কুষ্টিয়া : রাত পোহালেই নির্বাচন। কুষ্টিয়া সদর ও কুমারখালী উপজেলার ২২টি ইউনিয়নে পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রার্থী সমর্থন নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে গ্রুপিং লেগেই আছে।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। দ্বৈতনীতি রয়েছে নেতাদের মধ্যে। অনেক নেতা নৌকার পক্ষে জোরালো ভূমিকা রাখার কথা বললেও অনেক ইউনিয়নের বিদ্রোহীদের তারা সমর্থন দিচ্ছেন। আবার বিদ্রোহীদের মাঠ ছাড়ার কথাও বলছেন। এ নিয়ে রীতিমত গ্রুপিং চলছে। এ নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীরা বিপাকে পড়েছেন। ওই নেতাদেরই একটি অংশ আলামপুরের স্বতন্ত্র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ উদ্দিনকে আওয়ামী লীগের অফিসে ডেকে নিয়ে গিয়ে শারীরিকভাবে হেনস্থা করে। পরে আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতার হস্তক্ষেপে বিষয়টির সমাধান হয়। ওই আওয়ামী লীগ নেতাই কয়েকটি ইউনিয়নে বিদ্রোহীদের মদদ দিচ্ছেন। অনেক শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতা বিদ্রোহীদের সমর্থন দিচ্ছেন। প্রশাসনের কাছে এসব বিষয়ে বিস্তর তথ্য রয়েছে। এ নিয়ে দলীয় নেতাদের মধ্যে ভিতরে ভিতরে চরম গ্রুপিং চলছে। তবে বিষয়টি নিয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না। এসব বিষয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও জানেন।
চতুর্থ ধাপে আগামীকাল শনিবার কুষ্টিয়ার দুই উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রচার-প্রচারণাও ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। প্রার্থীরা ছুটছেন দ্বারে-দ্বারে। সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের সঙ্গে লড়াই হবে দলের বিদ্রোহীদের। একই অবস্থা কুমারখালীতেও। সেখানেও অনেকটা এগিয়ে দলের বিদ্র্রোহীরা। ইতোমধ্যে নির্বাচন নিয়ে সদর উপজেলার আলামপুরে লাশ পড়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজ উদ্দিনের কর্মী লাল্টুকে কুপিয়ে হত্যা করেছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আখতারুজ্জামান বিশ্বাসের ক্যাডাররা। এ ঘটনার জের ধরে নির্বাচনে যাতে কোথাও নতুন করে সংঘাত না হয় সে জন্য জেলা ও পুলিশ প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
এদিকে, আলামপুর ইউনিয়নে এখনো ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করছে। লাল্টু হত্যা মামলার প্রধান আসামি আখতার হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে এসে এলাকায় ফের মহড়া দিচ্ছে। দাগী ও হত্যা মামলার আসামিদের সঙ্গে নিয়ে তিনি এলাকায় ঘোরাফেরা করছেন। তিনি প্রচার চালাচ্ছেন, একটি লাশ পড়েছে। প্রয়োজনে আরো লাশ পড়বে। তার এ কথায় এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আখতার নির্বাচনের আগের রাতেই জোর করে ভোট কেটে বাক্স ভরবেন বলে হুমকি দিচ্ছেন।
এছাড়া দিনের বেলা সিরাজের কোনো ভোটারকে কেন্দ্রে আসতে দেয়া যাবে না বলেও তিনি এলাকায় প্রচার চালাচ্ছেন। আখতারের বিরুদ্ধে চরমপন্থি কানেক্টটেড, জামায়াতপ্রীতি দুর্নীতি-অনিয়মের নানা অভিযোগ রয়েছে। তার দুই ভাই চরমপন্থি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে এলাকার লোকজন অভিযোগ করেছেন।
সিরাজ উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ‘হত্যা মামলার আসামি প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। ভোটের মাঠে প্রভাব বিস্তার করছেন।’
এছাড়া সদর উপজেলার আব্দালপুরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরব আলীও আখতারের মতো হুঙ্কার ছাড়ছেন। জেলা যুবলীগের সদস্য জামায়াত নেতার ভাই বিকাশ এলাকায় সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। তিনি রাজাপুর গ্রামসহ আশেপাশের কয়েকটি গ্রামে গিয়ে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভোটের দিন কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য ভোটারদের হুমকি দিচ্ছে। জেলা প্রশাসকের নির্দেশের পর আব্দালপুর ক্যাম্পের আইসি এএসআই সোহাগের সহযোগিতায় আব্দালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, বিকাশসহ আরও কয়েকজন মিলে মোটরসাইকেল মহড়া দিচ্ছে। এ নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
আব্দালপুর ইউনিয়নের কয়েকজন ভোটার অভিযোগ করে বলেন, ‘আরব আলী ও বিকাশ এলাকায় প্রচার চালাচ্ছেন ১ ভোট পেলেও তারা চেয়ারম্যান হবেন। ভোটের আগের রাতে প্রয়োজনে ভোট কেটে বাক্স ভরবেন। কেউ ঠেকাতে পারবে না। ভোটারদের কেন্দ্রে আসার প্রয়োজন নেই। তাদের ভোট আমার কর্মীরা দিয়ে দেবে। তাহলে ভোট দিয়ে লাভ কি?’
সদর উপজেলার গোস্বামী দুর্গাপুরেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী দবির তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে এলাকায় রাম রাজত্ব কায়েম করেছে। দবিরের বিরুদ্ধে মাদক সেবনসহ নারী নির্যাতনের মতো অভিযোগ রয়েছে। সেখানে কোনো প্রার্থীকে মাঠে নামতে দেয়া হচ্ছে না। এছাড়া কুমারখালীর কয়া, সদকী ও পান্টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।
তবে প্রশাসন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন ও পুলিশ সুপার প্রলয় চিসিম সব ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক নির্বাচনে যাতে কোন সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় সে জন্য সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কঠের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন বলেন, ‘নির্বাচন যেকোনো মূল্যে সুষ্ঠু করা হবে। কে কি বলল সেটা দেখার কাজ প্রশাসনের নয়। সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করবে প্রশাসন। অনিয়ম হলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোনো ছাড় দেয়া হবে না।’
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খোদেজা খাতুন বলেন, ‘৮ জন ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে নেমেছে। কোনো অনিয়ম করার সুযোগ নেই। জিরো টলারেন্সে প্রশাসন।