নীতি নৈতিকতার আবরণে থাকা দেশ প্রেমে নিজেকে উজার করে দিতে পারলেই সাংবাদিকতা করা উচিত। কোন ব্যাক্তি বা গোষ্ঠির হয়ে জাতির বিবেক দাবিদার সাংবাদিকের সাংবাদিকতাকে নগ্ন সাংবাদিকতা বলা ছাড়া আর কোন পথ নেই। সকল স্তরে রাজনীতির অনুপ্রবেশ ঘটার কারণে আজ সাংবাদিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।
নিকট অতীতেও দেখা গেছে, সাংবাদিকেরা সরাসরি রাজনীতি করতেন না। তবে নাগরিক হিসেবে ভোট দিতেন। ভাল কে মন্দ বলতেন না। এখন তার ঠিক উল্টো দেখা যায়। সাংবাদিক কাম রাজনৈতিক নেতা বড় আসনে বসে আছেন। আর পেশাগত সাংবাদিকেরা এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন। ঠিক ওই সময় মাইকে বলা হয়, বিশিষ্ঠ সাংবাদিক মঞ্চে বসা আছেন। তিনি বক্তব্য রাখবেন। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ওই বিশিষ্ঠ সাংবাদিক সাহেব হয়ত জীবনে কোন দিন এক কলমও লিখেননি।
আমি প্রায় দেড় যুগের সাংবাদিকতায় দেখেছি, এমনও সাংবাদিক ছিলেন যিনি কোন দিন এক কলমও লিখেন নি। অথচ তার নামে অনেক সম্পত্তি আর নাম ফলক খঁচিত সড়কেরও নামকরণ হয়েছে। নিজ অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি যে, এমন সাংবাদিকও আমার সহকর্মী ছিলেন বা আছেন যিনি এক কলমও লিখতে পারেন না বা জানেন না। রাজনৈতিক বিবেচনায় বড় ধরণের গনমাধ্যমে কাজ করছেন তিনি। একটি ঘটনা ছোট করে বলা উচিত বলে মনে করছি। একদিন একটি অনেক বড় মাঠে এক মন্ত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখি সাংবাদিক গ্যালারিতে প্রায় দেড় শতাধিক চেয়ার পরিপূর্ন। আমি জায়গা না পেয়ে প্যান্ডেলের বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অনুষ্ঠান কাভারেজ করলাম। সকালে দেখি আমার পত্রিকা ছাড়া তেমন আর কোন পত্রিকায় সংবাদটি নেই। এই ঘটনা দেখে মনে কষ্ট পেলাম এই ভেবে যে, আমি মনে হয় সবচেয়ে বোকা মানুষ। তাদের সম্মানে আমারও সংবাদটি না দেয়া উচিত ছিল।
সাম্প্রতিক সময়ে কিছু সাংবাদিকেরা একটি বানিজ্য করছেন ভাল করেই। ক্ষমতাসীন দলের হয়ে তারা মাঠে পরিচিতি লাভ করেন। যে দল ক্ষমতায় আসে তারা ওই দলের চাটুকার হয়ে যান। এমনও দেখেছি, কোন স্পর্শকাতর সংবাদ কোনও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি। এর কারণ ক্ষমতার কাছে হারিয়ে যাওয়া।
একজন মাদক ব্যবসায়ী বলেছিলেন, পুলিশের কাছে যাওয়ার পরই সাংবাদিকের কাছে যেতে হয়। এর কি কারণ তা আমার জানা নেই। রেললাইনের পকেটমাররাও নাকি সাংবাদিকেরে সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। মাদক হোটেলের ব্যবসা, মদ, জুয়া ও ঝুট ব্যবসা সহ সকল ধরণের অপরাধীরা নাকি সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। জানিনা অভিযোগ গুলো কতটুকু সঠিক। তবে বিনা বাতাসে নদীর জল নড়ে না এটা সঠিক।
২০১৪ সালের প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন থেকে বর্তমান পর্যন্ত সাংবদিকদের আরেকটি বানিজ্য বেড়ে গেছে। তা হল, ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ভেজাল ভোটের সংবাদ থেকে বিরত থাকার জন্য। এই প্যাকেজের আওতায় কতিপয় সাংবাদিক নির্বাচনের আগেই বুক হয়ে যান। ফলে নির্বাচনে যা খুশি তা হউক মিডিয়ায় প্রকাশ হয় কম। যারা প্রকাশ করেন তারা বেকায়দায়ও পড়েন। তবে সকল সাংবাদিক বুক হয়ে যায় এটাও সঠিক নয়।
আমাদের সাংবাদিকতা রাজনীতিকীকরণ হওয়ার ফলে সাধারণ মানুষের শেষ ভরসার জায়গা গনমাধ্যম আজ বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে। সাংবাদিকতা যদি রাজনীতির হাত থেকে মুক্ত না হয় তবে খুব অল্প সময় আছে যে মানুষ সাংবাদিকদেরকেও সম্পূর্নরুপে অবিশ্বাস করতে বাধ্য হবেন।
লেখক: এ কে এম রিপন আনসারী
এডিটর ইনচীফ
গ্রামবাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকম