দাম বাড়ার শঙ্কা নেই ভোগ্যপণ্যে ঠাসা বন্দর

Slider অর্থ ও বাণিজ্য
port-ctg_215386
রমজানের পণ্যে সয়লাব হয়ে গেছে চট্টগ্রাম বন্দর। এ মুহূর্তে প্রায় ১০ লাখ টন ভোগ্যপণ্য নিয়ে সাগরে ভাসছে ১৮টি জাহাজ। এর মধ্যে ভোজ্যতেলের জাহাজ আছে চারটি। চিনি, ডালসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য বোঝাই জাহাজ রয়েছে ১৪টি। রমজানের আগে ভোগ্যপণ্য নিয়ে আরও ১৫টি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসার কথা। রমজানের বাজারে এসব পণ্যের বিপণন শুরু হলে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, বাজার তদারকি হলে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ার কোনো শঙ্কা নেই।

চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘রমজানকে কেন্দ্র করে বিপুল পরিমাণ ভোগ্যপণ্য আসছে চট্টগ্রাম বন্দরে। গতবারের তুলনায় এবার আমদানিও অনেক বেশি। যে পরিমাণ পণ্য আমদানি হয়েছে তাতে কোনো পণ্যেরই দাম বাড়ার কথা নয়। আন্তর্জাতিক বাজারেও বেশিরভাগ পণ্যের দাম এবারে নিম্নমুখী ছিল।’ খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহমদ বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরে এবার রেকর্ড পরিমাণ ভোগ্যপণ্য এসেছে। মনিটরিং জোরদার করা হলে সব পণ্যের দাম নাগালের মধ্যেই থাকবে। পাইকারি ও খুচরা বাজারে যাতে দামের ব্যবধান বেশি না হয় সে ব্যাপারে বাজার তদারকি সংস্থাকে খেয়াল রাখতে হবে।’

১৮ জাহাজে ভাসছে ১০ লাখ টন পণ্য: বন্দরের বার্থিং লিস্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ৫৩ হাজার ৪৭৫ টন সয়াবিন নিয়ে জাহাজ ‘ইলং সান’, ৫০ হাজার টন গম নিয়ে ‘এজিলস বি’, ৫৬ হাজার ৯০০ টন গম নিয়ে ‘এনজেলা’, ৫৭ হাজার ৭৫০ টন গম নিয়ে ‘নিমিয়া’, ৫২ হাজার ৩৫০ টন গম নিয়ে ‘ওশান গ্গ্নোরি’, ১৫ হাজার ৫০০ টন ক্রুড সয়াবিন অয়েল নিয়ে ‘আলপিন ম্যাজিক’, ৯২ হাজার ৮০৬ টন ক্রুড অয়েল নিয়ে ‘ওমেরা কুইন’, ৪৮ হাজার ৩০০ টন গম নিয়ে ‘ইকুইনক্স ডন’, ৫০ হাজার ২৫০ টন গম নিয়ে ‘ইয়াসা আনসাল সুনার’, ৩০ হাজার টন ক্রুড সয়াবিন অয়েল নিয়ে ‘পোর্ট ইউনিয়ন’, ৫১ হাজার ২৮০ টন মটর নিয়ে ‘এমভি লারা’, ২১ হাজার ৫০০ টন ক্রুড সয়াবিন অয়েল নিয়ে ‘এফডি সি উইস’, ৪৮ হাজার ৩৩৪ টন গম নিয়ে ‘থাসোস’, ৫৬ হাজার ৪৫১ টন গম নিয়ে ‘ভিক্টোরিয়া মে’, ৩০ হাজার ৯৯৯ টন গম নিয়ে ‘থর উইন্ড’, ৩০ হাজার ১০০ টন গম নিয়ে ‘মারাঠা প্রুডেন্স’, ২০ হাজার টন মটর ও ৩৩ হাজার টন গম নিয়ে ‘ইয়াসা ইমিরান’ জাহাজ বন্দরে নোঙর করে আছে।

আসছে আরও ১৫ জাহাজ: রমজানের আগে বন্দরে এসে নোঙর করবে ভোগ্যপণ্য বোঝাই আরও অন্তত ১৫টি জাহাজ। এর মধ্যে ৪৫ হাজার টন চিনির কাঁচামাল নিয়ে ‘এসটিএইচ নিউইয়র্ক’, ৫৪ হাজার ৭৫০ টন গম নিয়ে ‘স্পার ভেগা’, ৩২ হাজার ৩৫০ টন গম নিয়ে ‘ডেনসা সিল’, ৫৩ হাজার ৯৬৩ টন গম নিয়ে ‘মাইকনস সিস’, ৫৪ হাজার ১০০ টন গম নিয়ে ‘জিয়ারান’, ৫৩ হাজার ১১৯ টন সয়াবিন নিয়ে ‘ফরচুন বার্ড’, ৫৭ হাজার ৮১৮ টন সয়াবিন নিয়ে ‘নটিক্যাল হিলারি’, ৫৫ হাজার টন চিনির কাঁচামাল নিয়ে ‘বাল্ক এটাকামা’ ও ৪৬ হাজার ২৬৮ টন গম নিয়ে ‘কারাগেক’ নামের জাহাজ নোঙর করার কথা রয়েছে।

টিসিবি খালাস করছে ১৫০০ টন ছোলা: রমজানে ছোলার দামে লাগাম টানতে অস্ট্রেলিয়া থেকে দেড় হাজার টন ছোলা আমদানি করেছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। নগরীর পতেঙ্গার ইনকনট্রেন্ড কনটেইনার ডিপোতে খালাস হচ্ছে এসব ছোলা। প্রতিদিন ৩৫-৪০টি ট্রাকে বোঝাই করে এসব ছোলা পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা টিসিবির গুদামে। টিসিবির প্রধান কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির জানান, গতকাল রোববার থেকে সারাদেশে ১৭৯টি ট্রাকে ছোলা, দেশি চিনি, মসুর ডাল, সয়াবিন তেল (পেট বোতল) ও খেজুর বিক্রি শুরু করেছে টিসিবি। এর মধ্যে ঢাকায় ৩২টি ট্রাকে, চট্টগ্রামে ১০টি, অন্য বিভাগীয় শহরে ৫টি ও জেলা সদরে ২টি করে ট্রাকে এসব পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। ট্রাক থেকে একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ ৪ কেজি চিনি, ২ কেজি ডাল, ৫ লিটার সয়াবিন, ৫ কেজি ছোলা ও ১ কেজি খেজুর কিনতে পারবেন। কেজিপ্রতি চিনি ৪৮ টাকা, ডাল ৯০ টাকা, তেল ৮০ টাকা, ছোলা ৭০ টাকা ও খেজুর ৯০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

রমজানের বেচাকেনায় সরগরম পাইকারি বাজার: পাইকারি মোকাম চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে পুরোদমে চলছে রমজানের বেচাকেনা। শবেবরাত থেকে পরবর্তী ১৫ দিন পাইকারি বাজার থেকে পণ্য কিনে রমজানের জন্য মজুদ করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। এজন্য প্রধান পাইকারি মোকামগুলো এখন সরগরম রমজানের বেচাকেনায়। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ থেকে ভোগ্যপণ্য যাচ্ছে কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, চাঁদপুর ও ব্রা?হ্মণবাড়িয়ার খুচরা দোকানগুলোয়। প্রতিদিন শত শত ট্রাকে করে খাতুনগঞ্জ থেকে ডাল, তেল, ছোলাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্য যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

খাতুনগঞ্জের মেসার্স হোসাইন অ্যান্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী মো. ইব্রাহিম বলেন, ‘খাতুনগঞ্জে রমজানের বেচাকেনা পুরোদমে চলছে। এখান থেকে পণ্য নিয়ে দোকান সাজাচ্ছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। রমজানের শুরুতে খুচরা দোকানে বেচাকেনা শুরু হবে। পর্যাপ্ত পণ্য থাকায় পাইকারি মোকামে বেচাকেনায় কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *