আদালতের রায়ের পর ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার কমেছে। তবে বেড়েছে মেট্রো অ্যাক্টে গ্রেপ্তার। আগের তুলনায় তা দ্বিগুণ প্রায়। আইনজ্ঞরা বলেছেন, ৫৪ ধারায় প্রথমত ‘যুক্তিসঙ্গত সন্দেহ’র কারণ দেখিয়ে গ্রেপ্তার করা হতো। অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এ ধারাটি ব্যবহৃত হতো। ওই ধারা সংক্রান্ত আদালতের রায়ের পর ডিএমপি অ্যাক্টের ধারার অপব্যবহার হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত তিন দিনে ৫৪ ধারায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অথচ আদালতের রায়ের আগে প্রতিদিনই ১০ থেকে ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হতো। মামলা হতো দৈনিক গড়ে ৯টি। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৫৪ ধারায় ২৮২টি মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছেন শ’ শ’ মানুষ। ৫৪ ধারার বিষয়ে আদালতের রায়ের পর গতকাল পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। হিমু হত্যা মামলায় জড়িত থাকতে পারে এমন বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে চারজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায় রূপনগর থানা পুলিশ। তার আগে বুধবার ৫৪ ধারায় একজনকে গ্রেপ্তার করে গুলশান থানা পুলিশ। মঙ্গলবার একরামুল হক নামে এক ব্যক্তিকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করে শাহবাগ থানা পুলিশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ পাশে ফুটপাতে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরির কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। রূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ শহীদ আলম জানান, ৫৪ ধারায় যাতে হয়রানি করা না হয় সেদিকে খেয়াল রেখেই এই ধারায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। হিমু হত্যা মামলায় জড়িত থাকতে পারে এ ধরনের তথ্য রয়েছে বলেই চারজনকে ওই ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
৫৪ ধারার ব্যবহার কমে গেলেও মেট্রো অ্যাক্টের ব্যবহার বেড়েছে। গত দুদিনে ২৫টি মামলা হয়েছে মেট্রো অ্যাক্টে। গতকাল মেট্রো অ্যাক্টের আটটি মামলায় ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ডিএমপির কলাবাগান থানায় রাজু ও মহরম প্রামাণিক, তেজগাঁও থানায় নাঈম মিয়া, বশির মিয়া, আলমগীর, শাহ আলী থানায় রফিকুল, ইসমাইল, আল ফুয়াত, আদাবর থানায় রাজন, ওয়ারী থানায় দুজন ও কোতোয়ালি থানায় দুজন।
আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী সৈয়দ নাজমুল হুদা জানান, ৫৪ ধারার যত্রতত্র ব্যবহার করেছে পুলিশ। সম্প্রতি বিল্লাল হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রেরণ করে সাভার থানা পুলিশ। প্রেম-ভালোবাসার কারণে প্রতিপক্ষের কাছে আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। যদিও সন্দেহমূলক ঘোরাফেরার কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে পুলিশ অভিযোগ করেছে। তিনি বলেন, ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে ৯টি কারণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে যে কোনো একটি থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করা যায়। কিন্তু বাস্তবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে, আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে, ঘনিষ্ঠদের প্ররোচনায় ৫৪ ধারার বেশি ব্যবহার হতো।
বিনা কারণে অনেককে ১০-১৫ দিন কারাগারে থাকতে হতো। এখন ৫৪ ধারার পরিবর্তে মেট্রো অ্যাক্ট বেশি ব্যবহার হচ্ছে বলে জানান তিনি। বিশেষ করে মেট্রো অ্যাক্টের ৭৭ ধারায় চিৎকার করা, কারও গতিরোধ করা, ৭৮ ধারায় শান্তি ভঙ্গের উস্কানি, ৬৯ ধারায় ফুটপাতে পণ্য বিক্রি, ৭৬ ধারায় টিজ করা, ৭৪ ধারায় নারী-পুরুষের অবৈধ মেলামেশা ইত্যাদিও অপব্যবহার হতে পারে। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের দায়িত্বশীল হতে হবে। একইভাবে সাধারণ মানুষকে আইন সম্পর্কে সচেতন হতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
গত ২৪শে মে ৫৪ ধারায় পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ (১৬৭ ধারা) বিষয়ে উচ্চ আদালতের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। রায়ে ফৌজদারি কার্যবিধির এ দুই ধারা প্রয়োগের ক্ষেত্রে নীতিমালা করে দেয়ার কথা বলা হয়েছে।