়া (২৮)। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, রাজধানীর পল্লবীতে নিহতদের মধ্যে তারেক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অধ্যাপক রেজাউল করিম ও দিনাজপুরের ইস্কন মন্দিরে হামলাকারী ও সুলতান বগুড়া শিয়া মসজিদে হামলাকারী। মনিরুল ইসলাম জানান, বন্দুকযুদ্ধে নিহত তারেক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রেজাউল করিমকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। তারেকই ওই ঘটনার নেতৃত্বে ছিল। এ ছাড়া দিনাজপুরের কাহারোলের ইস্কন মন্দিরে হামলার সঙ্গে সে জড়িত ছিল।
রেজাউল করিমকে হত্যার ঘটনায় যারা গ্রেপ্তার হয়েছিল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তারা তারেকের নাম বলেছে। তারেক উত্তরাঞ্চলে জেএমবির একজন প্রভাবশালী নেতা। হত্যা ও খুনের ঘটনার অন্যতম পরিকল্পনাকারীও ছিল সে। তার গ্রামের বাড়ি জয়পুরহাট। বন্দুকযুদ্ধে নিহত সুলতান মাহমুদের গ্রামের বাড়ি দিনাজপুর। তিনি বগুড়া শিয়া মসজিদে গুলি চালিয়ে ১ জনকে হত্যা করে। জেএমবির মধ্যম সারির নেতা সুলতান বাগমারার শিয়া মসজিদে গুলি ছুড়েছিল বলে পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, হোসেনি দালান ও পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলার পর জেএমবি সদস্যদের অনেকেই ঢাকা ছেড়েছিল। দেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালানোর পর জেএমবির সদস্যরা আবারও ঢাকায় ঢোকার চেষ্টা করছিল।
তারই অংশ হিসেবে তারেক ও সুলতান ঢাকায় এসেছিল। সোমবার গভীর রাতে কালশী এলাকায় অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চালায় ডিবির একটি টিম। কালশী লোহার ব্রিজের কাছে ৫/৬ জন সন্ত্রাসী অবস্থান করছিল এমন তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি অভিযান চালালে ডিবি পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ও বোমা নিক্ষেপ করে। পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে তারেক ও সুলতান নিহত হয়। এ সময় তাদের অন্য সহযোগীরা পালিয়ে যায়। লাশের ময়নাতদেন্তর জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে রাখা হয়েছে। ওই ঘটনায় পুলিশের দুজন সদস্য আহত হয়েছে বলে দাবি পুলিশের। নিহতদের কাছ থেকে একটি পিস্তল, তিনটি বুলেট ও তিনটি বোমা উদ্ধার করা হয়।
রাজশাহী থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানিয়েছেন, রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ফরাদপুর চাপড়া এলাকায় মঙ্গলবার ভোরে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে জামাল উদ্দিন নিহত হয়। সে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে আহমদিয়া সমপ্রদায়ের মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনায় জড়িত বলে দাবি করেছে পুলিশ। নিহত জামাল উদ্দিন চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপুর কালিনগর গ্রামের তাবজুল হকের ছেলে। সে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবি’র আত্মঘাতী দলের সদস্য ছিল। সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী জেলা পুলিশের একটি দল চাঁপাই নবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বাবুডাইং এলাকা থেকে জামালকে আটক করে। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, গোদাগাড়ীর ফরাদপুরে অভিযানে যাওয়ার সময় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এ ঘটনা ঘটে। রাজশাহী পুলিশ সুপার নিসারুল আরিফ জানান, সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে চাঁপাই নবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বাবুডাইং এলাকায় অভিযান চালিয়ে জামালকে আটক করা হয়।
তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী গোদাগাড়ীর ফরাদপুরে অভিযান চালাতে যায় পুলিশ। রাত সাড়ে ৩টার দিকে ফরাদপুর গ্রামের চাপড়ার পাশে নাইমুরের জমির কাছে পৌঁছালে জেএমবির কয়েক সদস্য পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এ ঘটনায় জেএমবি সদস্য জামাল উদ্দিন গুলিবিদ্ধ হলে তাকে দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল (রামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পুলিশের তিন সদস্যও আহত হন। পরে ঘটনাস্থল থেকে একটি বড় হাঁসুয়া, ৬টি ককটেল, জামালের পাসপোর্ট ও ভিসা উদ্ধার করা হয়। নিহত জামাল উদ্দিন চাঁপাইন বাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপুর কালিনগর গ্রামের তাবজুল হকের ছেলে।
আটকের পর জামাল পুলিশের কাছে বাগমারায় মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। এ সময় হামলায় অংশ নেয়া তারিকের পরিচয়ও জানায়। তার তথ্যের ভিত্তিতে চাঁপাই নবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার রূপনগর গ্রামে অভিযান চালিয়ে পুলিশ তারেকের মা তসলিমা বেগমকে আটক করেছে পুলিশ। তারেকের বাড়িও শিবগঞ্জের ঘোড়াপাখিয়া ইউনিয়নের রূপনগর গ্রামে। তারেকের বাবা জামায়াত কর্মী সালেক সাবেক সেনা সদস্য। জামাল ও তারেক শিবির করত। পরে তারা জেএমবিতে যোগ দেয়। উল্লেখ্য, গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর শুক্রবার জুমার নামাজের সময় মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত হয় তারিক আজিজ। তারিকের পরিচয় শনাক্ত ও তার সহযোগী জামালকে ধরিয়ে দিতে রাজশাহী জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছিল।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে বন্দুকযুদ্ধেই নিহত রুবেল মিয়া আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সর্দার বলে পুলিশ জানিয়েছে। তার বিরুদ্ধে নাসিরনগর ও বিজয়নগর থানায় ১২টি মামলা রয়েছে। পুলিশ জানায়, সোমবার দিনগত গভীর রাতে সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই সড়কের নাসিরনগর উপজেলার কুন্ডা ইউনিয়নের তোল্লাপাড়া নামক স্থানে গোলাগুলির এ ঘটনা ঘটে। নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জানান, গভীর রাতে একদল ডাকাত সড়কে ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশের একটি দল সেখানে যায়। ডাকাত দলের সদস্যরা এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে আত্মরক্ষার জন্য পুলিশও পাল্টা গুলি ছুড়ে। গোলাগুলির মধ্যে ওই ডাকাত আহত হয়। পরে তাকে জেলা সদর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ওসি জানান, ডাকাতদের ছোড়া গুলিতে তিনিসহ চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তাদেরকেও চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) আশরাফুল, কনস্টেবল রাখাল ও আবু তাহের। নিহত রুবেল নাসিরনগর উপজেলার নুরপুর গ্রামের ফয়েজ মিয়ার ছেলে।