ভ্রাম্যমাণ আদালতের ক্ষমতা বাড়ছে

Slider বাংলার আদালত
untitled-1_212573
আরও ক্ষমতা পাচ্ছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর আওতাধীন বিভিন্ন অপরাধে শাস্তি বাড়ানো হবে। বর্তমানে ভ্রাম্যমাণ আদালতে অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি দুই বছরের জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা। শাস্তি বাড়িয়ে চার বছরের জেল ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা করার চিন্তাভাবনা করছে সরকার। এটিকে আরও যুগোপযোগী করতে চালু হচ্ছে ই-ভ্রাম্যমাণ আদালত। আদালত পরিচালনায় বিভাগীয় সদরে দেওয়া হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের সুবিধাসংবলিত আধুনিক যানবাহন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের সঙ্গে যুক্ত থাকবে সাত সদস্যের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ ফোর্স। সংশোধনী আনা হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের তফসিলভুক্ত প্রায় শত বছরের পুরনো ১২টি আইনে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ভ্রাম্যমাণ আদালতে বর্তমানে ১১৩টি অপরাধের বিচার হয়। বেশির ভাগ বিচার হয় এ আদালতের তফসিলভুক্ত ১২টি আইনের মাধ্যমে। জেলা প্রশাসকরা বলেছেন, এসব আইন পুরনো হওয়ায় শাস্তি কম। এতে অপরাধীরা সহজেই পার পেয়ে যাচ্ছে। এ কারণে একই ধরনের অপরাধ বারবার হচ্ছে। সম্প্রতি জেলা প্রশাসকরা এমন অভিযোগ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছেন। পরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ভ্রাম্যমাণ আদালত আরও কার্যকর করে শাস্তি বাড়াতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ১২টি চিঠি দিয়েছে। এরপর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় নড়েচড়ে বসেছে। পুরনো আইনগুলো পর্যালোচনা করা শুরু হয়েছে। পাশাপাশি আইন সংশোধন করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোয় চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে সূত্র জানায়।

যেসব আইন ও অধ্যাদেশ সংশোধন করা হবে:  মোটরযান অধ্যাদেশ-১৯৮৩, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৫২, ভবন নির্মাণ আইন-১৯৫২, চিত্তবিনোদন আইন-১৯৩৩, বাল্যবিবাহ রোধ আইন-১৯২৯, বন আইন-১৯২৭, সিনেমা আইন-১৯১৮, বিদ্যুৎ আইন-১৯১০, রেলওয়ে আইন-১৮৯০, জুয়া রোধ আইন-১৮৬৭, দালালি আইন-১৮৭৯, পাসপোর্ট আইন-১৯২০ সংশোধন করা হবে। বর্তমানে অপরাধের ধরন অনেক পাল্টে গেছে। তাই আইন পরিবর্তন জরুরি হয়ে পড়েছে। শাস্তি কঠোর করতেই আইন সংশোধন করা হবে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

এসব আইনে শাস্তি: মোটরযান অধ্যাদেশে শাস্তি ছয় মাস কারাদণ্ড ও দুই হাজার টাকা জরিমানা; নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইনে শাস্তি দুই বছর কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা; ভবন নির্মাণ আইনে শাস্তি দুই বছর কারাদণ্ড; চিত্তবিনোদন আইনে শাস্তি এক হাজার টাকা জরিমানা; বাল্যবিবাহ রোধ আইনে শাস্তি এক মাস কারাদণ্ড ও এক হাজার টাকা জরিমানা; বন আইনে শাস্তি ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও দুই বছরের কারাদণ্ড; সিনেমা আইনে শাস্তি ৫০ টাকা জরিমানা; বিদ্যুৎ আইনে শাস্তি এক বছরের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা; রেলওয়ে আইনে শাস্তি দুই বছরের কারাদণ্ড; জুয়া রোধ আইনে শাস্তি এক মাস কারাদণ্ড ও ১০০ টাকা জরিমানা; দালালি আইনে শাস্তি তিন মাস কারাদণ্ড এবং পাসপোর্ট আইনে শাস্তি তিন মাস কারাদণ্ড। এসব আইনে শাস্তি দ্বিগুণ করতেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে। তারা এটি চূড়ান্ত করে মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করবে বলে সূত্র জানায়।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠি: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালে প্রণীত আইন অনুযায়ী মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হওয়ায় খাদ্যে ভেজাল রোধ, মাদকদ্রব্য অপব্যবহার রোধ, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ, পরিবেশ রক্ষা, অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ ইত্যাদি সামাজিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন হয়েছে। এরই মধ্যে জনপ্রিয় এবং কার্যকর আইন হিসেবে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে মোবাইল কোর্ট আইন-২০০৯-এর তফসিলভুক্ত ১২টি আইনের আওতায় অপরাধের দণ্ড ও জরিমানার পরিমাণ কম হওয়ায় অপরাধের পুনরাবৃত্তি রোধ করা যাচ্ছে না। অপরাধের পুনরাবৃত্তি রোধে আইনগুলো সংশোধন প্রয়োজন।

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান  বলেন, আইনগুলো অনেক পুরনো। এগুলো সংশোধনের প্রস্তাব পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এ সব পর্যালোচনা করা হচ্ছে। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় আইনগুলো সংশোধনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অপর একটি সূত্র জানায়, আইন সংশোধনের পাশাপাশি মোবাইল কোর্টের সঙ্গে যেন সাত সদস্যের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ ফোর্স থাকে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে পুলিশপ্রধানকে চিঠি দেওয়া হবে। এ বিশেষ ফোর্সের নেতৃত্বে থাকবেন পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়োজনে এই ফোর্সের বাইরে আরও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিতে পারবেন। এ ছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ই-মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

শুরুর দিকে নয়টি অপরাধের বিচার মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে করা গেলেও বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৩টিতে। শুরুতে এই কোর্টের কার্যকারিতা নিয়ে সবাই সন্তোষ প্রকাশ করলেও পরে এর যথেচ্ছ ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন ওঠে নানা মহলে। বিশেষ করে হরতাল-অবরোধের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে মোবাইল কোর্টের ব্যবহার নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। সরকারও মনে করে, মোবাইল কোর্টের আইনে রয়েছে নানা সীমাবদ্ধতা। এ নিয়ে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আইন সংশোধনের রূপরেখাও দেন জেলা প্রশাসকরা। এ রূপরেখা অনুযায়ী এরই মধ্যে মোবাইল কোর্ট আইন সংশোধন করা হলেও পূর্ণতা পায়নি। ওই সংশোধনীতে শুধু জুড়ে দেওয়া হয়, কেউ অপরাধ স্বীকার না করলেও তাকে শাস্তি দিতে পারবেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। আর এ ক্ষেত্রে উপস্থিত ব্যক্তির সাক্ষ্য কিংবা পারিপাশর্ি্বক নানা বিষয় বিবেচনায় নিতে পারবেন আদালত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ইন্টারনেটে অপরাধমূলক কর্মকা ের বিচারও তাৎক্ষণিকভাবেই করা যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *