সোনালির ২ কোটিও গেছে সুইফট কোডেই

Slider অর্থ ও বাণিজ্য

2016_05_26_11_27_43_eBlTBbyXWGvVrbvBiWKIMWPz0ALWaN_original

 

 

 

 

ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি তদন্ত করতে গিয়ে একই পদ্ধতিতে রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালি ব্যাংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার তথ্য পেয়েছে পুলিশ। সুইফটের কোড ব্যবহার করে সরকারি বাণিজ্যিক এ ব্যাংক থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মূদ্রায় ১ কোটি ৯৬ লাখ প্রায়) তুলে দেয় দুর্বৃত্তরা। ২০১৩ সালে এ চুরি হলেও তা এতদিন ছিল ফাইলবন্দি।

২০১৩ সালের অর্থচুরির ঘটনা ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের তখনকার সচিব এম আসলাম আলম সোনালী ব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলনে প্রকাশ করেন। তবে ঠিক কীভাবে এই চুরি হয়েছিল তা জানাননি তিনি। ফলে বিষয়টি নিয়ে ততটা আলোচনা হয়নি তখন।

বিশ্বজুড়ে আলোড়িত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি তদন্তে নেমে ফের আলোচনায় আসে সোনালি ব্যাংকের এ জালিয়াতি। দেশের কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সুইফট কোড ব্যবহার করে টাকা তুলে নেয়ার এটাই প্রথম ঘটনা ছিল।

রিজার্ভ চুরি তদন্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বুধবার (২৫ মে) এ খবর প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। রিপোর্টে বলা হয়,  রিজার্ভ চুরির মতোই সুইফট ম্যাসেজিং প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে অর্থ পরিশোধের ভুয়া অনুরোধ পাঠানো হয়েছিল। এ টাকা তুরস্কের একাধিক ব্যাংকে পাঠানোর আদেশ দেয়া হয়। সে অনুয়ায়ী, টাকা চলে যায় তুরস্কের ব্যাংকে। সেখান থেকে সে টাকা তুলে নেয় দুর্বৃত্তরা।

সুইফট কোর্ড ব্যবহার করে এ পর্যন্ত বিশ্বের তিন দেশের তিন ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেয়ার ঘটনা জানাজানি হয়। ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে ইকুয়েডরের বাংকো দেল অসট্রো, ২০১৪ সালে ডিসেম্বরে ভিয়েতনামের থেইন হং ব্যাংক, ২০১৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক খেকে বিপুল অংকের টাকা তুলে নেয় দুর্বৃত্তরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চুরির সংঘটনের পর পরই সুইফটকে অবহিত করেছে সোনালি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। সংস্থাটির পক্ষ থেকে এ নিয়ে সোনালি ব্যাংককে এ পর্যন্ত অভিযোগের কোনো ফলোআপ জানানো হয়নি। ফলে চুরির তিন বছরেরও ওই টাকা উদ্ধার হয়নি। এমনকি বিপুল অংকের এ টাকা উদ্ধারে কোন উদ্যোগও নেয়নি সোনালি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

রাষ্ট্রায়ত্ত এ বাণিজ্যিক ব্যাংকের তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সুইফটের কোড ব্যবহার করে সোনালি ব্যাংকের টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। দুর্বৃত্তরা ব্যাংকের একটি কম্পিউটারে সফটওয়্যার সংযোগ করে টাকা তোলার গোপন সুইফট কোড সংগ্রহ করে। পরে ওই কোড ব্যবহার করে টাকা হস্তান্তরে ভুয়া আদেশ পাঠিয়ে তুরস্কে টাকা পাঠায়।

বিপুল অংকের এ টাকা চুরির পর এতে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ব্যাংকের দুই কর্মকর্তাকে আটক করে পুলিশ। পরে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। এমনকি ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগও আনা হয়নি।

সোনালি ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক প্রদীপ কুমার দত্ত বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ‘দুর্বৃত্তরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। এ পর্যন্ত চুরির কোনো টাকা উদ্ধার সম্ভব হয়নি।’

উল্লেখ্য, গত ৫ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে গচ্ছিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে সুইফট সিস্টেমে প্রতারণামূলক নির্দেশনা পাঠিয়ে ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার তুলে নেয় দুর্বৃত্তরা। এর ৮১ মিলিয়ন ডলার পাঠানো হয় ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকের মাকাতি সিটির জুপিটার শাখার ক্যাসিনো জাংকেট কিম অংয়ের অ্যাকাউন্টে। পরে ওই অ্যাকাউন্ট থেকে চলে আরো চার ব্যবসায়ীর অ্যাকাউন্টে।

বাকি ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাঠানো হয় শ্রীলংকার সেচ্ছাসেবী সংগঠন শালিকা ফাউন্ডেশনের অ্যাকাউন্টে। প্রাপকের নামের বানানে ভুল থাকায় ওই টাকার পেমেন্ট আটকে দেয় ব্যাংক কর্মকর্তারা। পরে সেটি ফিরিয়েও আনা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *