জেরুজালেম অনলাইন গতকাল এক সংবাদ বিশ্লেষণে বলেছে, মেনদি সাফাদি একটি ইসরাইলি এনজিও পরিচালনা করে থাকেন। তার ও নিজের পক্ষে বাংলাদেশি শিপন কুমার বসু দাবি করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্য নয়। কারণ, ‘‘আমরা কেনো অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চাই না। বরং আমরা বাংলাদেশি জনগণের ব্যক্তিস্বাধীনতা নিশ্চিত করতে চাই। আমরা বাংলাদেশে ‘সিভিলিটি’র পুনরুজ্জীবন ঘটাতে চাই।’’ হিন্দু অনলাইনে গতকাল জেরুজালেম অনলাইনের বরাতে মেনদি সাফাদির বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। গত জানুয়ারিতে জেরুজালেম অনলাইন রিপোর্ট করেছিল যে, সাফাদি বাংলাদেশে এমন একটি সরকারের পরিবর্তন দেখতে চায় যারা ইসরাইলের সঙ্গে পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন এবং সংখ্যালঘুর অধিকারকে স্বীকার করে। সেই নিবন্ধে আসলামের আদৌ কোনো উল্লেখ ছিল না। কিন্তু এবারে সাফাদির সঙ্গে আসলামের বৈঠকের খবর সেদেশে রাজনৈতিক ঝড় তুলেছে। এবং প্রতীয়মান হচ্ছে যে, জেরুজালেম অনলাইনে সাফাদির লেখা নিবন্ধটিকেই মোসাদের গুপ্তচর হিসেবে আসলামকে চিহ্নিত করার অজুহাত হিসেবে দাঁড় করানো হচ্ছে। জেরুজালেম অনলাইনকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে সাফাদি বলেছেন, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে আরো একজন সংখ্যালঘু হিন্দু নেতা হত্যার শিকার হয়েছেন। এবং এই হত্যাকাণ্ডটি এমন পদ্ধতিতে সংঘটিত করা হয়েছে যা এর আগের হত্যাকাণ্ডগুলোতে আনসার আল ইসলাম ব্যবহার করেছে। আর সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন ইসলামী সরকার বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। এবং স্থানীয় খবরের কাগজগুলোতে এমন সব নিবন্ধ প্রকাশ করছে যাতে দাবি করা হচ্ছে যে, বিরোধী দলের কর্মীদের সঙ্গে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সম্পর্ক রয়েছে। আসলামের সঙ্গে মেনদির ছবি প্রকাশের দিকে ইঙ্গিত করে অনলাইন প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘তারা একই সঙ্গে মেনদি সাফাদির সঙ্গে বিরোধী দলের কর্মীদের ছবি প্রকাশ করছে।’ লক্ষণীয় যে, ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ‘‘মেনদি সাফাদি মোসাদের কেউ নয় বরং তিনি বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক মহলে কাজ করছেন।’’ সরকার যদিও আনসার আল ইসলামকে নিষিদ্ধ করেছে। এবং তাদের বিরুদ্ধে সব ধরনের তৎপরতা জোরদার রেখেছে। অথচ জেরুজালেম অনলাইন প্রতিবেদনে এরপর বলা হয়, সাফাদি ঘোষণা দিয়েছেন যে, ‘‘যখন একটি সরকার আইসিসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে আশ্রয় প্রদান করে তখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত হবে তার বিরুদ্ধে কাজ করা উচিত। এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এথনিক ক্লিনজিং বন্ধ করা উচিত।’’ তার কথায়, ‘‘গুপ্তচরবৃত্তি নয়, আমি আন্তর্জাতিক কূটনীতির সঙ্গে জড়িত। মোসাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার যে অভিযোগ আনা হয়েছে তার লক্ষ্য হচ্ছে বিরোধী দলকে স্তব্ধ করা। আর যাতে বাংলাদেশে গণতন্ত্র আনার আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মানবাধিকার কর্মীদের কণ্ঠ নীরব করে দিতে তাদেরকেও গুপ্তচর বৃত্তির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের এটা ‘ডিক্টেটরশিপ লাইক মেথড।’
বসুর সাক্ষাৎকার
শিপন কুমার বসু জেরুজালেম অনলাইনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ঢাকার গণমাধ্যমে এক কর্মকর্তা আমার বিরুদ্ধে বিদ্বেষপ্রসূত অভিযোগ এনেছে। বর্তমান সরকারের আশ্রয়ে থাকা হিন্দুদের জমি গ্রাসকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হিন্দুদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই চালানো আমার লক্ষ্য। অথচ একটি পত্রিকায় একজন বাংলাদেশি গোয়েন্দা কর্মকর্তা আমাকে একটি বিদেশি গেয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট হিসেবে উল্লেখ করেছে। এটা পুরো মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।’ বসু বলেন, আমি যদি কারো এজেন্ট হই তাহলে সেটা বাংলাদেশ ও আমার প্রিয় হিন্দু সম্প্রদায়ের। আমি তাদের স্বার্থ রক্ষায় বৃটিশ, আমেরিকান, ইউরোপিয়ান, ইসরাইলি ও ভারতীয়দের সাহায্য চেয়েছি। আমাদের কোনো গোপন তৎপরতা নেই। আমরা যেখানে যাই, যা করে থাকি তা ফেসবুকে প্রকাশ করে থাকি। ইসরাইলের ক্ষমতাসীন লিক্যুদ পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাফাদি আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড। এ বিষয়ে তার সাহায্য চাইলে তিনি ইতিবাচক সাড়া দেন। এভাবেই আমাদের সহযোগিতা শুরু হয়। আমরা এটা চাই না যে, বাংলাদেশের মুসলিমরা তাদের হিন্দু প্রতিবেশীর শত্রুতে পরিণত হোক, আবার আমরা এটাও চাই না যে, বাংলাদেশের হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের অনুকম্পায় বেঁচে থাকবেন। বসু দাবি করেন যে, ‘‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আশা করে যে, আমরা হিন্দুরা তাদের অনুগ্রহে বেঁচে থাকি। বহু আওয়ামী লীগ সদস্য যাদের মধ্যে কেবিনেট সদস্য থেকে তৃণমূল পর্যন্ত আছেন তারা বর্তমানে হিন্দুদের সম্পত্তি গ্রাস, তাদের নির্যাতন ও বাস্তুচ্যুত করার কাজে নিয়োজিত আছেন। অধ্যাপক আবুল বারকাত যে পরিসংখ্যান বের করেছেন তাতে এটাই ফুটে উঠেছে যে, আওয়ামী লীগ নেতারাই হলেন বাংলাদেশে হিন্দুদের ভূমি আত্মসাৎকারীদের মধ্যে বৃহত্তম।এটাই হলো রূঢ় বাস্তবতা। যে গোয়েন্দা কর্মকর্তার বরাত দেয়া হয়েছে তিনি কোনো গোয়েন্দা সংস্থায় কাজ করার জন্য সম্পূর্ণ অনুপযোগী। মেনদি সাফাদির সঙ্গে আমাদের কোনো একটি বৈঠকেও কোনো বাংলাদেশি সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন না। আমরা ইসরাইলের কোনো সংস্থার কাছ থেকে কেনো তহবিল পাই না।’