নভেম্বরের মধ্যে বিচার শেষ করাই লক্ষ্য

Slider জাতীয়

 

 

nganj1-copy_70341_208498

 

 

 

 

 

 

নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সাত খুনের মামলার বিচার দ্রুত শেষ করতে সাক্ষী কাটছাঁট করা হচ্ছে। আগামী নভেম্বরের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ বিচার সম্পন্ন করতে চায়। রাষ্ট্রপক্ষ মনে করছে- ঘটনার আদ্যোপান্ত তুলে আনতে ৯০ থেকে ১০০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ যথেষ্ট। আলোচিত এই মামলায় মোট সাক্ষী ১২৭ জন। তাই কিছু সাক্ষী কাটছাঁট করলেও সমস্যা হবে না। এর আগে পিলখানা হত্যা মামলার বিচার দ্রুত শেষ করতেও সাক্ষী কাটছাঁট করা হয়েছিল। মামলায় গতি আনতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এরই মধ্যে ২৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে। আদালতের বিচারক সৈয়দ এনায়েত হোসেন মামলার প্রতি ধার্য তারিখে অন্তত ১০ জনকে আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য হাজির করতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে নির্দেশ দিয়েছেন।

এদিকে অনেক সাক্ষীকে ভয়ভীতি ও মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া এ মামলার রাষ্ট্রপক্ষের কেঁৗসুলির বিরুদ্ধে অনাস্থা জানিয়ে এরই মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি। সাত খুনের মামলায় সর্বশেষ গতকাল সোমবার নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের ভাইসহ ৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা হয়। আগামী ২ মে মামলার পরবর্তী দিন ধার্য রয়েছে।

প্রথম থেকেই এ মামলার বিচার দীর্ঘায়িত করতে নানা কৌশল নেয় আসামিপক্ষ। মামলার স্থগিতাদেশ চেয়ে উচ্চ আদালতে একাধিক পিটিশন করা হয়। অসুস্থ থাকার ‘নাটক’ সাজিয়ে র‌্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল (বরখাস্ত) তারেক মোহাম্মদ সাঈদ বিচার বিলম্বের চেষ্টা করেন। তার কারণে সাক্ষ্য গ্রহণের শুনানি পেছাতেও হয়েছিল। তবে এখন দ্রুততার সঙ্গে এগোচ্ছে বিচার কার্যক্রম।

রাষ্ট্রপক্ষের কেঁৗসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন  বলেন, কিছু সাক্ষী কাটছাঁট হচ্ছে। আশা করছি আগামী নভেম্বরের মধ্যে বিচার সম্পন্ন হবে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু বলেন, সাত খুনের মামলায় অনেক প্রভাবশালী আসামি রয়েছেন। একজন মন্ত্রীর মেয়ের জামাই আছেন। একাধিক আসামি র‌্যাবের সাবেক কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগ নেতা। অনেকের আশঙ্কা ছিল- এ মামলার বিচার হবে না। তবে এরই মধ্যে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে।

নিহত কাউন্সিলর নজরুলের ইসলামের স্ত্রী ও মামলার অন্যতম বাদী সেলিনা ইসলাম বিউটি  বলেন, দ্রুত যাতে ন্যায়বিচার পাই- এই প্রত্যাশা করছি। তবে বারবার ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে নূর হোসেনের লোকজন। সর্বশেষ গতকাল আদালতের বাইরে তার ভাইকে হুমকি দেওয়া হয়েছে।

মামলার অন্য বাদী নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা ডা. বিজয় কুমার পাল বলেন, মামলার বর্তমান অবস্থা নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। বিচার শেষে দৃষ্টান্তমূলক সাজা প্রত্যাশা করছি।

বাদীপক্ষের আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন সমকালকে বলেন, অনেক সাক্ষীকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছে। অনেককে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। মামলার বাদী সেলিনা ইসলামের বাবার নামে এরই মধ্যে ৩-৪টি মিথ্যা মামলা দিয়েছে আসামিপক্ষের লোকজন। এমনকি রাষ্ট্রপক্ষের কেঁৗসুলি আসামিদের বাঁচাতে সাক্ষীদের সঠিক দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন না।

বিচার বিলম্বিত করতে নানা অজুহাত:  গত বছরের ৮ এপ্রিল ৩৫ জনকে আসামি করে সাত খুন মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালতে অভিযোগ গঠন করা হয়। অভিযোগ গঠনের বিরোধিতা করে এবং মামলা বাতিল চেয়ে নূর হোসেন ও তারেক সাঈদের পক্ষে উচ্চ আদালতে পিটিশন করা হয়। উচ্চ আদালত থেকে সেগুলো খারিজ হওয়ার পর গত ২৯ ফেব্রুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচারকাজ শুরু হয়। এ ছাড়া সাক্ষীদের নানা ভয়ভীতি দেখিয়েও মামলা বিলম্বিত করার চেষ্টা হয়েছিল। এখন পর্যন্ত সাক্ষীদের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণকারী দু’জন ম্যাজিস্ট্রেট, লাশের সুরতহাল প্রতিবেদনকারী পুলিশ কর্মকর্তা, দুই বাদীসহ ২৯ জনের সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে।

এখনও পলাতক ১২ আসামি:  সাত খুনের মামলায় ৩৫ আসামির মধ্যে ১২ জন পলাতক। তাদের মধ্যে মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের চার সহযোগী রয়েছেন। বাকিরা র‌্যাব-১১-এর সাবেক সদস্য। নূর হোসেনের পলাতক সহযোগীরা হলেন- সেলিম, সানাউল্লাহ সানা, শাহজাহান এবং জামাল উদ্দিন। পলাতক র‌্যাব সদস্যরা হলেন- করপোরাল মোখলেছুর রহমান, সৈনিক আবদুল আলীম, মহিউদ্দিন মুন্সী, আল আমীন শরীফ, তাজুল ইসলাম, সার্জেন্ট এনামুল কবীর, এএসআই কামাল হোসেন এবং কনস্টেবল হাবিবুর রহমান।

এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ ডিবি পুলিশের ওসি মামুনুর রশীদ মণ্ডল বলেন, পলাতক আসামিদের ব্যাপারে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। তারা কোথায় আছে তা-ও জানা নেই। তবে নূর হোসেনের সহযোগী সেলিম ভারতে নূর হোসেনের সঙ্গে ধরা পড়েছিলেন। সেলিম এখনও ভারতের কারাগারে। একটি সূত্র জানায়, নূর হোসেনের বাকি তিন সহযোগী এবং র‌্যাবের আট সদস্যও দেশের বাইরে পালিয়ে আছেন।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল দুপুরে আদালত থেকে ফেরার পথে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম লিটন ও গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম এবং আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহীম ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোড থেকে অপহৃত হন। অপহরণের তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা থেকে ছয়জনের ও পরদিন আরও একজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সাত খুনের ঘটনায় দুটি পৃথক মামলা দায়ের হয়েছে। দুটি মামলাতেই অভিন্ন অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *