গতকাল কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে হুগলি, দক্ষিণ চবি্বশ পরগনা ও কলকাতা দক্ষিণের ৫৩টি আসনে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। এ দিনের ভোটে প্রার্থী ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ একাধিক তারকা রাজনীতিক। গত দফাগুলোয় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে ছিল নির্বাচন কমিশন। এ দফায় বেশ কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তবে সহিংসতা এড়ানো যায়নি। মোটামুটি শান্তিপূর্ণ ভোটেও কয়েক স্থানে বিচ্ছিন্ন সহিংসতা ঘটেছে। এতে অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন। দিনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল বিদায়ী বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার দক্ষিণ চবি্বশ পরগনার সাতগাছিয়া আসনের তৃণমূল প্রার্থী সোনালি গুহর বিরুদ্ধে অশান্তি সৃষ্টির অভিযোগে নির্বাচন কমিশনের অভিযোগ দায়ের। ভোট শুরুর পর সাতগাছিয়ায় নন্দভাঙা হাইস্কুলের বুথে ঢুকতে গেলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে বচসায় জড়ান সোনালি। এক পর্যায়ে সেখানেই প্রতিবাদে বসে পড়েন তিনি। এরপর কমিশন তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভবানীপুর আসনের মিত্র ইনস্টিটিউশন কেন্দ্রে ভোট দেন। কেন্দ্রের বাইরে বের হয়ে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সামনে ‘ভি’ চিহ্ন দেখিয়ে বলেন, ‘আমরাই ক্ষমতায় আসছি।’ এ আসনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী জোটপ্রার্থী কংগ্রেসের দীপা দাশমুন্সি এবং বিজেপির প্রার্থী নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর প্রপৌত্র চন্দ্র বসু। দীপা দাশমুন্সি ভোট দেওয়ার পর বলেন, ‘নির্বাচন ভালো হয়েছে। আমরা খুশি। ভবানীপুরে আমি জিতব।’ তার গাড়ি ধাওয়া করার অভিযোগ ওঠে তৃণমূল কাউন্সিলর অসীম বসুর বিরুদ্ধে। মমতার ভাতিজা তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ভোট দিয়ে বলেন, দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরবে তৃণমূল। সিপিএমের সাংসদ মহম্মদ সেলিম বলেন, মানুষ আজ পরিষ্কার করে দিয়েছে তারা আর মমতাকে চায় না।
এ দফার অন্য তারকা প্রার্থীরা হলেন- তৃণমূলে সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মনীশ গুপ্ত, ফিরহাদ হাকিম, জাভেদ খান, অরূপ বিশ্বাস, পার্থ চট্টোপাধ্যায়সহ একাধিক মন্ত্রী, বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, রয়েছেন চিত্রতারকা দেবশ্রী রায়, গায়ক ইন্দ্রনীল সেন, ফুটবলার রহিম নবী। জোটের হেভিওয়েটরা হলেন- সিপিএমের রবীন দেব, সুজন চক্রবর্তী, সাবেক ক্রীড়াবিদ জ্যোতির্ময়ী সিকদার, সাবেক মন্ত্রী কান্তি গাঙ্গুলি, ‘আমরা আক্রান্ত’ সংগঠনের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র। এ দফায় ভোটার ছিলেন ১ কোটি ২৩ লাখ ৯৯ হাজার। প্রার্থী ৩৪৯ জন।
বিদায়ী বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার দক্ষিণ চবি্বশ পরগনার সাতগাছিয়া আসনের তৃণমূল প্রার্থী সোনালি গুহ। ভোট শুরুর পর নন্দভাঙা হাই স্কুলের বুথে ঢুকতে গিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে বচসায় জড়ান। একটি বুথে ইভিএম খারাপ হয়ে যাওয়ায় কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে ভোট গ্রহণ। তারই জেরে বিক্ষোভে বসে পড়েন সোনালি গুহ। অন্যদিকে, কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাপট এদিন ছিল চোখে পড়ার মতো। রাজ্যের মন্ত্রী কলকাতা বন্দরের তৃণমূল প্রার্থী ফিরহাদ হাকিমের গাড়িতে লাগানো লাল বাতি খুলে দেয় কেন্দ্রীয় বাহিনী।
বেহালা পূর্বের জোট সমর্থিত নির্দলীয় প্রার্থী অম্বিকেশ মহাপাত্রের এজেন্টের পরিবারকে হুমকি দেওয়া হয়। ভোটারদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে কসবা থেকে ছয়জনকে আটক করে পুলিশ। লেক এলাকার কেয়াতলা লেন থেকে ৬টি বোমা উদ্ধার করে পুলিশ। কলকাতার বন্দর এলাকায় তৃণমূল-সিপিএম সংঘর্ষ হয়। পুলিশ সেখানে লাঠিচার্জ ও দু’জনকে আটক করে। দক্ষিণ চবি্বশ পরগনার ভাঙড়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সামনে তৃণমূলের প্রার্থী রেজ্জাক মোল্লা ও আরাবুল ইসলামের সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন দু’জন।