‘হাস্যকর’ অভিযোগে বাবা আটক: শফিক রেহমানের ছেলে

Slider জাতীয়

 

11967_shafiq

 

 

 

 

 

 

গ্রেপ্তার হওয়া সাংবাদিক শফিক রেহমানের ছেলে বলছেন, তার পিতাকে হাস্যকর অভিযোগে আটক করা হয়েছে। ৮১ বছর বয়সী এ সম্পাদকের ছেলের ভাষ্য, তার পিতা ‘একটি মশাও মারতেন না’। বৃটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এসব বলা হয়েছে। সেখানে আরও বলা হয়, পুলিশের মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে হত্যার ষড়যন্ত্রে শফিক রেহমানের জড়িত থাকার প্রমাণ তাদের কাছে আছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি বহুল প্রচারিত পত্রিকা অনেক বছর স¤পাদনা করেছেন রেহমান। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী হাসিনার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ও বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়ার বক্তৃতালেখকও ছিলেন তিনি। গ্রেপ্তারের আগে তিনি জনপ্রিয় একটি মাসিক ম্যাগাজিনের স¤পাদক ও একটি বিরোধীঘেঁষা থিঙ্কট্যাংকের প্রধান ছিলেন।
যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের দ্বৈত নাগরিক শফিক রেহমানের ছেলে সুমিত রেহমান বসবাস করেন যুক্তরাজ্যেই। তিনি দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, তার পিতার নিষ্কলুষতা নিয়ে তিনি নিশ্চিত। তার মতে, কথিত ষড়যন্ত্র ‘স¤পূর্ণ হাস্যকর’। ৫৭ বছর বয়সী সুমিত রেহমান বলেন, বাবা আমাকে ২০১১ সালে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক ব্যক্তি তার কাছে দাবি করছে যে, সজীব ওয়াজেদ জয়ের আর্থিক বিষয়াদি স¤পর্কে তার কাছে তথ্য আছে। ওই তথ্য এক এফবিআই এজেন্টের কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে পাওয়া।
সুমিত বলেন, ‘আমার বাবা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন ওই নথিপত্র ব্যবহারের উদ্দেশ্যে। তবে ২০১৩ সালে ওই ব্যক্তি ও এফবিআই এজেন্টকে আমেরিকায় গ্রেপ্তার করে কারাগারে নেয়া হয়।

যখন বাংলাদেশী লোকটি মুক্ত হয়, কিছু কারণে পুরো ঘটনাকে প্রধানমন্ত্রীর ছেলেকে অপহরণের ষড়যন্ত্রের নামে মোড় দেয়ানো হয়।’ তিনি বলেন, ‘এরপর হঠাত করে এ বছরের ১৬ই এপ্রিল, আমার বাবার ঘরে একদল লোক টিভি-সাংবাদিক পরিচয়ে ঢুকে। এরপর তারা ঘোষণা দেয় তারা আসলে তদন্ত সংস্থার লোক। এ-ও জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রীর ছেলেকে অপহরণ ও হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এরপর বাবাকে রিমান্ডে নেয়া হয়। এর অর্থ, আইনজীবী বা দেখা করার অধিকার বা কোন কিছুর অধিকার ৫-৬ দিন পাচ্ছেন না আপনি। আদালতে তাকে ১০ মিনিটের জন্য নেয়া হয়। সেখানে পুলিশ বলে, তারা আরও ১০ দিনের জন্য বাবাকে রিমান্ডে নেবে।’ প্রসঙ্গত, বুধবার শফিক রেহমানকে ঢাকায় একটি শুনানি শেষে কারাগারে পাঠানো হয়। সুমিত জানান, তিনি গ্রেপ্তারের পর থেকে তার পিতার সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। তার মতে, গ্রেপ্তারের ঘটনা ‘পুরোপুরি আকস্মিক’।
সুমিত বলেন, ‘আমার মা বড়জোর ১০ মিনিটের জন্য আদালত কক্ষে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পেরেছিলেন। আমরা দু’ জনই খুব চিন্তিত। সাধারণ ক্ষেত্রে, অর্থাৎ যদি তিনি এত পরিচিত না হতেন বা বৃদ্ধ না হতেন, তাহলে তাকে স্বীকারোক্তি দেয়ার আগ পর্যন্ত নির্যাতন করা হতো। আমরা আশা করছি, খ্যাতির কারণে তিনি বেঁচে যাবেন। কিন্তু বিপদও আছে, যার ফলে বিপরীত প্রভাব ঘটতে পারে। তিনি কোন মশাও মারতেন না।’
গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, ২০১৩ সালের পর থেকে আটককৃত বিরোধীপন্থী স¤পাদকদের মধ্যে রেহমান তৃতীয়। খালেদা জিয়া তার নিশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন। দেশটিতে ক্রমাগত সেকুলার ব্লগার ও প্রকাশকদের হত্যা এবং গণমাধ্যম স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে বর্ধিষ্ণু উদ্বেগের মধ্যেই ওই গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটে।
সুমিত বলেন, ‘সরকার অনেক সাংবাদিককে আটক করে আসছে।

আমাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। শুধুমাত্র রাশিয়ার পরেই আমাদের অবস্থান। আমার বাবা সবসময় সীমা লঙ্ঘণ না করার দিকে সতর্ক থাকতেন। তিনি কখনই মানহানি বা এ ধরণের কিছু করতেন না। অন্য সাংবাদিকরা এসবের জন্য আটকের হয়েছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আমার বাবাকে এসবের দোহাই দিয়ে ধরতে পারছিলেন না। তাই এই একটিমাত্র পথই হবে তার মুখ বন্ধ করার। এটি পুরোটাই ব্যক্তিগত। বিরোধী দলের অনেক লেখক ও উপদেষ্টাকে আটক করা হয়েছে। অন্য স¤পাদককে রিমান্ডে রাখা হচ্ছে প্রায় ৩ বছর ধরে। প্রতিবার ১০ দিন করে। কোন সাক্ষাৎপ্রার্থী বা আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করার অনুমতি ছাড়া।’
সুমিত বলেন, তারা মা খুবই কষ্টে আছেন। তার ভাষায়, ‘কয়েকদিনের মধ্যেই তারা নিজেদের ৫৭ তম বিবাহবার্ষিকী আয়োজন করতে যাচ্ছিল। তিনি বাংলাদেশের চিরাচরিত বাসায় বসে থাকা মা নন। তিনি ইংল্যান্ডে ডেপুটি প্রধানশিক্ষক ছিলেন। বাংলাদেশে ডেমোক্রেসি ওয়াচ নামে এনজিও চালান তিনি। তিনি নিজেই হাইপ্রোফাইল ব্যক্তি।’
নিজের পিতাকে সুমিত বর্ণনা করেন একটু অন্যভাবে। তার মতে, তার পিতা ‘সবচেয়ে বৃটিশমনা বাংলাদেশী। বিশ্বকাপ জয়ের পর তিনি ইংল্যান্ডের প্রত্যেকটি নিজস্ব খেলা খেলেছেন। তিনি মন্টি পাইথন, ফেলিনি, উডি এলেন পছন্দ করেন। বাংলাদেশে তার সিনেমা ক্লাব আছে। তিনি খুবই সংস্কৃতিমনা। ইংল্যান্ডে তিনি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ছিলেন। তবে লেখালিখি শুরুর পর তিনি এ পেশা ছেড়ে দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *