ঢাকা : গেলবার হজের সময় মিনায় পদদলনে প্রায় হাজার হজযাত্রীর মৃত্যুর ‘ইস্যু’ টেনে আরো ‘কিছু শর্তে’ বনাবনি না হওয়ায় হজ বর্জন করেছে ইরান। তিন দশকের মধ্যে এবারই প্রথম হজ বয়কট করতে যাচ্ছে ইরান।
দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ‘সৌদি সরকারের চলমান নাশকতার’ প্রসঙ্গ উল্লেখ বলা হয়, ‘আমরা ঘোষণা করছি, ইরানের হজযাত্রীরা এবছর হজে যাচ্ছেন না। এর জন্য সৌদি আরব সরকার দায়ী।’ অন্যদিকে ইরানের নেয়া এই সিদ্ধান্তের দায় অস্বীকার করেছে সৌদি আরব।
রোববার (২৯ মে) ব্রিটেন ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম রয়টার্সের এক খবরে ইরানের সংস্কৃতিবিষয়কমন্ত্রী আলি জান্নাতির বরাত দিয়ে জানানো হয়, গত বছর সৌদি সরকারের হজ ব্যবস্থাপনা এবং ইরান ও অন্যান্য দেশের নিহত হজযাত্রীদের যন্ত্রণার কথা বিবেচনা করে ইরান এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জান্নাতি বলেন, ‘আমাদের কাছে হজযাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
অবশ্য এজন্য দায় অস্বীকার করে সৌদি আরব বলছে, হজের সময় বিক্ষোভ করার অধিকারসহ কিছু বিশেষ সুবিধা চেয়েছিল ইরান, যা গ্রহণযোগ্য মনে করেনি দেশটি। আর সেসব না দেয়াতেই ইরান ঐ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবদেল আল যুবায়ের বিবিসিকে বলেছেন, এবছর হজ বিষয়ক চুক্তিতে সই করার সময় ইরানিরা কিছু বাড়তি সুবিধা চাইছিল, যার মধ্যে রয়েছে হজের সময় কিছু বিক্ষোভ অনুষ্ঠান করার অনুমতি।
গত জানুয়ারিতে সৌদি আরবে এক শিয়া নেতাকে ফাঁসি দেয়ার প্রতিবাদে ব্রিটেনে সৌদি দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ
কিন্তু সে অনুমতি দিলে তা হজের সময় বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে, এই যুক্তি মানা করা হয়েছে। সেজন্যই ইরান বলছে এবার হজ করতে তারা তাদের নাগরিকদের পাঠাবে না। এছাড়া ঐ অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্য ইরানকে দায়ী করেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সাম্প্রতিক সময়ে নানা ঘটনায় দুদেশের সম্পর্কে অবনতি ঘটেছে। এর আগে গত বছরও হজ পালনের সময় বহু মানুষের মৃত্যুর ঘটনাতে শত শত ইরানিও মারা গিয়েছিল, কিন্তু সে ঘটনায় সৌদি কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করে তীব্র সমালোচনা করেছিলো ইরান।
এরপর, গত জানুয়ারিতে সৌদি আরবে এক শিয়া নেতাকে ফাঁসি দেয়ার প্রতিক্রিয়ায় তেহরানে সৌদি দূতাবাসে আগুন দেয়ার ঘটনার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন রয়েছে। সিরিয়া সঙ্কটসহ মধ্যপ্রাচ্যের নানা বিষয়েও দেশ দুটিকে পরস্পরবিরোধী ভূমিকায় অবস্থান নেয়।
এর মধ্যেই হজের বিষয়ে একমত হতে ইরানের হজ ও তীর্থযাত্রা সংস্থার একটি প্রতিনিধি দল সৌদি আরবের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে রিয়াদে যায়। তবে ইরানের কূটনীতিকরা হজের বিষয়ে সমঝোতায় উপনীত হতে ব্যর্থ হয়ে গত শুক্রবার দেশে ফিরে যায় বলে সৌদি আরবের গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়। এরপর দুদিন বাদেই আনুষ্ঠানিক বিবৃতি এল।
ইরানের সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেছেন, ‘ইরানিরা যাতে এবার হজে না যায়, সেজন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবেই সব কাজ করেছে সৌদি আরব।’
সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবাইর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘ধর্মীয় আচার পালনে কারও জন্য কোনো বাধা সৌদি আরব দেয় না। ইরান সমঝোতায় আসতে চায়নি, তারা হজের সময় বিক্ষোভের অনুমতি দেয়ার দাবি জানাচ্ছিল। কিন্তু এটা হজে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে, যা কোনোভাবে অনুমোদনযোগ্য নয়।’
ইরানের হজ বর্জনের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগেও দেশটি তিন বছর হজ বর্জন করেছিল। ১৯৮৭ সালে মক্কায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলবিরোধী মিছিলে সৌদি নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে ৪০২ জন হজযাত্রী প্রাণ হারালে পরবর্তী তিন বছর ইরানিরা হজে যায়নি। তখন নিহত অধিকাংশই ছিলেন ইরানের নাগরিক।
এদিকে গত বছর হজের সময় মক্কায় পদদলিত হয়ে কয়েকশ লোক হাজি নিহত হয়। আট মাস পেরিয়ে গেলেও তদন্ত প্রতিবেদন এখনও প্রকাশ করেনি সৌদি সরকার। নিহতদের মধ্যে ইরানের ৪৬০ জন হাজি রয়েছে বলেও দাবি তাদের। সৌদি সরকার ওই ঘটনার তদন্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ ইরানের।