আজ বিকেলে আদালত চত্বরে দেখা গেল, খোকনের ডান পায়ের হাঁটু থেকে নিচ পর্যন্ত নেই। ডান হাতে ক্রাচ। বাঁ হাতে হাতকড়া পরানো। আদালতের এক পুলিশ তাঁকে ধরে হাজতখানা থেকে নিয়ে গিয়ে ঢাকার ৩৪ নম্বর মহানগর হাকিম আদালতে তোলেন। জামিন শুনানির সময় খোকন আদালতের এজলাস কক্ষে বিচারকের সামনে দাঁড়ানো ছিলেন। এ সময় তাঁর আইনজীবী আদালতকে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, দেখুন, লোকটি পঙ্গু। একা চলাফেরা করতে পারেন না। সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে তাঁকে ধরা হয়েছে। তাঁকে জামিন দেওয়া হোক। জামিন না পেলে তিনি কারাগারে চরম সমস্যার সম্মুখীন হবেন।’ এ সময় বিচারক নিজেও খোকনকে দেখেন। তখনো তাঁর হাতে হাতকড়া ছিল।
শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম লস্কর সোহেল রানা খোকনের জামিন আবেদন নাকচ করে দেন। পরে খোকনকে দেখা যায়, ডান পায়ে তিনি কৃত্রিম পা ব্যবহার করেন। পরে তাঁকে হাজতখানায় নেওয়া হয়। খোকনের তিন ছেলেমেয়ে। ১৫ বছর আগে তাঁর চায়ের দোকান ছিল শেরেবাংলা নগর এলাকায়। সেই সময় তিনি শেরেবাংলা নগর এলাকায় গাড়ি দুর্ঘটনায় পা হারান।
আদালত এলাকায় খোকনের স্ত্রী নার্গিস বেগম বলেন, গত শনিবার রাতে শেরেবাংলা নগরের বাসা থেকে খোকনকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে তাঁকে মিরপুর মডেল থানায় নেওয়া হয়। নার্গিসের অভিযোগ, মিরপুরের দারোগা আরিফ হোসেন তাঁদের কাছে ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা দিলে মামলা দেওয়া হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেন। নার্গিস দাবি করেন, পুলিশকে দুই হাজার টাকাও দেন তিনি। কিন্তু বাকি টাকা না দেওয়ায় মিথ্যা এই চুরির মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
গত ১৬ মার্চ মিরপুর থানায় করা একটি চুরির মামলায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে খোকনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আরিফ হোসেন। আদালতে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে এসআই আরিফ হোসেন বলেছেন, ‘বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, আসামি গ্রিল ভাঙা, তালা ভাঙাসহ বিভিন্ন চোর চক্রের সক্রিয় সদস্য। তাঁকে ঘটনার দিন ঘটনাস্থল মিরপুর থানার পশ্চিম কাজীপাড়া এলাকায় ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। তবে আসামির ডান হাত ও পা ভাঙা। লাঠিতে ভর দিয়ে চলেন। তিনি একজন প্রতিবন্ধী।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই মো. আরিফ হোসেন বলেন, ‘খোকনকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করেছি। তাঁর পরিবারের কাছে টাকা চাওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। লোকটি প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাঁকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করিনি।’
খোকনকে হাতকড়া পরানোর বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের হাজতখানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন বলেন, ভবিষ্যতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আর হাতকড়া পরানো হবে না।