ঢাকা : একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মো. নাসিরউদ্দিন আহমেদ ও তার সহোদর আইনজীবী শামসুদ্দিন আহমেদসহ ৫ রাজাকারের দণ্ড ঘোষণা করেছেন ট্রাইব্যুনাল। এদের মধ্যে চারজনকে ফাঁসির দণ্ড এবং একজনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩ মে) সকাল পৌনে ১১টা থেকে ৬২৮ প্যারাগ্রাফ সম্বলিত ৩৩০ পৃষ্ঠার রায়ের সারসংক্ষেপ পড়া শরু করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যানের প্রারম্ভিক বক্তব্যের পর বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদী ৩৩০ পৃষ্ঠার রায়ের সার সংক্ষেপ পড়া শুরু করেন। এরপর বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম রায়ের বাকি অংশ পড়বেন এবং সবশেষে বিচারপতি আনোয়ারুল হক সাজা ঘোষণা করবেন। এটি মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার ২৩তম রায়।
পাঁচ আসামির মধ্যে কেবল শামসুদ্দিন কাঠগড়ায় উপস্থিত রয়েছেন। তার ভাই সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মো. নাসিরউদ্দিন আহমেদ, একাত্তরের ‘রাজাকার কমান্ডার’ গাজী আব্দুল মান্নান, আজহারুল ইসলাম ও হাফিজ উদ্দিনকে পলাতক দেখিয়েই রায় ঘোষণা করছে ট্রাইব্যুনাল।
উল্লেখ্য, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের ৫ জনের বিরুদ্ধে ৭টি অভিযোগের ওপর রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ হয় ট্রাইব্যুনালে।
এ মামলার অভিযুক্ত পাঁচ আসামির মধ্যে অ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন আহমেদ গ্রেপ্তার আছেন। আর পলাতক বাকি চার আসামি হলেন— শামসুদ্দিনের সহোদর সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মো. নাসিরউদ্দিন আহমেদ এবং রাজাকার কমান্ডার গাজী আব্দুল মান্নান, আজহারুল ইসলাম ও হাফিজ উদ্দিন।
এ মামলায় অভিযোগের ভিত্তিতে অন্তত ৪০ জনকে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করা হতে পারে বলে প্রসিকিউশন পক্ষ জানিয়েছে।
এর আগে গত ২৬ নভেম্বর তদন্তকারী কর্মকর্তা আতাউর রহমান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত প্রসিকউটর সৈয়দ হায়দার আলীর কাছে ৪৫০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
নাসির উদ্দিন আহমেদ ও শামসুদ্দিন আহমেদের বাড়ি কিশোরগঞ্জে। নাসির উদ্দিন আহমেদ ও শামসুদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার বিদ্যানগর, আয়লা, ফতেপুর বিল, কিরাটন বিলসহ আশেপাশের কয়েকটি গ্রামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকার বাহিনী নিয়ে অত্যাচার নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।
২০১৩ সালের ৬ জুন তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। এক বছর পাঁচ মাস ১৮ দিন তদন্ত করে গত ২৪ নভেম্বর তদন্ত কাজ শেষ হয়।
অভিযুক্তদের নাসিরউদ্দিন ও শামসুদ্দিনের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনীদের সহায়তায় হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের পাচঁটি অভিযোগে তদন্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে।
এর আগে গত ২১ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপক্ষে অভিযোগ গঠনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল-মালুম, সুলতান মাহমুদ সীমন ও রেজিয়া সুলতানা চমন। অপরদিকে ৪ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের বিপক্ষে শুনানি করেন আসামিদের রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আব্দুশ শুকুর খান।