রোয়ানু’তে গেল ১৮ জনের প্রাণ

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি জাতীয় সারাদেশ

0979d7c8034855e0a08efae47fb740c1-03

ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ে গাছ চাপা, দেয়াল চাপা, ইটের আঘাত, ট্রলারের চাপা ও জোয়ারের পানির ​তোড়ে দেশের পাঁচ জেলায় অন্তত ১৮ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম নগরে এক শিশু, বাঁশখালীতে ছয়জন ও সীতাকুণ্ডে মা ও শিশু; পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলায় এক নারী; ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায় দুজন; কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় তিনজন এবং নোয়াখালীর হাতিয়ায় মা-মেয়েসহ তিনজন নিহত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাতে ও আজ শনিবার এসব ঘটনা ঘটে।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চলিক কার্যালয় ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

চট্টগ্রাম: পাঁচলাইশ থানার উপপরিদর্শক আবুল বাশার জানান, নগরের পাঁচলাইশ থানাধীন ষোলশহর এলাকায় আজ শনিবার বেলা পৌনে একটার দিকে ঝোড়ো বাতাসে ইটের আঘাতে রাকিব নামের ১১ বছর বয়সী এক পথশিশু মারা গেছে। এ ছাড়া নগরের আগ্রাবাদ এলাকায় ভবনের কাচ উড়ে এসে এনামুল কবির নামে এক পথচারী গুরুতর আহত হয়েছেন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির নায়েক মো. হামিদ বলেন, বেলা পৌনে দুইটার দিকে এনামুল কবিরকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

সীতাকুণ্ড(চট্টগ্রাম): উপজেলার ছলিমপুর ইউনিয়নে জঙ্গল ছলিমপুর গ্রামে ঝড়ে গাছের চাপায় ঘরের চাল ভেঙে মা ও শিশু নিহত হয়েছে। গতকাল দিবাগত রাত তিনটার দিকে ওই গ্রামের লোকমানিয়াঘোনা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত মায়ের নাম কাজল বেগম (৪৮)। ছেলের নাম মো. বেলাল হোসেন (১০)। পাহাড়ি পথ ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে ঘটনাস্থলে উদ্ধারকারী দলের যেতে দেরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল ইসলাম ভূইয়া।

বাঁশখালী: (চট্টগ্রাম): জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন জানান, ঝড়ের প্রভাবে বাঁশখালীর উপকূলীয় এলঅকায় ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে।

পটুয়াখালী: দশমিনা উপজেলায় গতকাল রাতে ঝড়ে ঘর চাপা পড়ে নয়া বিবি (৫০) নামের এক নারী মারা গেছেন। বিধ্বস্ত হয়েছে শতাধিক ঘর। নয়া বিবির বাড়ি উপজেলার দশমিনা ইউনিয়নের উত্তর লক্ষ্মীপুরের নিজারাবাদ গোপালদি গ্রামে। দশমিনার মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি সিকদার নজরুল ইসলাম জানান, ঝড়ে গাছপালাসহ শতাধিক ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ইউএনও আজহারুল ইসলাম বলেন, ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করা হচ্ছে।

ভোলা: ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায় গতকাল দিবাগত রাত তিনটার দিকে ঝড়ে গাছের নিচে চাপা পড়ে দুজন নিহত হয়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে কয়েক শ ঘর। এতে শতাধিক লোক আহত হয়েছে। ঝড়ে নিহত দুজন হলেন আক্রাম হোসেন (৪৫) ও রেখা বেগম (৩৫)। দুজনের বাড়ি শশীগঞ্জ গ্রামে। প্রত্যক্ষদর্শী রফিক সাদীর ভাষ্য, ঝড়ে তজুমদ্দিনের শশীগঞ্জ বাজারের তিন শতাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বিধ্বস্ত হয়েছে। ইউএনও জালাল উদ্দিন বলেন, আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তাদের শুকনো খাবার দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

কক্সবাজার: সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়ায় উত্তর ধুরুং ইউনিয়ন উপকূলীয় উত্তাল সাগরে দুটি ট্রলারের চাপায় ফজলুল হক (৫৫) নামের এক জেলের মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার কৈয়ারবিল গ্রামের বাসিন্দা। অন্যদিকে দুপুরে একই ইউনিয়নের ধুরুং গ্রামের ঝড়ের কারণে ঘরের মাটির দেয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে আবদুর রহিমের ছেলে মো. ইকবালের (২৫)। আর বিকেলে বিকালে পুলিশ আলীআকবরডেইল সৈকত থেকে উদ্ধার করে ফকির আলম (৪৯) নামে এক জেলের লাশ। তিনি ওই ইউনিয়নের তাবলেরচর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে স্রোতের টানে ভেসে তাঁর মৃত্যু হয়।
কুতুবদিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অংসা থোয়াই  জানান, লাশ তিনটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে গাছ ও ঘরের দেয়াল চাপায় উত্তর ধুরুং ইউনিয়নে আরও সাত ব্যক্তি আহত হয়েছেন। তাঁদের কুতুবদিয়ার বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সাগর দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়াতেই ঘূর্ণিঝড় বেশি আঘাত হানে। বেড়িবাঁধ ভেঙে এই উপজেলার কৈয়ারবিল, ধুরুং, উত্তর ধুরুং, লেমশিখালী ও আলীআকবর ডেইল ইউনিয়নের কয়েক হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে কক্সবাজারের প্রায় ২৮ কিলোমিটার উপকুলীয় বেড়িবাঁধ ভেঙে লন্ডভন্ড পাঁচটি উপজেলার অন্তত ১৮০টি গ্রাম। এসব গ্রামে কমপক্ষে ৫০ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওইসব গ্রামের গৃহহীন প্রায় ৮৪ হাজার লোকজনকে ১৫৮টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে গাছপালা ও খুটি ভেঙ্গে পড়ায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলায় বিদু্ৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল।

নোয়াখালী: জোয়ারের পানির তোড়ে হাতিয়ায় মা-মেয়েসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। ​নিহত ব্যক্তিরা হলেন, হাতিয়ার চানন্দি ইউনিয়নের আদর্শ গ্রামের মিনারা বেগম (৩৫) ও ১০ বছরের মেয়ে মরিয়মনেছা এবং জাহাজমার ইউনিয়নের রিপুলা বেগম (৪৭)। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মো. মইনুদ্দিন বলেন, বেলা সাড়ে তিনটার দিকে জোয়ার আসতে দেখে আসবাবপত্র রক্ষা করতে ঘরে ঢোকেন তাঁরা। এর মধ্যে জোয়ারের পানি এসে পড়ায় তারা আর ঘর থেকে বের হতে পারেননি। এ ছাড়া নিঝুম দ্বীপ, নলিছড়া, চরেশ্বর, চরকিং, তমরুদ্দি, বয়ারচর, নলেরচর এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে ৪-৫ শ কাঁচা ঘর।

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সারা দেশের নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। উপকূলের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। জেটি থেকে সাগরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জাহাজগুলোকে। সাতক্ষীরা জেলায়ও বৃষ্টি হচ্ছে। ভারী বর্ষা আবার কখন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। একই সঙ্গে বইছে হালকা বাতাস।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টি হচ্ছে। রাজধানীতে গতকাল রাত থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তেজতুরী বাজার, ফকিরাপুল, শান্তিনগর ও পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় পানি জমেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *