প্রশ্নটা শুনেই বিব্রতবোধ করলেন মোশাররফ করিম। ‘এত ব্যক্তিগত কথা বলা যায়?’ অবশ্য খানিক বাদে নিজেই এ প্রশ্নের উত্তর দিলেন। ‘আসলে এখন তো ব্যক্তিগত বলে অনেক কিছুই নেই।’ তারপর নিজে থেকেই বলা শুরু করলেন স্ত্রী রোবেনা রেজার সঙ্গে প্রেমের ঘটনা। রোবেনা রেজাকে কাছের মানুষ ডাকেন জুঁই নামেই। ঢাকার মালিবাগ চৌধুরীপাড়ায় একটা কোচিং সেন্টারে পড়াতেন মোশাররফ করিম। তখন রীতিমতো শিক্ষক তিনি। সেখানেই পড়তে যেতেন জুঁই। ঘটনা শিক্ষক-ছাত্রীর প্রেমেও গড়াতে পারত, যদি না এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে জুঁই ওই কোচিং সেন্টারেই শিক্ষক হিসেবে যোগ না দিতেন। ছাত্রী যখন সহকর্মী, তখনই প্রেমটা ভর করে মোশাররফ করিমের ওপর। প্রস্তাবটা আগে দেন মোশাররফই। এটা ২০০০ সালের ঘটনা। ১৬ মে পূর্ব রামপুরায় মোশাররফ করিম ও জুঁইয়ের বাসায় বসে কথা হচ্ছিল এই দম্পতির সঙ্গে।
প্রেমের প্রস্তাব পেয়ে কী করেছিলেন জুঁই? উত্তরটা শোনা যাক তাঁর মুখেই। ‘মোশাররফ বলার পর খুব বেশি ভাবিনি। হ্যাঁ বলে দিয়েছি।’ সরল স্বীকারোক্তি জুঁইয়ের।
বছর চারেক টানা প্রেম করেছেন দুজন। তখন মোশাররফ করিম ‘তারকা’ নন। মঞ্চে অভিনয় করেন। ভাবেনওনি যে টেলিভিশনে অভিনয় করে একসময় তারকা বনে যাবেন। নিজের মতো করে থাকতেন। মাঝেমধ্যে বন্ধুদের নিয়ে ডুব দেন। টানা সাত-আট দিন নিরুদ্দেশ। এ কারণেই সম্ভবত, পরিবার বাঁধতে চাইল মোশাররফ করিমকে। ২০০৪ সালে দুজনের পরিবারের সম্মতিতেই আয়োজন করে পা রাখেন জীবনের নতুন রঙ্গমঞ্চে। বিয়ের পরই আমূল বদলে যান মোশাররফ করিম। হারিয়ে যাওয়ার মাত্রা কমে আসে। থিতু হন সংসারে।
এভাবেই তো মোশাররফ-জুঁইয়ের কেটে যাচ্ছে প্রায় ১২ বছর—একটা যুগ। এই পথচলায় দুজনেই থেকেছেন পাশাপাশি, আনন্দ-বেদনার সঙ্গী হয়ে। মোশাররফের ভাষায়, ‘আমি জীবনটা জটিল করতে চাই না। খুব সহজভাবে কাটাতে চাই। এ জন্য আমার ওই সময় থেকেই মনে হয়েছে আমার সঙ্গী হিসেবে জুঁইই পারফেক্ট।’
একই কথা জুঁইয়ের মুখেও। এই দম্পতিকে আলাদাভাবে বসিয়ে একটা প্রশ্নপত্র ধরিয়ে দিই। একজন বলবেন আরেকজন সম্পর্কে। তারপর একজনের উত্তর দেখে দেবেন অপর পক্ষ। ১০ প্রশ্নের উত্তরে দুজনই ৯টি করে সঠিক উত্তর দেন। এতেই বোঝা যায়, ভালোবাসাবাসির দিক থেকে দুজন সমান সমান।
মোশাররফের চোখে জুঁই
যা কিছু ভালো
ও অনেক গোছানো। আমার সবকিছু গুছিয়ে রাখে। আমাদের পুরো পরিবারটা আগলে রাখে। নিয়মিত নিজে বাজার করে। রান্না করে। কারও উপকারে লাগতে পারলে খুশি হয়। এটা অবশ্য ওর বাবার কাছ থেকে পাওয়া। তবে সবচেয়ে বড় গুণ আমাকে অনেক ভালোবাসে।
সমালোচনা
ওর আসলে সমালোচনা করার কিছু নেই। সবদিক থেকে উপযুক্ত। তবে অনেক সময় কাজের চাপে নিজের দিকে খেয়াল রাখার সুযোগ পায় না। মাঝেমধ্যে রেগে গেলে বিপদে পড়ি। কারণ, ওর রাগ ভাঙানোর সহজ কোনো উপায় নেই।
জুঁইয়ের চোখে মোশাররফ
যা কিছু ভালো
সবাইকে নিয়ে মিলেমিশে আনন্দে থাকতে পছন্দ করে। মানুষকে বিশ্বাস করে। উপকার করে। তারকা হিসেবে ওর মধ্যে বিন্দুমাত্র অহংকার নেই। খুব সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত। চেষ্টা করে পরিবারকে সময় দিতে। সবাইকে প্রচণ্ড ভালোবাসে। প্রতিদিন আমাকে একবার হলেও ভালোবাসি বলে। অনেক সময় এক দিনেই কয়েকবার বলে ‘ভালোবাসি’।
সমালোচনা
অগোছালো। জীবন নিয়ে খুব বেশি ভাবে না। রেগে গেলে কোনো কথার উত্তর দেয় না। চাপা স্বভাবের। হাসির কথাতেও সহজে হাসে না! খাওয়াদাওয়ার বেলায় খুব কম খায়। অনেক পদ থাকলেও যেটা ভালো লাগবে, সেটা দিয়ে খেয়ে উঠে যায়। আবেগপ্রবণ মানুষ।