গাজীপুর অফিস: পরীক্ষার হলে যাওয়ার পথে এক এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে আটক করে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ। পরবর্তি সময়ে আদালতে আসামী পক্ষের আইনজীবীকে নিষেধ করায় জামিন শুনানীও অনুষ্ঠিত হয়নি।
আজ বুধবার বেলা পৌনে ১২টায় গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক মোঃ ইকবাল মাসুদের আদালতে ওই ঘটনা ঘটে।
গ্রেফতারকৃত এইচএসসি পরীক্ষার্থী মো: মামুন হোসেন(১৮) এর পিতার নাম মো: হারুন মিয়া। বাড়ি গাজীপুর সদর থানাধীন ধনঞ্জয়খালী গ্রামে। তিনি গাজীপুর সিটি কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিলেন।
১৫ মে গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে কেন্দ্রে হিসাব বিজ্ঞান ১ম পত্র পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় চান্দনা হাই স্কুলের সামনে থেকে পুলিশ তাকে আটক করে।
জানা যায়, মামুনকে পুলিশ আটক করে প্রথমে জয়দেবপুর থানা হাজতে নেয়। সেখানে তাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য দেনদরবার হলেও হিসেবে মিল হয়নি। পরে ১৬ মে মামুনকে জয়দেবপুর থানার হত্যা মামলা নং ১১৬(৪)২০১৬ এ গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় জয়দেবপুর থানা পুলিশ। গতকাল ১৭মে বুধবার মামুনের জামিন শুনানীর দিন ধার্য্য হলেও শুনানী অনুষ্ঠিত হয়নি। হত্যা মামলার বাদী পক্ষের হয়ে গাজীপুর বারের সভাপতি ড. সহিদউজ্জামানের পক্ষ থেকে কয়েকজন আইনজীবী মামুনের আইনজীবী এড.সিরাজুল ইসলামকে আদালতের ভেতরে মামুনের পক্ষে আইনী লড়াই না করার জন্য শ্বাসায়। ঘটনার এক পর্যযায়ে আদালত আসামী মামুনের জামিন শুনানী করতে পরবর্তি তারিখ দিয়ে দেন।
আইনজীবীরা জানান, কোন মামলায় আইনজীবী জড়িত থাকলে তার বিপরীতে আইনজীবী না দাঁড়ানোর সংস্কৃতি থাকায় মামুনের আইনজীবীকে নিষেধ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মামলার বাদী মো: রবিউল আলম একজন আইনজীবী হওয়ায় ওই ঘটনা ঘটেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রবিউল আলম সদ্য পাশ করা একজন আইনজীবী। তিনি এখনো গাজীপুর আইনজীবী সমিতির সদস্য হননি।
জানা গেছে, বাংলাদেশের সংবিধান, আইন ও গাজীপুর বারের সংবিধানে কোথাও নাগরিক অধিকারে বাঁধা দানের কথা উল্লেখ নেই। বিচার পাওয়ার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের রয়েছে যা আইন ও সংবিধান স্বীকৃত ও মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। তাই এ ধরণের সংস্কৃতি ন্যায় বিচারের পরিপন্থী বলে আইনজীবীরা মনে করছেন।
এ দিকে হত্যা মামলায় নাম না থাকলেও একজন এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় পুলিশ ৫৪ ধারায় আটক করে কেন হত্যা মামলায় চালান দিল তা জানা যায় নি। তবে সংশ্লিষ্ট মামলায় এজাহারভ’ক্ত ১৫ আসামীর মধ্যে মামুনের নাম নেই। এবং এই মামলার কোন আসামী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্ধীও দেন নি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গাজীপুর আইনজীবী সমিতির বর্তমান সভাপতি ড. মো; সহিদউজ্জামান গাজীপুর জেলা বিএনপির উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য । তিনি নিজেও গাজীপুর বারের আইনজীবী জনৈক মো: আতাউর রহমানের “ল” চেম্বার ভাঙচ’র মামলার একাধিক আসামীকে জামিন করিয়েছেন। এড. আতাউর রহমান বাদী হয়ে নিজের চেম্বার ভাঙছ’রের অভিযোগ এনে ওই মামলা করেন( নং ২৩৬/১৩, যা বর্তমানে ১ম যুগ্ম দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন।
এছাড়া গাজীপুর বারের একাধিক মামলায় আইনজীবী ও তার আত্মীয় স্বজনের বিপরীতে আইনজীবী মামলা পরিচালনা করেছেন। কিন্তু এইচএসসি পরীক্ষার্থী মামুনের নাম এজাহারে না থাকলেও পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পথে তাকে আটক করে কেন হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হল আর জামিন চাইতেই কেন বাঁধার সৃষ্টি করার অভিযোগ উঠেছে তার সঠিক উত্তর কেউ দিতে পারেননি।
এ বিষয়ে গাজীপুর কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক রবিউল ইসলাম বলেন, এ ধরণের কোন ঘটনা আমার জানা নেই। বিচারিক প্রক্রিয়ায় বাঁধা দেয়ার ঘটনা ঘটলে তা আইন লংঘন।