মহান মে দিবস আজ

Slider জাতীয়

 

12224_f2

 

 

 

 

 

 

 

 

বিশ্বের কোটি কোটি শ্রমজীবী মানুষের অধিকার ও দাবি আদায়ের মহান মে দিবস আজ। ঐতিহাসিক এ দিনটিকে শ্রমিকরা যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করবেন। আয়োজন হবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার। ১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা উপযুক্ত মজুরি এবং দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। কল-কারখানা তখন গিলে খাচ্ছিল শ্রমিকের গোটা জীবন। অসহনীয় পরিবেশে ১৬ ঘণ্টা প্রতিদিন কাজ করতে হতো। সপ্তাহে ছয় দিন কাজ করে শ্রমিকের স্বাস্থ্য একেবারে ভেঙে যাচ্ছিল। শ্রমজীবী শিশুরা হয়ে পড়েছিল কঙ্কালসার। তখন দাবি উঠেছিল, কল-কারখানায় শ্রমিকের গোটা জীবন কিনে নেয়া যাবে না। এই দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলনের সময় ওই বছরের ১লা মে শ্রমিকরা ধর্মঘট আহ্বান করে।

প্রায় ৩ লাখ মেহনতি মানুষ ওই সমাবেশে অংশ নেয়। একপর্যায়ে আন্দোলনরত ক্ষুব্ধ শ্রমিকদের রুখতে মিছিলে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এতে পুলিশের গুলিতে বহু শ্রমিক হতাহত হন। পরে আন্দোলনে অংশ নেয়ার অপরাধে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় গ্রেপ্তারকৃত ৬ শ্রমিককে। কারাগারে বন্দিদশায় এক শ্রমিক নেতা আত্মহননও করেন। পরের বছর প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে দিনটিকে মে দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় যথাযোগ্য মর্যাদায়। পালন করা হয় ব্যাপক কর্মসূচি। দিনটি উপলক্ষে আজ সরকারি সকল অফিস-আদালত বন্ধ থাকবে।

একই সঙ্গে বন্ধ থাকবে সংবাদপত্র অফিসও। এছাড়া মে দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে আজ সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র, নিবন্ধ ও সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে। বেতারসহ বিভিন্ন টিভি চ্যানেলগুলোতে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার হচ্ছে। দিনটি উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট তার বাণীতে বলেন, শ্রমিকের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশেষ করে তাদের ন্যায্য মজুরি, পেশার বিকাশ, কাজের সুষ্ঠু ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টি এবং মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ অতীব জরুরি। আমি শ্রমজীবী মানুষের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বিপুল জনগোষ্ঠীকে জনশক্তিতে পরিণত করতে সংশ্লিষ্ট সবাকে আহ্বান জানাই। প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, মালিক-শ্রমিকের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সুসম্পর্ক বজায় রাখা ও নিরাপদ কর্ম পরিবেশ ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা বিভিন্নমুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এক বাণীতে বলেন, মানব সভ্যতার অগ্রযাত্রা ও সমৃদ্ধ অর্থনীতি অর্জনে শ্রমজীবী মানুষের অবদান স্মরণে রেখেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল শ্রমিকদের ন্যায্য দাবির প্রতি সম্মান ও শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। শ্রমিকের অধিকার আদায় ও তা সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি পালনে আমরা কখনও পিছপা হইনি। এদিকে মহান মে দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও শ্রমিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ মে দিবসের এক বাণীতে বলেন, অম্লান মে দিবসের অন্তর্নিহিত শক্তি ও তাৎপর্য আমাদের জাতীয়, রাষ্ট্রীয় এবং সমাজ জীবনের সর্বক্ষেত্রে অনুসরণ করে চলতে হবে। শিকাগোর শ্রমিক আন্দোলনের সেই মহান নেতা পারসন্স ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলে গেছেন, আমাদের প্রাণ উৎসর্গ করছি পৃথিবীর সকল মানুষের দাবি প্রতিষ্ঠার জন্য। এই মহান দিবসে আমার প্রত্যাশা- শ্রমিকের থাকে যেন সবল দুটি হাত, সতর্ক দুটি চোখ, সংযত দুটি ঠোঁট, সুন্দর একটি মন। তাদের থাকে যেন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসার নিশ্চয়তা। অভিনন্দন জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান এবং বন ও পরিবেশমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। দিনটি উপলক্ষে বিকাল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর রামপুরা আফতাবনগর ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শ্রমিক সমাবেশের আয়োজন করেছে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র। একই দিন বিকাল ৫টায় রাজধানীর নাবিস্কোতেও শ্রমিক সমাবেশ করবে সংগঠনটি। সকাল নয়টায় রাজধানীর কমরেড মণি সিংহ সড়কের মুক্তিভবনের সামনে সমাবেশ করবেন বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি। বিকাল ৩টায় ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করেছেন শ্রমিক ঐক্য। সকাল সাড়ে ১০টায় প্রেস ক্লাবের সামনে শ্রমিক সমাবেশ ও বর্ণাঢ্য র‌্যালির আয়োজন করেছেন বাংলাদেশ পোশাক শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *