জনস্বার্থে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ক্ষমতা ‘বাড়ানো প্রয়োজন’

Slider জাতীয়
mobile-court-workshop_214774
আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও জনস্বার্থ রক্ষায় আইন সংশোধন করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের (মোবাইল কোর্ট) বিচারিক ক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা।

তারা বলেন, খাদ্যে ভেজালরোধ, মাদকের অপব্যবহার রোধ, ইভটিজিং প্রতিরোধ, পরিবেশ রক্ষা, অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ ইত্যাদি সামাজিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে মোবাইল কোর্ট ইতিমধ্যে একটি জনপ্রিয় এবং কার্যকর আইন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে এই আইনের কয়েকটি ধারা প্রয়োগ এবং ক্ষমতা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে। আইন সংশোধন করে এই বিভ্রান্তি দূর করে মোবাইল কোর্টকে আরও কার্যকর করতে হবে।

শুক্রবার রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে ‘মোবাইল কোর্ট পরিচালনা : জননিরাপত্তা ও সামাজিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণ’ শীর্ষক দিনব্যাপী এক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার হেলালুদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, বিচার বিভাগ-নির্বাহী বিভাগ কেউ কারও প্রতিপক্ষ নয়। এই দুটি বিভাগের সংশ্লিষ্টরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে জনগণের স্বার্থে কাজ করেন। জনগণের কাছে তারা উভয়ে দায়বদ্ধ। মোবাইল কোর্টকে আরও কার্যকর করতে আইন সংশোধন করা প্রয়োজন। এ জন্য সকলের মতামত গ্রহণের জন্য এই কর্মশালা আয়োজন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, জনস্বার্থে বিশ্বব্যাপী মোবাইল কোর্ট পরীক্ষিত। তাৎক্ষণিক বিচারের এই পদ্ধতি সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হলে দেশের প্রচলিত আদালতে মামলাজটও অনেকাংশে কমে আসবে।

ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় আয়োজিত কর্মশালায় আরও বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক,মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. শাহিদা আক্তার, বিয়াম ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক নুরুল ইসলাম, নরসিংদীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ রেহান উদ্দিন, বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পরিচালক এএইচএম আনোয়ার পাশা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব স্মৃতি রানী ঘরামী।

এ ছাড়াও কর্মশালায় মুক্ত আলোচনা পর্বে বক্তব্য দেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, ডিপিডিসি সচিব মুনীর চৌধুরি, সাবেক সচিব শাহজাহান আলী মোল্লা প্রমুখ।

কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. সুজায়েত উল্যা। কর্মশালায় জাতীয়, বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন সংস্থা ও দফতরের শতাধিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, গণমাধ্যম কর্মী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

মোবাইল কোর্টের গুরুত্ব তুলে ধরে বক্তারা বলেন, ফিলিপাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ই-মোবাইল কোর্টের জন্য অবশ্যকীয় উপকরণসহ সুসজ্জিত যানবাহন সহকারে পরিচালনা করা হয়। বাংলাদেশেও অনুরূপ মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য প্রথম পর্যায়ে বিভাগীয় সদর একটি করে তথ্য প্রযুক্তি সমৃদ্ধ প্রয়োজনীয় উপকরণসহ সজ্জিত যানবাহন সরবরাহ এবং উন্নত প্রযুক্তি সমৃদ্ধ টেকনিক্যাল ডিভাইস বিদেশ থেকে নিয়ে আসার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রতি অনুরোধ জানান বক্তারা।

এ ছাড়া যারা খাবারে ভেজাল মিশিয়ে মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছেন সেসব ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স বাতিলের পাশাপাশি তারা যাতে আর কখনও লাইসেন্স না পায়, সে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্যও পরামর্শ দেন বক্তারা।

আইন সংশোধনের পাশাপাশি বিভিন্ন উপাত্ত তুলে ধরে শাহিদা আক্তার বলেন, গত বছর মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৭৫৪ জনকে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে এবং ৩৭ কোটি ৩৭ লাখ ৮৮ হাজার ২৪৬ টাকা আদায় করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এ ছাড়া ৫৭ হাজার ১৫৭টি  মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে এক লাখ ৩৬ হাজার ৯২৭ টি মামলার নিষ্পত্তি করা হয়। তবে এই কোর্টকে আরও গতিশীল করার লক্ষ্যে  দেশের সকল জেলায় ই-মোবাইল কোর্ট চালুর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *