অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকীর হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে তৃতীয় দিনেও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও আন্দোলন করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল থেকেই মানববন্ধন, শোক মিছিল, অবস্থান ধর্মঘট ও সমাবেশে উত্তাল ছিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। শিক্ষক সমিতি পুলিশ প্রশাসনকে সাত দিনের আলটিমেটাম দিয়ে আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করে। মঙ্গলবার থেকে ইংরেজি ছাড়া সব বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা চালু করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট অবশ্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ ছাত্র ধর্মঘট আহ্বান করেছে।
এ হত্যা মামলায় পুলিশের তদন্ত মনিটরিং কমিটির এক সদস্য জানান, রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যার কারণ অন্যকিছু নয়। তিনি সংস্কৃতিমনা মানুষ বলেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। যারা তার কার্যকলাপ পছন্দ করত না, সারাদেশে যারা এর বিরোধিতা করছে, তারাই এর সঙ্গে জড়িত। সূত্রটির মতে, এক সময় যারা জামায়াত-শিবির করত, তারাই এখন জেএমবি, আনসারুল্লাহ বা আইএস নামে তৎপরতা চালাচ্ছে। বাংলা ভাইও একসময় জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। তাই এ ঘটনাও সেই জঙ্গিগোষ্ঠীর দ্বারাই সংঘটিত হয়েছে।
সূত্রটি আরও জানায়, ব্যক্তিগত কোনো বিষয় নয়, অধ্যাপক রেজাউল করিম বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃতিচর্চা করতেন। গ্রামেও ছিল তার সঙ্গীতচর্চা কেন্দ্র। এগুলো যারা মেনে নিতে পারেনি, তারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারে।
নগর পুলিশের উপকমিশনার এ কে এম নাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এ হত্যা ঘটনায় রোববার গভীর রাতে পুলিশ শহরসংলগ্ন এলাকা থেকে জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এক ব্যক্তিকে আটক করেছে।’ তিনি দাবি করেন, এ হত্যা ঘটনায় আটক ওই ব্যক্তি এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আটকের সময় ওই ব্যক্তির কাছে জামায়াতের বেশ কিছু প্রকাশনাও পাওয়া গেছে। তিনি জানান, আটক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাকে নিয়ে কিছু এলাকায় অভিযান চালানো হবে। তদন্তের স্বার্থে আটক ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ করা যাচ্ছে না।
এদিকে নগরীর শালবাগান এলাকায় রাবি অধ্যাপককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় এখনও কোনো প্রত্যক্ষদর্শী খুঁজে পায়নি পুলিশ। দিনের বেলা প্রকাশ্যে এ হত্যা ঘটলেও প্রত্যক্ষদর্শী না থাকাটা অকল্পনীয় বলে মনে করছেন অনেকেই। তা ছাড়া শালবাগান মোড়ের সিসিটিভির ফুটেজ দেখে পুলিশ খুনিদের ব্যাপারে এখনও কোনো ধারণা পায়নি।
নগর পুলিশের কমিশনার মো. শামসুদ্দিন বলেন, ‘হত্যার পর হেলমেট পরা এক মোটরসাইকেল চালক আরোহীসহ গলি থেকে দ্রুত বেরিয়ে গেছে বলে তথ্য পেয়েছি। কোনো প্রত্যক্ষদর্শী মুখ খুলছেন না। তবে একজনের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ তিনি জানান, শালবাগান মোড়ে সিসিটিভির ফুটেজে কারও মুখের ছবি স্পষ্ট আসেনি। তিনি আরও জানান, এর আগে আটক শিবির নেতা রাবির ছাত্র হাফিজুর রহমান অধ্যাপক রেজাউল করিম হত্যার সময় শালবাগান মোড়ে ছিল। জিজ্ঞাসাবাদে সে পুলিশকে জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে ক্লাসে যাওয়ার জন্য সে শালবাগানে অবস্থান করছিল। গলির মধ্যে চিৎকার শুনে সেও সেখানে যায়। গিয়ে দেখে, অধ্যাপক রেজাউল করিম মাটিতে পড়ে আছেন। পরে ঝামেলা এড়াতে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যায়। তবে পুলিশ তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করবে বলে নগর পুলিশের কমিশনার জানান।
গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে আয়োজিত শোক সভায় নিহত অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকীর স্ত্রী হোসনে আরা শিরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিচার চেয়ে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি শক্তিশালী প্রধানমন্ত্রী হলে সিদ্দিকীর খুনিদের আমার সামনে হাজির করুন। মরার আগে যেন বিচারটা দেখে যেতে পারি।’ রেজাউল করিমের মেয়ে রেজওয়ানা হাসিন শতভী কান্নাজড়িত কণ্ঠে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা প্লিজ বিচারের দাবিতে সোচ্চার থাকবেন।’
গত শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে নিজ বাড়ির সামনে গলা কেটে হত্যা করা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকী মুকুলকে। এ ঘটনার তিন দিন পেরোলেও পুলিশ এখনও খুনিদের চিহ্নিত করতে পারেনি।