বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনে অপরাধীদের বিচারে ‘দায়মুক্তি’ বড় বাধা বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাসগুপ্ত। তিনি বলেছেন, বিচারহীনতা ও দায়মুক্তির কারণে সংখ্যালঘু নির্যাতনে সন্ত্রাসীরা উৎসাহিত হচ্ছে। অপরাধীদের শাস্তি যেন নিশ্চিত হয়- এজন্য রাষ্ট্রকে ভূমিকা রাখার আহবান জানিয়েছেন তিনি। সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর রুনি মিলনায়তনে ঐক্য পরিষদ আয়েজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
যশোরের চৌঁগাছা ও অভয়নগরের মালোপাড়া, মুন্সিগঞ্জের লৌহজং, গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়াসহ গাজীপুরের কালিয়াকৈরে সংগঠিত সাম্প্রদায়িক সহিংস পরিস্থিতি সরজমিনে পরিদর্শন শেষে প্রতিবেদন উপস্থাপনের জন্য এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ঐক্য পরিষদ। লিখিত বক্তব্যে রানা দাসগুপ্ত বলেন, যশোরের পাশাপোল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহীন ও তার বাহিনীর অত্যাচারে ইতিমধ্যে ৩০টি হিন্দু পরিবার দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছে। অভয়নগরের মালোপাড়ায় হিন্দু সম্প্রদায় ২০১৪ সালে যে ভয়াবহ অত্যাচারের শিকার হয়েছিল তা থেকে তারা এখনো আতঙ্কমুক্ত হতে পারেনি। কারণ মালোপাড়ার ঘটনার জন্য আজও কারও শাস্তি হয়নি। তিনি বলেন, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বৃদ্ধ সাধু পরমানন্দ রায়কে কুপিয়ে হত্যাকারি শরিফুল শেখকে মানসিক রোগী হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার ৫ নম্বর জলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশিষ বড়ালকে কুপিয়ে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে।
সিলেট নগরীর চালিবন্দর ভৈরব মন্দিরে হামলাকারী খলিলকেও মানসিক রোগী সাজানোর চেষ্টা করা হচ্ছে-যা প্রকারান্তরে অপরাধীকে আড়ার করার শামিল। টাঙ্গাইলের গোপালপুরে দর্জি দোকানি নিখিল জোয়ার্দার হত্যা ও এর সঙ্গে আইএস’র সম্পৃক্ততা প্রসঙ্গে ঐক্য পরিষদের এই নেতা বলেন, বাংলাদেশে আইএস’র অস্তিত্ব আছে কি নেই-সেটি বলতে পারবো না। তবে, আইএস’র মদদপুষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠীরাই এসব হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। তিনি বলেন, চলতি বছরের মার্চ মাসে ইউপি নির্বাচনের পূর্বাপর সময়ে ঐক্য পরিষদের হিসেব অনুযায়ী অন্তত ৫৬৫ টি সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটেছে। উপস্থিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রানা দাসগুপ্ত বলেন, সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার নির্যাতনে সাম্প্রদায়িকতা যেমন আছে, তেমনি রাজনৈতিক কারণও আছে।
সাম্প্রদায়িক, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির লক্ষ্য হচ্ছে সংখ্যালগুকে এ দেশ থেকে বিতারিত করা। আর প্রধানমন্ত্রীর ভাষায় যারা ‘আগাছা’ তাদের উদ্দেশ্য হলো রাজনৈতিক সুবিধাকে ব্যবহার করে সংখ্যালগুদের জায়গা জমি দখল ও লুটপাট করা। তিনি বলেন, অতীতে বিএনপি-জামায়াতের সময়েও আমরা শান্তি, স্বস্থি পাইনি, এখনও আমরা শান্তি স্বস্থি পাচ্ছিনা। সংখ্যালঘু নির্যাতনকারিদের ক্ষেত্রে এখনো দায়মুক্তি রয়ে গেছে। একারণে সন্ত্রাসীরা আরও উৎসাহিত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমরা ভাবছি ২০১৯ সালের নির্বাচনের কথা। সংখ্যালঘুদের অবস্থা তখন কেমন হবে এ নিয়ে আমরা এখনই শঙ্কিত।
সংখ্যালঘুদের যেন দেশ ত্যাগ করতে না হয়। তারা যেন আশায় বুক বাধতে পারে এজন্য রাষ্ট্রের ভূমিকা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন রানা দাসগুপ্ত। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জয়ন্ত সেন দিপু, ঐক্য পরিষদ নেতা ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী প্রমুখ।