ফাহিম হোসেন/সমুদ্র হক, গাজীপুর থেকে ফিরে: ১৯৭১ সালে প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ গাজীপুরে হওয়ার কারণে গাজীপুর জেলার মানুষ সংস্কৃতিগত ভাবেই রাজনীতি প্রিয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তারা রাজনীতিতে বেশী সক্রিয়। ফলে মুক্তিযোদ্ধারাও বিভিন্ন দলে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি সহ নানা দলে অনেক বড় বড় পদেও আছেন গাজীপুরের মুক্তিযোদ্ধারা।
বাংলাদেশের ইতিহাসে স্থান করেছেন এমন অনেক বড় মাপের রাজনৈতিক নেতার জন্ম গাজীপুরে। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমেদ সহ স্পীকার, ও একাধিক মন্ত্রী হয়েছেন গাজীপুরের ছেলেরা। বিভিন্ন দলে মুক্তিযোদ্ধা ও বড় মাপের নেতারা নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে নানা কৌশল অবলম্বন করেছেন সঙ্গত;করণে। তবে কিছু কৌশল রাজনীতি বিদদের ভুমিকাকে প্রশ্ন বিদ্ধ করেছে ও এখনো করছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিতে একাধিক নেতা তাদের শক্তি বৃদ্ধির জন্য রাজনৈতিক ক্যাডারের জন্ম দিয়েছেন। এ সকল ক্যাডাররা তাদের নেতাদের পক্ষ হয়ে কাজ করায় কিছু কিছু নেতা জনগনের কাছে তাদের গ্রহনযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধও করেছেন। কারণ হিসেবে পাওয়া গেছে, ওই সকল ক্যাডাররা জমি দখল, চাঁদাবাজী, ঝুট ব্যবসা ও মাদক ব্যবসা সহ নানা ধরণের অপরাধে জড়িয়ে পড়ায় ওই দায়ভার পড়েছে ওই নেতাদের উপর। ফলে কিছু কিছু বড় মাপের নেতা চাঁদাবাজদের গডফাদার হিসেবেও পরিচিত আছেন। নিরাপত্তা শঙ্কায় ওই সকল নেতাদের চরিত্র জনসমক্ষে তেমন ভাবে কেউ প্রকাশও করছেন না।
সূত্রমতে, গাজীপুর জেলার ৫টি সংসদীয় আসনে প্রধান তিন দলের প্রায় দুই শতাধিক ক্যাডার রয়েছেন যারা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে নিজের আঁখের গোচাতে ব্যস্ত রয়েছেন। তারা পরোক্ষভাবে মন্ত্রী এমপিদের লোক বলে পরিচিত । এ ছাড়াও এমপির ছেলে ও ভাইয় পর্যন্ত গডফাদারের ভূমিকায় রয়েছেন।
এই সকল ক্যাডাররা নিজেদের অপরাধ আঁড়াল করতে কতিপয় সুবিধাভোগী সাংবাদিকদেরও ব্যবহার করছেন। রাজনৈতিক নেতাদের ক্ষমতার দাপটে গাজীপুরে হলুদ সাংবাদিকের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। হলুদ সাবাদিক ছাড়াও প্রকৃত একাধিক সাংবাদিক ক্ষমতাসীন দলের হয়ে দালালী করায় প্রকৃত সাংবাদিকতা মুখ থুবড়ে পড়েছে। যে দল ক্ষমতায় আসে তারা ওই দলের সাংবাদিক হয়ে যান এমন সাংবাদিকের সংখ্যা গাজীপুরে অনেক।
গাজীপুরের ইতিহাস বলছে, বিএনপির সময় যে সকল সাংবাদিক দলীয় সাংবাদিক হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন এখন তারা আওয়ামীলীগের খাস লোক বনে রয়েছেন। প্রশাসনে গুপ্টি মেরে থাকা ওই সকল তথাকথিত সাংবাদিক বর্তমানে নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। অবৈধ পথে অর্থ উপার্জনের জন্য তারা একটি করে মিডিয়া সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। কোন ঘটনা ঘটলে ওই সিন্ডিকেট সংবাদ চাপা দিতে তৎপর হয়ে উঠেন। ফলে গাজীপুরে সংঘটিত সকল অপরাধ মিডিয়ায় স্থান পায় না। এতে প্রশাসনও একটি সুবিধা পেয়ে যাওয়ায় ন্যায় বিচার বাঁধা গ্রস্থ হয়ে যায়।
সূত্র জানায়, গাজীপুরে বিএনপির সময় যে সকল সাংবাদিক তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ লোক হিসেবে সকল মহলে পরিচিত ছিলেন ও বিএনপির আমলে বিভিন্ন মন্ত্রী ও মন্ত্রীর ছেলেরা যাদের নিকট আসতেন আজ তারা আওয়ামীলীগের বড় সাংবাদিক। বিএনপির আমলের অনেক সাংবাদিক এখন আওয়ামীলীগের তত্ত্বাবধানে সাংবাদিক সংগঠন গুলোর পদও বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় পেয়ে যান। বিএনপি আমলের মন্ত্রী ও এমপিদের ঘনিষ্ট সাংবাদিক এখন আওয়ামীলীগের মন্ত্রী ও এমপিদের ঘনিষ্ট হয়ে গেছেন। মিডিয়ায় এই ধরণের ক্যু হওয়ার কারণে গাজীপুরের সাধারণ মানুষ এখন গনমাধ্যমের সুবিধা থেকে বঞ্চিত । আর নানা ভাবে ইন্দন দিয়ে প্রশাসন নিজেদের সুবিধার জন্য ওই সকল সুবিধাভোগী সাংবাদিকদের প্রয়োজনে সাংবাদিকদের মধ্যে বিরোধ লাগিয়ে রাখেন। ফলে গাজীপুর জেলায় নীরব মিডিয়া ক্যু এখন স্থায়ী হয়ে যাচ্ছে। এর প্রতিকার যারা করবেন তারা নিজেদের সুবিধা নিশ্চিত করতে নীরব সমর্থন করে আছেন। ফলে গাজীপুর জেলায় দেদারছে চলছে অপরাধ। আর তা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এই সকল ঘটনায় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতারাও নীরব রয়েছেন নিজেদের প্রভাবকে টিকিয়ে রাখার জন্য।
চলবে–