বহুল আলোচিত পানামা পেপার্সের নথিতে নাম থাকা বাংলাদেশিদের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক অনুসন্ধান করছে। সংসদীয় কমিটিকে এ তথ্য জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে জানানো হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ৬৬ মিলিয়ন ডলারের কোনো হদিসই পাওয়া যাচ্ছে না। এ পর্যন্ত মাত্র ১৫ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ডলার ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে। আরো ১৬ মিলিয়ন ডলার কিছুদিনের মধ্যে ফেরত পাওয়ার আশ্বাস পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে বাকি অর্থ কিভাবে আসবে, আদৌ আসবে কিনা সে বিষয়ে কিছুই জানেন না সংশ্লিষ্টরা।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি আবদুর রাজ্জাক পানামা পেপার্স প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে। কমিটির পক্ষ থেকে তাড়াতাড়ি অনুসন্ধান শেষ করে জড়িতদের তালিকা ও প্রতিবেদন উপস্থাপনের জন্য বলা হয়েছে। কমিটির পরবর্তী বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে। চলতি মাসের শুরুতে পানামা পেপার্স নিয়ে প্রকাশিত একটি তথ্যভাণ্ডারে অন্তত ১৮ বাংলাদেশির তথ্য পাওয়া যায়, যারা বিদেশের ঠিকানা ব্যবহার করে শেল কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার হয়েছেন। দি ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিং জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) ফাঁস করা পানামা পেপার্স থেকে দুই লাখের বেশি অফশোর কোম্পানি, ট্রাস্ট ও ফাউন্ডেশনের ওই তথ্যভাণ্ডার প্রকাশ করে। এদিকে বেসরকারি খাতের এবি ব্যাংকের অফশোর ইউনিটের মাধ্যমে পাচারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকটিতে তলব করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংসদীয় কমিটি।
কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কমিটির পরবর্তী বৈঠকে এবি ব্যাংককে আমরা ডাকবো। সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ১৫ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ডলার ইতিমধ্যে ফেরত পাওয়া গেছে এবং আরো প্রায় ১৬ মিলিয়ন ডলার ফেরত পাওয়ার আশ্বাস পাওয়া গেছে। কমিটি চুরির জন্য দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ প্রয়োগ করে অর্থ ফেরত আনার সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনার জোর সুপারিশ করে। এছাড়া এ ধরনের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করার পরামর্শ দেয়া হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, বৈদেশিক মুদ্রায় পরিচালিত অফশোর ব্যাংকিংয়ের সার্বিক ঝুঁকি হ্রাস এবং তুলনামূলকভাবে মুক্ত ও সহজ অফশোর ব্যাংকিং সুবিধার সার্বিক সুফল নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিদ্যমান অফশোর ব্যাংকিং নীতিমালা সময়োপযোগী করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে বৈঠকে জানানো হয়। আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, আব্দুল ওয়াদুদ, টিপু মুন্সি, ফরহাদ হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এবং আখতার জাহান অংশ নেন।
এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গত ১০ই মে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও রিজার্ভ চুরির বিষয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকেও বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনার নেপথ্যে থেকে কারা কলকাঠি নেড়েছে তাদের খুঁজে বের করার তাগিদ দেয়া হয়। একই সঙ্গে চুরির অর্থ শুধু ফেরত আনা নয়, জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণেরও তাগিদ দেয় ওই কমিটি। এদিকে গতকালের বৈঠকে বৈদেশিক মুদ্রায় পরিচালিত অফশোর ব্যাংকিং নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অফশোর ব্যাংকিংয়ের সার্বিক ঝুঁকি হ্রাস এবং তুলনামূলকভাবে মুক্ত ও সহজ অফশোর ব্যাংকিং সুবিধার সার্বিক সুফল নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিদ্যমান অফশোর ব্যাংকিং নীতিমালা সময়োপযোগী করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।