গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর গুলশানে ইতালির নাগরিক সিজার তাভেলাকে গুলি করে হত্যার মধ্য দিয়ে শুরু হয় পরিকল্পিতভাবে বিদেশি হত্যা ও হামলা। তিনি নেদারল্যান্ডসভিত্তিক আইসিসিও নামের একটি প্রতিষ্ঠানের প্রুপ (প্রফিটেবল অপরচুনিটিজ ফর ফুড সিকিউরিটি) কর্মসূচির প্রকল্প ব্যবস্থাপক ছিলেন। এর পাঁচ দিন পর ৩ অক্টোবর রংপুর সদরের আলুটারী গ্রামে
একই কায়দায় জাপানের নাগরিক হোশি কোনিওকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ওই বছরের ১৮ নভেম্বর দিনাজপুরে ইতালির নাগরিক ডা. পিয়েরো পারোলারিকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। বিদেশিদের হত্যা ও হত্যাচেষ্টার পর দেশ-বিদেশে তোলপাড় শুরু হয়। দেশে কর্মরত বিদেশিদের নিরাপত্তায় ‘বিশেষ উদ্যোগ’ নেয় সরকার। কিন্তু এসব মামলার তদন্ত বিলম্বিত হওয়ায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। উগ্রপন্থিদের হামলার রহস্যভেদ ও তা মোকাবেলায় পুলিশের ওপর ভরসা রাখতে পারছেন না ভুক্তভোগীদের স্বজনরা।
তাভেলা হত্যা তদন্ত :সিজার তাভেলা হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত সন্দেহভাজন পাঁচজন গ্রেফতার হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সর্বশেষ এই মামলায় গ্রেফতার করা হয় বিএনপি নেতা সাবেক কমিশনার এম এ কাইয়ুমের ছোট ভাই এম মতিনকে। এর আগে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছিল রাসেল চৌধুরী ওরফে চাক্কী রাসেল ওরফে বিদ্যুৎ রাসেল, মিনহাজুল আরিফিন রাসেল ওরফে ভাগ্নে রাসেল ওরফে কালা রাসেল, তামজিদ আহম্মেদ রুবেল ওরফে শুটার রুবেল ও শাখাওয়াত হোসেন ওরফে শরিফকে। পুলিশ তখন দাবি করেছিল, এদের মধ্যে শুটার রুবেল তাভেলাকে গুলি করে। হত্যার পর রাসেল, মিনহাজুল ও রুবেল মোটরসাইকেলে ঘটনাস্থল থেকে পালায়। কিলিং মিশনে ব্যবহৃত এফজেড ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। সেটির মালিক শরিফ।
গত আট মাসে তাভেলা হত্যা তদন্তের অগ্রগতি কতটুকু_জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এডিসি মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘এটি একটি স্পর্শকাতর মামলা। তদন্তে যাতে কোনো ধরনের ত্রুটি না থাকে, সেটি বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত চলছে। এখনও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রটি উদ্ধার করা যায়নি। এই মামলার চার্জশিট দাখিলে আরও কিছু সময় লাগতে পারে।’
হোশি কোনিও হত্যা তদন্ত :জাপানের নাগরিক হোশি কোনিও হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ইতিমধ্যে নয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে ৫২টি হ্যান্ড গ্রেনেড ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম। গ্রেফতার চারজনের মধ্যে তিনজন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জাপানি নাগরিক হোশি কোনিও হত্যার তদন্তের অগ্রগতির ব্যাপারে রংপুরের পুলিশ সুপার আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘হোশি কোনিও হত্যার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। অল্প সময়ের মধ্যে এই মামলার চার্জশিট দেওয়া যাবে।’
পিয়েরো হত্যাচেষ্টা তদন্ত :ইতালির নাগরিক পিয়েরো পারোলারিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় সন্দেহভাজন ছয় জেএমবি সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। এই হামলার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে দিনাজপুরের পুলিশ সুপার রুহুল আমিন বলেন, পিয়েরো হত্যাচেষ্টার তদন্তে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। সম্পূর্ণ তদন্ত শেষে চার্জশিট দাখিলে আরও কিছুটা সময় লাগতে পারে।
উগ্রপন্থিদের ওপর খোঁজ রাখেন এমন একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, বিদেশিদের ওপর হামলা করে দেশকে পরিকল্পিতভাবে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছিল একটি অশুভ গোষ্ঠী। তবে শেষ পর্যন্ত তারা চূড়ান্তভাবে সফল হয়নি। এসব ঘটনায় উগ্রপন্থিদের ‘ব্যবহার’ করা হলেও নেপথ্যে তাদের একটি গোষ্ঠী অর্থ ও ইন্ধন দিচ্ছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। এসব হত্যার সঙ্গে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। তবে ‘কাট-আউট’ পদ্ধতিতে অপারেশনে অংশ নেওয়ায় মাঠ পর্যায়ে যারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত তাদের বাইরে নির্দেশদাতা ও অর্থদাতাদের ব্যাপারে তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোয়েন্দাদের হাতে নেই।