বয়স তাঁর পঞ্চাশের ওপরে। নাম আলী আকবর। ঝিনাইদহের স্থায়ী বাসিন্দা। তাঁর ডান হাতের কবজির নিচ পর্যন্ত নেই। এক পায়ের সমস্যার জন্য নিজে হাঁটতে পারেন না। অন্যের সাহায্য নিয়ে চলাচল করেন। কয়েক মাস আগে ব্রেন স্ট্রোক করার পর তাঁর এই দশা।
এ বিষয়টি জানলেও আকবরের অন্য হাতে হাতকড়া পরিয়ে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে তুলেছে পুলিশ। গত মার্চ মাসে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় করা একটি চুরির মামলায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তাঁকে সাত দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদনও করে পুলিশ।
ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান সরকারি কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু বলেন, যে আসামিকে ধরে আদালতে তোলা হলো, তাঁর এক হাত কাটা। যিনি স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করতে পারেন না। যাঁর পালানোর কোনো ক্ষমতা নেই। সেই আসামিকে পুলিশ হাতকড়া পরিয়ে অমানবিক কাজ করেছেন। এটা অন্যায়। অবশ্যই ঘটনার তদন্ত হওয়া উচিত।
আকবরের আইনজীবী আদালতে জমা দেওয়া এক আবেদনে উল্লেখ করেছেন, তিনি খুব অসুস্থ। তাঁর বয়স ৬০ বছর। একজন পঙ্গু ব্যক্তি।
হাতকড়া পড়ানোর বিষয়ে পুলিশ প্রবিধানের ৩৩০ ধারায় বলা হয়েছে, ‘গ্রেপ্তারকৃত বন্দী এবং বিচারাধীন বন্দীকে তাহাদের পলায়ন বন্ধ করার জন্য যাহা প্রয়োজন তাহার চাইতে বেশি কড়াকড়ি করা উচিত নয়। হাতকড়া বা দড়ির ব্যবহার প্রায় ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় ও অমর্যাদাকর। বয়স বা দুর্বলতার কারণে যাহাদের নিরাপত্তা রক্ষা করা সহজ ও নিরাপদ, তাহাদের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি করা উচিত হবে না।’
সরেজমিন দেখা যায়, আজ সোমবার দুপুরে আসামি আকবরকে আদালত পুলিশের কনস্টেবল মো. সিদ্দিক ও মো. কামাল দুজনে ধরে ঢাকার মহানগর হাকিম খুরশীদ আলমের
আদালতে তোলেন। দুজনের কাঁধে ভর করে আলী আকবর হাঁটেন। তখন তাঁর বাঁ হাতে হাতকড়া পরানো ছিল। শুনানি শেষে আদালত তাঁর এক দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শুনানির পর আসামির কাঠগড়াতেও তাঁর হাতে লাগানো ছিল হাতকড়া। পরে আদালতের হাজতখানায় নেওয়ার সময়ও হাতকড়া ছিল। আরও দেখা যায়, রিমান্ড শুনানির পর আলী আকবরের বোনজামাই জাকিরুল তাঁকে ভাত তুলে খাইয়ে দিচ্ছেন।
আদালতের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আসামি আকবরের বোনজামাই জাকিরুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘আমার ভগ্নিপতি আলী আকবর অসুস্থ। কয়েক মাস আগে ব্রেন স্ট্রোক করার পর থেকে তিনি আর স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করতে পারেন না। নিজে হাতে খাবার তুলে খেতেও পারেন না।’ তিনি জানান, ঝিনাইদহে আকবরের ধানের চাতাল রয়েছে।
আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (উত্তরা থানা) উপপরিদর্শক উজির আলী বলেন, চুরির মামলার সন্দেহভাজন আসামি হলেন আলী আকবর। মার্চ মাসে গ্রেপ্তারের আবেদন করলেও আসামি ঝিনাইদহে থাকায় তাঁকে আনা সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি তাঁকে ঝিনাইদহ থেকে আদালতের মাধ্যমে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। আজ তার রিমান্ড শুনানি হয়েছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের হাজতখানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন বলেন, তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবেন না।
২০১৫ সালের ৬ নভেম্বর উত্তরা পশ্চিম থানাধীন রানাভোলা অ্যাভিনিউয়ের সামনে থেকে একটি প্রাইভেট কার চুরি হয়। এ ঘটনায় ওই বছরের ৮ নভেম্বর উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা হয়। সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে আকবরকে।