মালয়েশিয়ার একটি বন্দীশিবিরে আটক আছেন বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের শ’ শ’ অভিবাসন প্রত্যাশী। মানবপাচারের শিকার এ ব্যক্তিরা এক বছর আগে মালয়েশিয়ায় আটক হন। তাদেরকে সাগর থেকে প্রায় নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে উদ্ধার করে এই বন্দীশিবিরে রাখা হয়। এ খবর দিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।
খবরে বলা হয়েছে, মোট ৩৯০ জন বন্দীর মধ্যে ৩২৫ জন রোহিঙ্গা ও ৬৫ জন বাংলাদেশী। এরা গত এক বছর বন্দিজীবন কাটিয়েছেন। যদিও ২০১৫ সালের মে মাসে তাদের নামেমাত্র মুক্তি দেয়া হয়েছিল। আসছে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়টি মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গবেষণা আকারে প্রকাশ করবে।
গত বছর মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমাতে গিয়ে ছোট্ট নৌকায় করে শ্বাপদসংকুল সমুদ্র পথ পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করে বহু মানুষ। এদের বেশিরভাগই মিয়ানমারের নাগরিকত্ব বঞ্চিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষ। আছে বাংলাদেশের অভিবাসন প্রত্যাশীরাও। এদের অনেকেই সাগরপথে নৌকাডুবিতে বা না খেয়ে মারা যায়। অনেকের ভাগ্য আটকে যায় থাইল্যান্ড বা মালয়েশিয়ায় পাচারকারীদের দুর্গম বন্দীশিবিরে। সীমান্তবর্তী এলাকায় পাচারকারীদের এ ধরণের বন্দীশিবিরে বেশ ক’টি গণকবর আবিষ্কার হওয়ার পর নড়েচড়ে বসে থাইল্যান্ড। হঠাৎ করে এর বিরুদ্ধে কড়া অভিযান শুরু করে দেশটির কর্তৃপক্ষ। ফলে সমুদ্রে অবস্থানরত পাচারকারীরা উপক’লে নামতে ভয় পেয়ে যায়। আর মাঝ সাগরে আটকে পড়ে হাজার হাজার অভিবাসন প্রত্যাশী। তাদের এ চরম অবস্থা বিশ্ববাসীর নজর কাঁড়ে।
প্রাথমিকভাবে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর বেশিরভাগই এ ভাগ্য বিড়ম্বিত মানুষগুলোকে উদ্ধারে অস্বীকৃতি জানায়। ওই এলাকার জেলেদের সরবরাহ করা খাবারে বেঁচে ছিল তারা। ব্যাপক আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া প্রায় ২৯০০ লোককে গ্রহণ করে। তবে কয়েক হাজার মানুষ সমুদ্রে রয়ে যায় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মালয়েশিয়ায় নিয়ে যাওয়া ১১০০ মানুষের মধ্যে ৫০ রোহিঙ্গাকে আন্তর্জাতিকভাবে রিসেটেল হওয়ার সুযোগ দেয়া হয়। ৬৭০ বাংলাদেশীকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। বাকি প্রায় ৪০০ জনকে আটক রাখা হয় বেলান্টিক নামের একটি বন্দীশিবিরে।
অ্যামনেস্টির গবেষক খাইরুন্নিসা ঢালা বলেন, ‘মালয়েশিয়ার বন্দীশিবিরগুলোর অবস্থা ভয়াবহ রকম খারাপ।’ তিনি অ্যামনেস্টির গবেষণা প্রতিবেদনে অংশ নিয়েছেন। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় কয়েক সপ্তাহ ধরে সাক্ষাৎকার চালিয়ে এ প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়। তিনি বলেন, ‘এক বছর চলে গেল। এই মানুষগুলো যারা ভয়াবহ অবস্থা পাড়ি দিয়েছে, তারা এখনও শাস্তি পাচ্ছে। তাদেরকে মানবপাচারের ভিকটিম হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে না।’
বন্দীকালীন অন্তত এক রোহিঙ্গা নারী মারা যান। আরেকটি মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে, এক বাংলাদেশী পুরুষও মারা গেছে। তবে এ তথ্য যাচাই করা যায়নি।
গত বছরের মে মাসের পর কোন নৌকা একই কৌশল অবলম্বন করে থাই বা মালয়েশীয় উপক’লে পৌছার খবর পাওয়া যায়নি। ঢালা বলেন, ‘এটা কেবল সময়ের ব্যাপার। কারণ, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি ভালো হয়নি। মূল সমস্যার এখনও সমাধান হয়নি। এ কারণেই সেখানকার মানুষ দেশ ছাড়তে চাইবে, এই সম্ভাবনাই বেশি। তাদের দেশত্যাগ প্রয়োজনও। তারা হয়তো আরেকটি পথ পেয়েও গেছে, যা আমরা এখনও জানি না।’