ইসলামী ব্যাংক চট্টগ্রাম উত্তর জোনের হেড ও এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের আগ্রাবাদ শাখা একক ব্যক্তিকে শতকোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। এ জন্য প্রয়োজনীয় জামানতও রাখা হয়েছিল। পরে জামানতের কাগজপত্র আরও ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়। এরপর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীকে ঋণ পুনঃতফসিল করতে আলটিমেটামও দেওয়া হয়েছে। এখন ব্যাংক কর্মকর্তাদের বড় ঋণ দেওয়ার আগে সতর্ক থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
ব্যাংক এশিয়া চট্টগ্রামের জোনাল হেড মো. রোসাঙ্গীর বলেন, ‘আমাদের দু-একটি ব্রাঞ্চে বড় ঋণ খেলাপি রয়েছে। তাদের ঋণ দিয়ে সংশ্লিষ্ট শাখাগুলো বিপাকে পড়েছে। ভবিষ্যতে এমন ঋণ দেওয়ার আগে কাগজপত্র ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। টাকা উদ্ধারে নতুন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়াসহ আমরা কিছু কৌশলও গ্রহণ করেছি।’
রূপালী ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা মার্জিন ভেজিটেবল অয়েলকে ২৪১ কোটি ছয় লাখ ৭৩ হাজার টাকা ঋণ দিয়ে বিপদে আছে। চলতি মাসে এ প্রতিষ্ঠানের সম্পদ নিলামেও তুলেছে ব্যাংকটির শাখা। কিন্তু একসঙ্গে এত টাকা ঋণ দেওয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের রোষানলে রয়েছেন এ শাখার কর্মকর্তারা। মোস্তফা স্টিলকে ঋণ দিয়ে বিপাকে আছে বিভিন্ন ব্যাংকের চারটি শাখা। সাউথইস্ট ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা ১১৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, ব্যাংক এশিয়ার সিডিএ এভিনিউ শাখা ২৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা, ইস্টার্ন ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা ৪২ কোটি ও এনসিসি ব্যাংকের ২১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে ওই প্রতিষ্ঠানের কাছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া আবরার স্টিলের কাছে চার ব্যাংকের পাওনা দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ১১৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা ৭০ কোটি, ব্যাংক এশিয়ার আগ্রাবাদ শাখা ১৬ কোটি ও পূবালী ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখার পাওনা রয়েছে প্রায় ১৮ কোটি টাকা।
এইচ স্টিলকে একসঙ্গে সাড়ে ৭৫ কোটি টাকা ঋণ দিয়ে বিপদে আছে ব্যাংক এশিয়ার আগ্রাবাদ শাখা। একই প্রতিষ্ঠানকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা ঋণ দিয়েছে ২০ কোটি টাকা। চিটাগাং ইস্পাতের কাছ থেকে অগ্রণী ব্যাংক লালদীঘি শাখা প্রায় ৭৪ কোটি টাকা, পূবালী ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা ৩৬ কোটি টাকা ও ন্যাশনাল ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা পাবে ১৪ কোটি টাকা। ন্যাশনাল স্টিলের কাছে প্রায় ১৬০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে ইসলামী ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার। এসএম স্টিলের কাছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখার পাওনার পরিমাণ ৪৩ কোটি টাকা। বিএম স্টিলের কাছে প্রিমিয়ার ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখার পাওনা রয়েছে সাড়ে ৩৯ কোটি টাকা। সাকিব স্টিলের কাছে ৩৩ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে ঢাকা ব্যাংক সিডিএ এভিনিউ শাখার।
ম্যাক ইন্টারন্যাশনালকে ঋণ দিয়ে বিপদে বিভিন্ন ব্যাংকের সাতটি শাখা। অগ্রণী ব্যাংকের লালদীঘি শাখা প্রায় ১৬০ কোটি টাকা, প্রাইম ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা ৫৭ কোটি, পূবালী ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখা প্রায় ৪৪ কোটি, পূবালী ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা সাড়ে ২২ কোটি, যমুনা ব্যাংকের ভাটিয়ারী শাখা প্রায় ১৩ কোটি ও ব্র্যাক ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখার ১২ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে ম্যাকের কাছে। এ গ্রুপের আরেক প্রতিষ্ঠান এমকে স্টিলকে ৮৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ঋণ দিয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে এবি ব্যাংকের ইপিজেড শাখা।
ম্যাক ইন্টারন্যাশনালের জেনারেল ম্যানেজার (অ্যাডমিন অ্যান্ড ফিন্যান্স) মো. জাফর বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে মন্দাভাব থাকায় আমাদের বড় ধরনের লোকসান গুনতে হয়েছে। তার পরও কিছু ব্যাংকের ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে।’
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঋণ পরিশোধ না করা ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগই জাহাজ ভাঙা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। অর্ধশত কোটি টাকার বেশি ঋণ থাকা ব্যবসায়ীদের ৬০ শতাংশই জাহাজ ভাঙা শিল্পের বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক শাখা। বিষয়টি স্বীকার করে শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু তাহের বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে মন্দাভাব থাকায় জাহাজ ভাঙা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত বেশিরভাগ ব্যবসায়ী চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অনেকেই তা পরিশোধ করতে পারেননি। যেসব ব্যাংক ঋণ দিয়েছে, তারাও চাপের মুখে রয়েছে। এ জন্য জাহাজ ভাঙা শিল্পের ব্যবসায়ীদের নতুন করে ঋণ দিতে অনেক ব্যাংক হয়রানি করছে।