সাইবার নিরাপত্তা যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক কমছে

Slider অর্থ ও বাণিজ্য
untitled-4_215552
আসন্ন ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে আমদানি পর্যায়ে বেশ কিছু পণ্যের শুল্কহারে পরিবর্তন আসছে। স্থানীয় পর্যায়ে কিছু পণ্যের নির্ধারিত শুল্ক (ট্যারিফ) বাড়ানো ও কমানোর প্রস্তাব করা হচ্ছে। এ ছাড়া দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় শুল্কস্তরে পরিবর্তন আসছে।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, নতুন বাজেটে সাইবার নিরাপত্তায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্কহার কমানো হচ্ছে। চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। কমানো হচ্ছে হাইব্রিড গাড়ির শুল্কহার। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে কম্পিউটার যন্ত্রাংশে আমদানি শুল্ক কমছে। কমানো হচ্ছে মোটরসাইকেল তৈরিতে ব্যবহৃত খুচরা যন্ত্রাংশ।

তবে আমদানি করা চালের শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য পণ্যের বিদ্যমান শুল্কমুক্ত সুবিধা আগামী বাজেটেও অব্যাহত থাকছে। স্থানীয় বস্ত্রশিল্পের বিকাশ অব্যাহত রাখতে বেশ কিছু কেমিক্যাল পণ্যের শুল্কহার কমানো হচ্ছে। গণপরিবহনের সুবিধা বিবেচনা করে যানবাহনে ব্যবহৃত টায়ার-টিউবের শুল্কহার কমানোর প্রস্তাব করা হচ্ছে। গ্যাস, বিদ্যুৎ, রাস্তাসহ ভৌত অবকাঠামো খাতে বিদ্যমান শুল্ক সুবিধা আগামী বাজেটে অব্যাহত থাকছে। পোশাক শিল্পের কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে গার্মেন্ট কারখানায় ব্যবহৃত অগি্ননির্বাপক যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক রেয়াতি সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করা হচ্ছে। এসব পণ্যে শুল্কছাড়ের পাশাপাশি বেশ কিছু পণ্যে শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হচ্ছে। আসন্ন বাজেটে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তার বাজেট বক্তৃতায় এ বিষয়ে ঘোষণা করতে পারেন।

সাইবার নিরাপত্তায় ব্যবহৃত বর্তমানে সার্ভার র‌্যাক, ওয়াইফাই, ওয়াইম্যাক্স ল্যান্ড কার্ড, অ্যাকসেস পয়েন্ট এবং ফায়ারওয়াল (সিকিউরিটি সফটওয়্যার) আমদানিতে শুল্কহার ১০ থেকে ২৫ শতাংশ। সূত্র জানায়, আগামী বাজেটে ওই সব পণ্যের ওপর শুল্ক গড়ে ৫ থেকে ১০ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব থাকছে। শুল্কহারের এই প্রস্তাব কার্যকর হলে ওই সব পণ্যের দাম কমবে এবং সহজলভ্য হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক রিজার্ভ চুরির ঘটনায় সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে এসেছে। সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, বিভিন্ন সংস্থা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাইবার নিরাপত্তা দুর্বলের বিষয়টিও এতে উঠে এসেছে। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সাইবার নিরাপত্তা সরঞ্জাম সহজলভ্য করার লক্ষ্যে নতুন বাজেটে এসব পণ্যের শুল্কহার কমানোর প্রস্তাব করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাইবার নিরাপত্তা জোরদারের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। এ জন্য দক্ষ মানবসম্পদের পাশাপাশি যন্ত্রপাতি প্রয়োজন। এখানে দক্ষ লোক পাওয়া গেলেও যন্ত্রপাতি এখনও আমদানিনির্ভর। এ কারণে সাইবার নিরাপত্তায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির ওপর শুল্ক কমানোর বিষয়ে সরকার ইতিবাচক। এর প্রতিফলন বাজেটে থাকতে পারে।

দেশে সংযোজিত মোটরসাইকেলের শুল্কহারে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এ শিল্পের যন্ত্রাংশ ও যন্ত্রপাতি আমদানিতে বিদ্যমান ৪৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ২০ করার প্রস্তাব করা হচ্ছে। ফলে কমতে পারে দেশে সংযোজিত মোটরসাইকেলের দাম। পরিবেশবান্ধব গাড়ি ব্যবহারে উৎসাহ বাড়াতে হাইব্রিড গাড়ির শুল্ক কমানোর পাশাপাশি গণপরিবহন হিউম্যানহলার তৈরির যন্ত্রপাতি, গাড়ির গ্যাস সিলিন্ডারের শুল্ক কমছে।

বর্তমানে চাল আমদানিতে শুল্ক ৫ শতাংশ। দেশীয় কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণে চাল আমদানি শুল্কহার ৫ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হচ্ছে। বর্তমানে কম্পিউটার যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্কহার ২৫ শতাংশ। এই শুল্কহার কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে।

বাজেটে শুল্ক সুবিধা পাচ্ছে ফায়ার ডোর, কাগজ শিল্পের কাঁচামাল গ্গ্নোসি স্ট্রেচ, প্লাস্টিক ও ফাইবারের তৈরি গ্যাস সিলিন্ডার। বর্তমানে এসব পণ্যের শুল্কহার ২৫ শতাংশ। আগামী বাজেটে এ শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া মরদেহ সংরক্ষণে ব্যবহৃত মরচুয়ারি আমদানিতে ৩০ শতাংশ শুল্কের পুরোটাই প্রত্যাহার হচ্ছে। জানা গেছে, বাজেটে সার্ভার র‌্যাকের আমদানি শুল্ক ১০ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ওয়াইফাই এবং ওয়াইম্যাক্স ল্যান্ড কার্ড, অ্যাকসেস পয়েন্ট এবং ফায়ারওয়ালের আমদানি শুল্ক ২৫ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে।

দেশীয় প্রকাশনা শিল্প রক্ষায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক আমদানিতে শুল্ক ১০ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হচ্ছে। শিশুদের ছবি আঁকার বইয়ের আমদানি শুল্ক ৫ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে।

আসন্ন নতুন অর্থবছরের বাজেটে সিমকার্ড, ভিসাকার্ড, মাস্টারকার্ড এবং স্মার্টকার্ডের কাঁচামালের ওপর শুল্ক ১০ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব থাকছে। দেশি শিল্পের সুবিধার্থে সিমকার্ড এবং স্মার্টকার্ড তৈরির কাঁচামাল স্ক্র্যাচ অব লেভেল এবং কো-পলিমার কোটেড অ্যালুমিনিয়াম টেপের আমদানি শুল্ক ২৫ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হচ্ছে। পাশাপাশি ফিঙ্গার প্রিন্ট স্ক্যানার, বায়োমেট্রিক স্ক্যানার যন্ত্রের পৃথক শুল্ক শ্রেণীকরণ (এইচ এস কোড) সৃষ্টি করে আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হচ্ছে। তবে কেবল প্রস্তুতকারী দেশি প্রতিষ্ঠান রক্ষায় ফাইবার অপটিক কেবলের আমদানি শুল্ক ১০ থেকে বৃদ্ধি করে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হবে। জনসাধারণের জন্য ক্ষতিকারক বিবেচনায় তামাক ও তামাকজাত পণ্য প্রস্তুতকারী যন্ত্রপাতিতে আমদানি শুল্ক ১ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *