রাজধানীতে দু’দফা জানাজা শেষে যথাযোগ্য মর্যাদায় সমাহিত হলেন ‘বেগম’ পত্রিকার সম্পাদক নূরজাহান বেগম। আজ সন্ধ্যার পর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তার মরদেহ সমাহিত করা হয়। এর আগে আজ সোমবার সকালে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় এই সম্পাদক (ইন্নালিল্লাহি… রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। দুপুরে স্কয়ার হাসপাতাল থেকে নূরজাহান বেগমের মরদেহ তার নারিন্দার বাড়ি মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন স্মৃতি ভবনে নেয়া হয়। সেখানে অনুষ্ঠিত প্রথম জানাজায় সংস্কৃতি বিষয়কমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর অংশ নেন। এরপর কফিন নেয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে সর্বসাধারণ ফুল দিয়ে বাংলার নারী জাগরণের অন্যতম পুরোধা এই ব্যক্তিত্বের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানায়। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি প্রয়াতের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। বিকাল ৫টায় এক মিনিট নীরবতা পালন করেন মধ্য দিয়ে শহীন মিনারের শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব শেষ হলে কফিনটি নেয়া হয় গুলশানের আজাদ মসজিদে। সেখানে তার দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যার পর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে নূরজাহান বেগমকে সমাহিত করা হয়।
এদিকে বেশ কিছু দিন ধরে বার্ধক্যজনিক নানা রোগে ভুগছিলেন নূরজাহান বেগম। গত ৫ই মে অসুস্থ অবস্থায় তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকের পরামর্শে ৭ই মে তাকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নিয়ে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। তিনি চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলমের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় নূরজাহান বেগমের চিকিৎসার যাবতীয় দায়িত্ব নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নূরজাহান বেগমের মৃত্যুতে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শোক প্রকাশ করেছেন। শোক জানিয়েছেন সেন্ট্রাল উইমেন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. পারভিন হাসান ও অধ্যাপক মালেকা বেগম। বাংলাদেশে নারী সাংবাদিকতার অগ্রদূত ও সাহিত্যিক নূরজাহান বেগম ১৯২৫ সালের ৪ জুন চাঁদপুর জেলার চালিতাতলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার মায়ের নাম ফাতেমা বেগম। নূরজাহান বেগম বিয়ে করেন কচিকাঁচার মেলার প্রতিষ্ঠাতা সাংবাদিক রোকনুজ্জামান খান দাদাভাইকে। তাঁদের দুই সন্তান- ফ্লোরা নাসরীন খান ও রীনা ইয়াসমিন খান। ১৯৪৭ সালে ‘বেগম পত্রিকার’ ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন নূরজাহান বেগম। জীবদ্দশায় অনেক সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন নূরজাহান বেগম। এর মধ্যে রয়েছে ১৯৯৬ সালের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হিসেবে নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠচক্র সম্মাননা, ১৯৯৭ সালে রোকেয়া পদক, ২০০২ সালে অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার, ২০০৩ ও ২০০৫ সালে নারীপক্ষ দূর্বার নেটওয়ার্ক ও কন্যা শিশু দিবস উদযাপন কমিটির সংবর্ধনা। এছাড়া ২০১০ সালে পত্রিকা শিল্পে বিশেষ অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক নারী সংগঠন ইনার হুইল ডিস্ট্রিক্ট সম্মাননাসহ বাংলাদেশ মহিলা সমিতি, মহিলা পরিষদ, লেখিকা সংঘের স্বর্ণপদকও পেয়েছেন নূরজাহান বেগম।