ঢাকা: নতুন নতুন বেসরকারি কোম্পানি তালিকাভুক্ত ও কম-বেশি বিনিয়োগকারী বৃদ্ধির ফলে দেশের পুঁজিবাজার প্রতিনিয়তই সম্প্রসারিত হচ্ছে। ২০১০ সালে মহাধস পরবর্তী সময়ে বহু কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলেও এ সময়ে মাত্র একটি সরকারি কোম্পানি বাজারে এসেছে। তাই বাজারের স্বার্থে দ্রুত সরকারি কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির প্রয়োজন বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্যানুযায়ী, ডিএসইতে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজার মূলধন ও লেনদেনের অবদান মাত্র ১০ শতাংশ। আর তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা মাত্র ১৯টি। লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে সংখ্যার দিক থেকে বাজারে সরকারি কোম্পানির অবদান ৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ। অথচ বাজার মূলধনের দিক থেকে বহুজাতিক কোম্পানির অবদান ২৫ শতাংশ। যা লেনদেনের দিক থেকে ৫৪ শতাংশ। আর বাকি ৪০ শতাংশ লেনদেন এবং বাজার মূলধনের দিক থেকে ৬৫ শতাংশ অবদান খারাপ ও দূর্বল মৌলভিত্তি কোম্পানির।
জানা গেছে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে সরকারি প্রতিষ্ঠানকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হলেও বাস্তবে তার কোনো কার্যক্রমই দেখা যাচ্ছে না। ফলে প্রতিনিয়তই দুর্বল ও খারাপ কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা তুলে নিচ্ছে। যার কারণে বিনিয়োগকারীরা প্রতারিত হচ্ছেন।
তাই বাজারের স্বার্থে দ্রুত সরকারি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনা দরকার বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ মির্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, সরকারি কোম্পানিগুলো বাজারে আনলে সরকার বিনা সুদে টাকা সংগ্রহ করতে পারবে। আর মৌলভিত্তিক কোম্পানিগুলোর কারণে বিনিয়োগকারীরাও লাভবান হবেন।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, সরকারি কোম্পানিগুলো বাজারে আসলে কারসাজি চক্রের দাপট কমে আসবে। বিনিয়োগকারীরা লোকসান থেকে রক্ষা পাবেন। বাজারও চাঙা হবে।
ডিএসইর সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, ভারতের পুঁজিবাজারে সরকারের অবদান অনেক বেশি। এ কারণে দরপতন হলে দ্রুতই বাজার ঘুরে দাঁড়ায়। সর্বশেষ ভারতের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘সেবি’ (সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া) সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিকানার শেয়ার সর্বনিম্ন ২৫ শতাংশ বিনিয়োগকারীদের হাতের ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
কিন্তু দেশের পুঁজিবাজারে সরকারি কোম্পানির অবদান মাত্র ১০ শতাংশ। দুর্ভাগ্যজনক হলো, এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে জোরালো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। সরকারি কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্ত হলে বাজার স্থিতিশীলে বড় ধরনের অবদান রাখবে। পুঁজিবাজারের প্রতি সরকারের দায়িত্ব বাড়বে।
তিনি বলেন, সরকারি কোম্পানি বাজারে আসলে জবাবদিহিতা আরো বাড়বে। লোকসানে থাকা কোম্পানি মুনাফায় ফিরবে। যার সুফল পাবেন বিনিয়োগকারীরা।
জানা গেছে, পুঁজিবাজারে ২০১০ সালে ধসের পরপরই বাজারে সরকারি কোম্পানির তালিকাভুক্তির উদ্যোগ নেয় সরকার। এরপর গত ৬ বছরে মোট তিন দফা সময় বেধে দেওয়া হয়। এর মধ্যে দু’বার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও হস্তক্ষেপ করেন। এরপরও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা কোম্পানিগুলোর শেয়ার কবে নাগাদ বাজারে আসবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে নতুন সচিব মো. ইউনুসুর রহমান এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছেন। গত ৫ মে তার সভাপতিত্বে সরকারি মালিকানাধীন বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সরকারি মলিকানাধীন কোম্পানিগুলোর শেয়ার বাজারে ছাড়ার সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাওয়া হয়। এ সময় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির বক্তব্যে নেতিবাচক উত্তর পাওয়া যায়। অর্থাৎ গত ছয় বছরেও প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের শেয়ার বাজারে ছাড়ার পরিবেশ তৈরি করতে পারেনি।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সরকারি কোম্পানিগুলো হলো- বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেড (বিডি সার্ভিস), বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস কোম্পানি লি. (বিএসসিসিএল), বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি), ইস্টার্ন ব্যাবলস (ই কেবলস), ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্ট (ইস্টার্ন লুব), আইবিসি, যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড (যমুনা অয়েল), মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড (মেঘনা পেট), ন্যাশনাল টিউব (এনটিএল টিউবস), পদ্মা অয়েল কোম্পানি (পদ্মা অয়েল), পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (পাওয়ার গ্রিড), রেনউইক যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোম্পানি (রেনউইক জেএ), শিয়ামপুর সুগার মিলস লিমিটেড (শিয়ার এমইউজি), তিত্যাস গ্যাস, উসমানিয়া গ্লাস, ঝিলবাংলা সুগার মিলস লিমিটেড (ঝিলবাংলা), এটলাস বাংলাদেশ (এটলাস ব্যাং)।
কোম্পানিগুলোর মধ্যে সর্বশেষ ২০১২ সালে বাজারে তালিকাভুক্ত হয় বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস কোম্পানি লি. (বিএসসিসিএল)।