মঙ্গলবার বিচারপতি এম আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করেন। এই বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি শাহীনুর ইসলাম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদী।
গত ১১ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তিন আসামির উপস্থিতিতে উভয় পক্ষের সাক্ষ্য নেওয়ার পর চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন।
আসামিরা হলেন- হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার খাগাউড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মহিবুর রহমান বড় মিয়া, তার ছোট ভাই বর্তমান চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়া ও তাদের চাচাতো ভাই আবদুর রাজ্জাক। এই তিন ‘রাজাকারের’ বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, নির্যাতন, অপহরণ, ধর্ষণ, অগি্নসংযোগসহ চার ধরনের অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর এ তিন আসামির বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগ আমলে নিয়ে চার্জ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় বানিয়াচং উপজেলায় অভিযান চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধা আকল আলী ও রজব আলীকে হত্যা করে লাশ গুম, পাকিস্তানি বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মেজর জেনারেল এম এ রবের বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটতরাজ ও অগ্নিনসংযোগ করা হয়। একই দিন খাগাউড়া এলাকার উত্তরপাড়ায় আসামিদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি বাহিনী মঞ্জব আলীর স্ত্রী ও আওলাদ ওরফে আল্লাত মিয়ার ছোট বোনকে ধর্ষণ (পরে বিষপানে আত্মহত্যা করেন) এবং একাত্তরের ভাদ্র মাসে আনছার আলীকে বাড়ি থেকে রাজাকার ক্যাম্পে ধরে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে পঙ্গু করে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়।
এ ঘটনায় ২০০৯ সালে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আকল মিয়ার স্ত্রী ভিংরাজ বিবি হবিগঞ্জের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ তিনজনসহ মোট ছয়জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলা করেন। পরে মামলাটি ঢাকায় স্থানান্তর করা হলে তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ২৮ এপ্রিল ট্রাইব্যুনালে প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত সংস্থা।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, আসামিদের বড় ভাই কলমধর ছিলেন খাগাউড়া ইউনিয়ন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান এবং ছোট ভাই মোস্তফা রাজাকার কমান্ডার ছিলেন। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় খাগাউড়া গ্রামে নেজামে ইসলামের এম এন এ সৈয়দ কামরুল আহসানের বাড়িতে রাজাকার ক্যাম্প ও টর্চার সেল ছিল। আসামিরা মুক্তিকামী বাঙালিদের ওই ক্যাম্পে এনে নির্যাতন করত।
এর আগে প্রসিকিউশনের এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল-২ দুই সহোদরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। ওই দিন রাতেই বানিয়াচংয়ের নবীগঞ্জ থেকে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ। ১৯ মে মহিবুর-মুজিবুরের চাচাতো ভাই রাজ্জাককে মৌলভীবাজারের আথানগিরি পাহাড় থেকে গ্রেফতার করা হয়। আসামিরা বর্তমানে কারাগারে।