স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ,
ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার ফলসি গ্রামে বৃহস্পতিবার সকালে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষের সময় ভীত সন্ত্রস্ত্র হয়ে দিদার হোসেন মন্ডল (৫৫) নামে এক ব্যক্তির হার্ট এ্যটাকে মৃত্যু হয়েছে। এ সময় উভয় পক্ষের অন্তত ৩৫ জন আহত হন।
নিহত দিদার মন্ডল ফলসি গ্রামের জলিল মন্ডলের ছেলে। তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী ফজলুর রহমানের সমর্থক ছিলেন। আহতদের মধ্যে ভুটার, মোলায়েম ও টিটোর অবস্থা আশকাজনক হওয়ায় তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
আওয়ামীলীগের নৌকার প্রার্থী বজলুর রহমান ও বিদ্রোহী প্রার্থী ফজলুর রহমানের সমর্থকদের মধ্যে নির্বাচনে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এ সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে ভুটার, মোলায়েম, জমির, শাহিদ, টিটো, হাফিজুর, আহসান, রবিউল, আশিক, ইন্তাদুল, তারাচাঁদ, রইচ উদ্দীন, আতিয়ার রহমান, মিঠু, রেনজার হোসেন, নবী উদ্দীন, সোলায়মান, রেন্টু, আশিকুল, আলম, পিকুল, রায়হান, মতিয়ার রহমান, ওহিদুল, মালেক, রায়হান (২), সোনা মিয়া, রফি উদ্দীন সরদার, লাল্টু মিয়া, রমজান আলী ও রিপনসহ ৩০ জনকে হরিণাকুন্ডু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকীরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী ফজলুর রহমান অভিযোগ করেন, নৌকার প্রার্থী বজলুর রহমানের সমর্থকরা গত কয়েকদিন ধরে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিয়ে আসছিলো। বুধবার রাতে ফলসী গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে ঢুকে তারা ভোট কেন্দ্রে যেতে নিষেধ করতে থাকে। তিনি আরো বলেন, এ নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে তার (চশমা প্রতিক) সমর্থকরা প্রতিবাদ করলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।
সংঘর্ষের এক পর্যায়ে তার সমর্থক দিদার মন্ডলকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলে ক্যাইজার মাঠেই তিনি মৃত্যু বরণ করেন। এদিকে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী বজলুর রহমান অভিযোগ করেন, পরিকল্পিত ভাবে প্রতিপক্ষ ফজলুর লোকজন তার সমর্থকদের উপর হামলা চালায়। এতে তার অন্তত ৩০ জন সমর্থক জখম হয়েছেন।
প্রত্যাক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে দুই পক্ষ ঢাল ভেলা, সড়কি, দেশী তৈরী অস্ত্র ও ইটপাটকেল নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে সংঘর্ষে লিপ্ত বিপুল সংখ্যক মানুষ দেখে নীরব দর্শকের মতো দাড়িয়ে থাকে। দেড়ঘন্টা ধরে ক্যাইজা চলে। এ সময় ফলসি গ্রাম রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। মানুষ ভয়ে এদিক ওদিক ছুটোছুটি করতে থাকে। হরিণাকুন্ডু থানার ওসি মাহতাব উদ্দীন জানান,
ফলসি গ্রামে বৃহস্পতিবার সকালে সংঘর্ষের সময় দিদার নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। বর্তমানে ফলসি গ্রামে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে তিনি জানান। হরিণাকুন্ডু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা পারভিন জানান, সংঘর্ষের সময় একজন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে তিনি শুনেছেন।
এদিকে হরিণাকুন্ডুর ফলসি গ্রামে আওয়ামীলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের পর গ্রামটি এখন পুরুষ শুন্য। মহিলা ও শিশুরাও নতুন করে সংঘর্ষের আশংকরায় ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। হরিণাকুন্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডাঃ লিটন গাঙ্গুলী জানান, দিদার মন্ডল ক্যাইজার মাঠে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে আনা হয়।
তবে তিনি আঘাত জনিত কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারেন। ওই হাসপাতালের আরোক চিকিৎসক ডাঃ আলমগীর হোসেন জানান, বর্তমান হরিণাকুন্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩০ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। ভর্তিকৃতরা বেশির ভাগ ইটের আঘাতে আহত হয়েছেন। হরিণাকুন্ডু থানার ওসি মাহতাব উদ্দীন জানান, ফলসি গ্রামে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। তবে এখনো কেও গ্রেফতার হয়নি।