মানুষের বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে’

Slider জাতীয়

11939_b1

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেছেন, মানুষের বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত  করতে হবে, যাতে কেউ বিনা বিচারে কারাগারে আটক থেকে কষ্ট না পায়। তিনি বলেন, অনেকে বিচার পায় না। অতীতে আইনগত সহায়তার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। মানুষের সব মৌলিক অধিকারের পাশাপাশি বিচার পাওয়ার অধিকারও প্রতিষ্ঠিত করতে আমরা কাজ করছি। নিজেকে একজন বিচারবঞ্চিত ভুক্তভোগী আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে আমাদেরকে বিচার পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত, এমনকি খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি প্রদান, জনপ্রতিনিধি বানিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় আইনগত সুবিধা প্রদান দিবসের অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন। আইন মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় সংসদের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক বিভাগ অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ’৯৬ সালে সরকার গঠনের পর বিচার বিভাগের উন্নয়ন এবং সেইসঙ্গে বিচারক নিয়োগ থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রে আধুনিকায়নের নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। হাইকোর্টে অ্যানেক্স ভবন নির্মাণ ছাড়াও জেলা পর্যায়ে আদালতগুলোকে নতুনভাবে গড়ে তোলা এবং আইনগত সহায়তার সুযোগ বৃদ্ধিসহ বহু কাজ আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি বলেন, এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো কাজ হচ্ছে আইনগত সহায়তা প্রদানের সিদ্ধান্ত এবং সেটাকে আইনে পরিণত এবং বাস্তবায়ন করা। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে লিগ্যাল এইড কল সেন্টার জাতীয় হেল্পলাইনের উদ্বোধন করেন। এ  হেল্পলাইনে (১৬৪৩০) ফোন করে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদানকারী সংস্থার মাধ্যমে বিনামূল্যে আইনি সহায়তা পাবেন দেশের স্বল্প আয়ের ও অসহায় বিচারপ্রার্থী নাগরিকরা।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু সালেহ শেখ মোহাম্মদ জহিরুল হক। লিগ্যাল এইড সার্ভিসেসের পরিচালক মালিক আবদুল্লাহ আল আমিন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে লিগ্যাল এইড সার্ভিসের সুবিধাপ্রাপ্ত দুজন ভুক্তভোগী নরসিংদীর শিউলী আক্তার এবং গার্মেন্টস কর্মী রঞ্জিত কুমার রায় নন্দী তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী সুইচ টিপে এবং কল সেন্টারের হেল্প লাইনে ফোন করে একজন ভুক্তভোগী হিসেবে আইনগত সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রগুলো অবগত হবার মাধ্যমে এই আইনগত সুবিধা প্রদানের হেল্প লাইনটির উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা স্বাধীন জাতি। বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। স্বাধীন  দেশে তিনি একটি সংবিধান দিয়ে গেছেন। যেখানে মানুষের সব মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। আমরা বঙ্গবন্ধুর সেই সংবিধানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলছি।
তিনি অন্ন-বস্ত্র-স্বাস্থ্য-শিক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে সরকারের নানা উন্নয়নমুখী পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে বলেন, দেশের মাথাপিছু আয় ১৪শ’ ৬৬ ডলারে উন্নীত হয়েছে। আগামী বাজেটে এ বিষয়ে আরো সুখবর আসতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে জাতিকে একটি অনন্য সাধারণ সংবিধান উপহার দিয়ে গেছেন। গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সাম্য ও ন্যায়বিচারের এক অনন্য দলিল আমাদের সংবিধান। এই সংবিধানে সুবিচার ও সাম্যের বাণীকে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি সকল নাগরিকের মৌলিক অধিকারের রক্ষাকবচ হিসেবে এতে যথাযথ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, অবকাঠামোসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ।  তিনি বলেন, আর্থিকভাবে অসচ্ছল, অসহায়, সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থ-সামাজিক কারণে বিচার পেতে অসমর্থ বিচারপ্রার্থী মানুষকে আইনগত সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে আমরা আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০ প্রণয়ন করি। কিন্তু, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০ কে বাস্তবে অকার্যকর করে রাখে। ২০০৯ সালে পুনরায় দায়িত্ব গ্রহণের পর আমরা এই আইনকে গতিশীল করি। এ সংক্রান্ত আরও আইন ও বিধি প্রণয়ন করা হয়েছে। ফলে দুস্থ, অসহায় ও দরিদ্র বিচারপ্রার্থী জনগণ আইনের সুফল ভোগ করছেন।  প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ পর্যন্ত মোট ১ লাখ ১৮ হাজার ১৮৮ জন গরিব ও অসচ্ছল ব্যক্তিকে আইনগত সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় আমরা দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ। এজন্য ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা’ প্রতিষ্ঠা ছাড়াও জাতীয় মানবাধিকার কমিশন প্রতিষ্ঠা করেছি। এ দুটি প্রতিষ্ঠানই আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সমাজে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *