জাহিদ হাসান/আনোয়ার হোসেন, গাজীপুর থেকে ফিরে: প্রায় অনেক সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির গাজীপুর জেলার সাংগঠনিক অবস্থা খুবই নাজুক। নিরাপত্তার অজুহাতে অনেক বিএনপি নেতা নৌকায় উঠে রয়েছেন। এর কারণ হিসেবে নিরাপত্তার কথা বললেও পুরোটা সঠিক নয়। আওয়ামীলীগের সঙ্গে গোপন লিঁয়াজো করে তারা আত্মরক্ষার অভিনয় করছেন। ফলে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির ফলাফল শুন্য হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, সদ্য সমাপ্ত ৩৬ টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির কোন চেয়ারম্যান প্রার্থী বিজয়ী হতে পারেননি। নির্বাচন শুরুর কিছু পরেই অনেক প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। কেন্দ্রে জাল ভোট ও কেন্দ্র লুট হওয়ার সময় দলীয় সহযোগীতা না পেয়ে তারা নির্বাচন বয়কট করেন।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় সকল ইউনিয়নেই স্থানীয় বিএনপির কতিপয় শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের গোপন লিঁয়াজো হয়। ফলে ধানের শীষের প্রার্থীরা দলীয় শক্তি না পেয়ে নির্বাচন ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। আর জবাবে বিএনপির নেতারা নিজেদের অসহায়ত্বের দোহাই দিয়ে আরামে থেকে গেছেন। অনেক ইউনিয়নে ধানের শীষের প্রার্থীকে নৌকার সহায়ক হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোকাবেলার জন্য। এসব ক্ষেত্রে ধানের শীষের মনোনয়ন সংগ্রহ ও নির্বাচনের খরচ বাবদ নৌকার প্রার্থী, ধানের শীষের নেতাদের টাকা পর্যন্ত দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নির্বাচনের সময় অনেক ধানের শীষের নেতাকে ধানের শীষের প্রতীক বুকে লাগিয়ে নৌকার পক্ষে প্রচারণা করতেও দেখা গেছে। এমনকি নৌকায় সিল মারার সময় ধানের শীষের এজেন্টকে সিল ও কালি সরবরাহ করতেও শুনা যায়। সব মিলিয়ে দলীয় নীতি আদর্শ ভুলে গিয়ে স্বার্থের নিকট পরাজিত বিএনপির কতিপয় নেতার অপ-রাজনীতির কারণে গাজীপুর জেলায় বিএনপির সকল ইউনিয়নে ভরাডুবি হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের দলীয় কোন্দলের রেশ। এ সব কারণে গাজীপুর সিটির মেয়র পদ পেয়েও হারানোর সময় দলীয়ভাবে কোন কর্মসূচি দেয়নি গাজীপুর বিএনপি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগত উপজেলা ও পৌর নির্বাচনেও বিএনপি এমন কাজই করেছে। তবুও অপরাজনীতির প্রাথমিক পর্যায়ে রাজনৈতিক বিশ্বাসঘাতকতা পুরোপুরি শিখতে দেরী হওয়ার ফাঁকে কালিয়াকৈরে মেয়র এবং গাজীপুর সদর ও কাপাসিয়ায় উপজেলা চেয়ারম্যান বিএনপির হয়ে গেছে। গাজীপুর জেলা বিএনপির দলীয় কোন্দল নিরসন করতে না পারলে আগামীর যে কোন নির্বাচনেও একই অবস্থা হতে পারে বলে আশংকা রয়েছে।
গাজীপুর জেলা বিএনপির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা-কর্মীরা গ্রামবাংলানিউজকে বলেছেন, গাজীপুর জেলা বিএনপি থেকে কতিপয় সিনিয়র নেতাকে কেন্দ্রে পদ দিয়ে গাজীপুর মুক্ত করা যেতে পারে। আর যাদের একাধিক পদ আছে তাদের একটি করে পদ দিলে রাজনীতিতে নতুন মোড় তৈরী হতে পারে। সূত্র বলছে, আ স ম হান্নান শাহ, অধ্যাপক এম এ মান্নান, হাসান উদ্দিন সরকার, ফজলুর হক মিলন, কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল সহ আরো কিছু নেতাকে কেন্দ্রে রেখে ও ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মধ্যে কাউন্সিল করে পদ দিলে গাজীপুর বিএনপি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।