ঢাকা; আসামির বয়স পঁয়ত্রিশ বছর। নাম মো. রিপন। বৃহস্পতিবার রাতে ১৫টি ইয়াবা বড়িসহ তাঁকে গ্রেপ্তার করে রাজধানীর শাহবাগ থানার পুলিশ। রাতে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। শুক্রবার সকালে সাত দিন রিমান্ডে নেওয়ার জন্য তাঁকে ঢাকার আদালতে নেওয়া হয়। বিকেলে রিমান্ড শুনানির জন্য তোলা হয় এজলাসে। আসামির কাঠগড়ায় বিচারকের সামনে অচেতন হয়ে লুটিয়ে পড়েন আসামি রিপন।
এই অবস্থায় রিপনকে নেওয়া হয় পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ওই হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক রিপনকে দেখার পর পুলিশের উদ্দেশে বলেন, তাঁর (রিপন) অবস্থা খুব খারাপ। তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হোক। ব্যবস্থাপত্রে চিকিৎসক লিখেছেন, ‘রোগী অচেতন হয়ে পড়েছেন। রক্তচাপ কমে গেছে। তাঁকে দ্রুত নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি করা দরকার।’
পরে পুলিশ রিপনকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠায়। জানতে চাইলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক নেসার আলম প্রথম আলোকে বলেন, আসামি রিপন বর্তমানে কারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সরেজমিনে দেখা যায়, রিপনকে বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে ঢাকার দশ নম্বর মুখ্য মহানগর হাকিম জাকির হোসেন টিপুর আদালতের আসামির কাঠগড়ায় তোলা হয়। তখন সেখানে অন্যান্য মামলার আসামিও ছিল। বিচার কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর আসামির কাঠগড়ায় লুটিয়ে পড়েন রিপন। পরে আদালত পুলিশের কয়েকজন সদস্য প্রথমে তাঁর মুখে পানির ঝাপটা দেয়। চেতনা না ফেরায় দুজন পুলিশ সদস্য রিপনের হাত-পা ধরে লিফট দিয়ে নিচে নামান। পরে তাঁকে চ্যাংদোলা করে নেওয়া হয় ঢাকার সিএমএম আদালতের ফটকের সামনে। পাঁচ মিনিটের মতো সময় সেখানে তাঁকে মাটিতে রাখা হয়। পরে হাজতখানার পুলিশ একটি রিকশায় করে তাঁকে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়।
রিপন যখন পুরোপুরি অচেতন তখন সিএমএম কোর্টের সামনেই তাঁর হাতে পুলিশ হাতকড়া পরায়। রিকশাযোগে নিয়ে যাওয়ার সময়ও হাতে ছিল হাতকড়া। ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও তাঁর হাতে পরানো ছিল হাতকড়া। আদালতে রিপনের কোনো আত্মীয়স্বজনকে দেখা যায়নি। আদালতে ছিল না তাঁর কোনো আইনজীবীও।
রিপনের আত্মীয়স্বজনকে খবর দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ রইচ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আমি আজ সকালে মামলার দায়িত্বভার নিয়েছি। তাঁর সঙ্গে আমার কথাও হয়নি। তাঁর আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ হয়নি। আর রিপনকে সেগুনবাগিচার বারডেম হাসপাতালের সামনে থেকে রাত দশটায় গ্রেপ্তার করেন শাহবাগ থানার এসআই মাসুদ রানা। পরে তিনি বাদী হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেন।
জানতে চাইলে মাসুদ রানা প্রথম আলোকে বলেন, রিপনের কাছ থেকে পনেরোটি ইয়াবা পেয়েছি। তাঁর কোনো আত্মীয়স্বজন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। আদালতে দেওয়া প্রতিবেদনে শাহবাগ থানা-পুলিশ বলেছে, রিপনের বাবার নাম কবির হোসেন। সে যাত্রাবাড়ী কুতুবখালী দাগুখান স্কুলের পেছনের টিনশেডে ভাড়া বাসায় থাকে।
রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার ব্যাপারে তদন্ত কর্মকর্তা রইস হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি রিপনের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। অথচ রিমান্ডে নেওয়ার আবেদনে তিনি বলেছেন, আসামি একজন পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী। সে তোপখানা, সেগুনবাগিচা এলাকায় পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাদক ব্যবসা করে আসছে। আসামির কাছে আরও ইয়াবা আছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। মাদকদ্রব্য উদ্ধারের জন্য তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি। রিপন অচেতন হয়ে যাওয়ায় আদালত পুলিশের রিমান্ড আবেদন নাকচ করে দেন। মামলার বাদী মাসুদ রানা প্রথম আলোকে বলেন, তিনি রিপনকে রাতে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।
রিপনের অসুস্থতার বিষয় জানতে চাইলে এই মামলা সংশ্লিষ্ট শাহবাগ থানার এই দুই পুলিশ কর্মকর্তা দাবি করেন, তাঁরা রিপনকে কোনো প্রকারের নির্যাতন করেননি। রাতে-সকালে তাকে খাবার দেওয়া হয়েছে। আর শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা অপরাধী তাঁরা রিমান্ড শুনানির আগে এভাবে অচেতন হওয়ার ভান করে। রিপনের ক্ষেত্রেও বোধ হয় তাই হয়েছে। আবার নাও হতে পারে। রিপনকে থানায় নির্যাতন করা হলে আমি খবর পেতাম। রিপনকে থানায় পুলিশ নির্যাতন করেনি।