ঢাকা: প্রবল ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও তীব্র যানজটের কারণে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নিয়মিত আসতে পারেন না বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তবে এখন থেকে মাঝে মাঝে আসার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে মাসে অন্তত দুই-তিনবার আসার জন্য কার্যালয়ের স্টাফরা অনুরোধ করলে এমন কথা বলেন খালেদা জিয়া।
সোমবার (৩০ মে) বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৫তম শাহাদাৎ বার্ষিকীতে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে খাবার বিতরণকালে বিকেল ৫টার দিকে বিশ্রামের জন্য নয়াপল্টন কার্যালয়ে আসেন খালেদা জিয়া। সেখানে দ্বিতীয়তলায় তার জন্য নির্ধারিত কক্ষে যান। সেখানেই দুপুরের খাবার খান।
এসময় তার কক্ষে উপস্থিত ছিলেন- মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম-মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, অর্থনীতি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালাম প্রমুখ।
চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, খালেদা জিয়া তার কক্ষেই আছরের নামাজ আদায় করেন।
কক্ষে অবস্থানকালে কার্যালয়ের আট দশ জন স্টাফ তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এসময় তারা নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে চেয়ারপারসনকে মাসে অন্তত দুই-তিনবার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসার অনুরোধ জানান।
খালেদা জিয়া তখন বলেন, আমিও এখানে নিয়মিত আসতে চাই। কিন্তু তীব্র যানজটের কারণে সময়মতো পৌঁছাতে পারব না বিধায় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আসতে পারি না। তবে মাঝে মাঝে আসার চেষ্টা করব। এসময় কার্যালয়ের স্টাফদের খোঁজ-খবর নেন তিনি।
সবার সঙ্গে খোঁজখবর নেয়া শেষে দীর্ঘ প্রায় এক ঘণ্টা পর নিচে নেমে কার্যালয়ের নিচতলায় ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধন এবং সংগঠনটির ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে কয়েকজন রোগীর মাঝে বিনা মূল্যে ওষুধ বিতরণ করেন খালেদা জিয়া। এরপর কার্যালয়ের সামনে ছাত্রদল ঢাকা মহানগর পূর্বের উদ্যোগে দুস্থদের মাঝে খাবার ও বস্ত্র বিতরণ শেষে ফের শাহজাহানপুর এলাকায় খাবার বিতরণ কর্মসূচিতে অংশ নেন।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মানিক মিয়া এভিনিউয়ের টিএন্ডটি মাঠ থেকে খাবার বিতরণের কর্মসূচি শুরু করেন বেগম জিয়া। পর্যায়ক্রমে রাজধানীর ত্রিশটি স্থানে খাবার বিতরণ করে রাত ৯টার দিকে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ফিরে যান। সর্বশেষ বাংলামোটর এলাকায় খাবার বিতরণ করেন খালেদা জিয়া।
বেলা ১০টা ৫৫ মিনিটে গুলশানের বাসভবন থেকে রওনা হয়ে ১১টা ২৫ মিনিটের দিকে শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। জিয়ার ৩৫তম শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে তার মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা তার সঙ্গে ছিলেন।
উল্লেখ্য, সর্বশেষ গত পহেলা বৈশাখে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাসাসের কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তবে তখন কার্যালয়ে তার কক্ষে যাননি। এর আগে ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারির সমাবেশকে কেন্দ্র করে তার কক্ষটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছিল। কিন্তু ৩ জানুয়ারি রাতে গুলশান কার্যালয়ে তাকে অবরুদ্ধ করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। পরে আর নয়াপল্টন কার্যালয়ে যেতে পারেননি তিনি।
তবে ২০১৩ সালের মার্চে নয়াপল্টন থেকে বিএনপির দেড় শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করেছিল পুলিশ। ভাঙচুর করা হয়েছিল কার্যালয়। এরপর কার্যালয় পরিদর্শনে গিয়েছিলেন তিনি।
এরপর সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২২ এপ্রিল ঢাকা (উত্তর-দক্ষিণ) সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে প্রচারণাকালে বাংলামোটরে তার গাড়িবহরে হামলা হলে নয়াপল্টন কার্যালয়ে আশ্রয় নেন খালেদা জিয়া।