এক আকস্মিক প্রয়াণ। বলা নেই, কওয়া নেই হঠাৎই নিভে গেলো আলো। চলে গেলেন আমাদের আরো এক প্রিয়জন, বন্ধু, সুহৃদ। ইন্তেকাল করেছেন প্রখ্যাত সাংবাদিক ফাহিম সৈয়দ মুনএম (ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন)। মাছরাঙা টেলিভিশনের এই প্রধান নির্বাহীর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সাংবাদিকদের মধ্যে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। গতকাল ভোর সাড়ে পাঁচটায় রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসভবনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়। তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে ও আত্মীয়স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী ও শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে গেছেন। মরহুমের লাশ স্কয়ার হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে। প্রবাসে থাকা দুই পুত্র আজ ঢাকায় পৌঁছলে জানাজা ও দাফন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে। ফাহিম মুনএম-এর পিতা প্রয়াত প্রখ্যাত সাংবাদিক সৈয়দ নুরুদ্দিন। মুনএম ছিলেন একজন সৎ এবং উন্মুক্তমনা মানুষ। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন দেশের বিশিষ্টজনরা। তার মৃত্যুতে দেশের গণমাধ্যমের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। সহকর্মী সংবাদকর্মীদের অনেকের কাছে ফাহিম মুনএম ‘টিপু ভাই’ হিসেবেই বেশি পরিচিত ছিলেন।
স্কয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠান মাছরাঙা টেলিভিশনে ২০১০ সালে যোগ দেন ফাহিম মুনএম। এর আগে তিনি ডেইলি স্টার পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া তিনি সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ফাহিম মুনএম দৈনিক সংবাদ, মর্নিং সান ও বার্তা সংস্থা ইউএনবিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে প্রেরিত এক শোকবার্তায় বলা হয়েছে, সৈয়দ ফাহিম ১৯৫৩ সালের ৪ঠা জুলাই ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা সৈয়দ নুরউদ্দিন জাতীয় প্রেস ক্লাবের আজীবন সদস্য এবং দৈনিক সংবাদ-এর নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর শেষে তিনি ১৯৮২ সালের জানুয়ারিতে দৈনিক সংবাদ-এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হিসেবে সাংবাদিকতায় যোগ দেন। তিনি ডেইলি স্টার পত্রিকা ও বার্তা সংস্থা ইউএনবি’র ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ছিলেন। তিনি জাতীয় প্রেস ক্লাবের স্থায়ী সদস্য ছিলেন।
ফাহিম মুনএম-এর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, চিফ হুইপ আ.স.ম ফিরোজ, তথ্য সচিব মুরতুজা আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আআমস আরেফিন সিদ্দিক, জাতীয় প্রেস ক্লাব ব্যবস্থাপনা কমিটি সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী। এছাড়াও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমদ ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ফাহিম মুনএমের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
পৃথক এক শোকবার্তায় স্পিকার বলেন, সৈয়দ ফাহিম মুনএমের মৃত্যুতে দেশের গণমাধ্যমের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। দেশ একজন বিশিষ্ট সাংবাদিককে হারালো। স্পিকার ফাহিম মুনএমের রুহের মাগফিরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। অপর এক শোকবার্তায় সাবেক প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমদ বলেন, ২০০৭ সালে যখন তাকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব পদে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়, তখন তিনি গভীর দেশপ্রেম ও কর্মনিষ্ঠার সঙ্গে নিজের দায়িত্ব পালন করেন। সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকের বাকস্বাধীনতার ব্যাপারে তার ছিল প্রবল উৎসাহ, যে উৎসাহে উপকৃত হয়েছিলো পুরো দেশ ও জাতি। তিনি আরো বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি সবসময়ই ফাহিম মুনএমকে একজন সৎ এবং উন্মুক্তমনা মানুষ হিসেবে দেখেছি। সকল পরিস্থিতিকেই তিনি ধৈর্যশীল দৃষ্টিতে দেখতেন; সবসময়ই তার কথায় থাকতো মার্জিত হাস্যরসের ছোঁয়া। বিএনপি মহাসচিব শোকবার্তায় বলেন, সৈয়দ ফাহিম মুনএম সাংবাদিকতা জীবনে তার পেশায় রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। সাংবাদিকতা জীবনে তিনি স্বাধীন সাংবাদিকতার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি একজন কর্মনিষ্ঠ ও সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে সবার কাছে অত্যন্ত সমাদৃত ছিলেন।